দূর পাহাড়ে রূপসী নৃত্য করে!

মোহাম্মদ শরীফ।।
সোমবার সকাল ৭টা। আমার ঘুম ভেঙেছে মোল্লা ভাইয়ের দরজায় কড়া নাড়ায়। এই দিকে মোল্লা ভাই থেকে জানতে পারলাম নগরীর টাউন হলে আমাদের অপেক্ষায় তৈয়বুর রহমান সোহেল ভাই।গন্তব্য মিরসরাইয়ের বড় দারোগা হাট। উদ্দেশ্য ঝর্ণার সাথে মোলাকাত।
সাধারণত ভ্রমণ পিপাসুরা যে সকল ঝর্ণা গুলোতে ঘুরতে যান, এটি তার থেকে ব্যতিক্রম। এখানে খুব বেশি কোলাহল নেই। বাংলাদেশ প্রতিদিন কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি মহিউদ্দিন মোল্লা ভাই, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের তৈয়বুর রহমান সোহেল ভাইসহ আমরা কুমিল্লা থেকে যাত্রা শুরু করলাম।

ইতিমধ্যে চাঁদপুর থেকে আমাদের সাথে যুক্ত হতে ট্রেনে উঠে পড়েছনে সাংবাদিক মনোয়ার কানন ও মোহাম্মদ মাসুদ আলম ভাই। পদুয়ায় বাজার বিশ্বরোড হতে সকাল ৮টায় আমাদের যাত্রা শুরু রূপসী ঝর্ণার উদ্দেশ্যে। দুই ঘন্টা বাস যাত্রা শেষে আমরা ফেনীর মহিপালে যাত্রা বিরতিতে গেলাম। সেখানকার সুজন রেস্তোরাঁয় ডাবল ডিম, সবজি ডাল, পরোটা শেষে রঙ চায়ে বেশ সতেজতা খুঁজে পেলাম। মিরসরাইয়ের বড় দারোগা হাটের উদ্দেশ্যে আবারও বাস যাত্রা শুরু। মহিপাল থেকে উঠা এই বাসে ঘটে যায় একটি দুঃখজনক ঘটনা। আমার ওয়ারলেস মাইক্রোফোন সেট ও স্ট্যান্ডটা বাসে হারিয়ে ফেলি। বাস থেকে নেমে দেশি কলা ও পানি নিয়ে নিই। এর মধ্যেই আমাদের সাথে যুক্ত হোন মনোয়ার কানন ও মোহাম্মদ মাসুদ আলম ভাই।


সেখান থেকে পাহাড়ী গ্রাম কমলদহের উদ্দেশ্যে সিএনজি অটোরিকশায় উঠি। আমারা নেমে পড়লাম কমলদহ রেল লাইনের নিকট। সেখান থেকে সংগ্রহ করতে হলো ২০ টাকা জনপ্রতি প্রবেশ টিকেট। আমরা হাঁটতে থাকলাম পূর্ব দিক ধরে। যতই হাঁটছি ততই যেন কাছে আসছে মেঘ ছোয়া পাহাড়। পাহাড়ের স্পর্শে এসে আমাদের বরণ করে অরণ্যে ঘেরা সরু আঁকাবাঁকা রাস্তা। কিছুক্ষণ হাঁটতেই দেখা মিললো স্বচ্ছ ঝরণার পানি বয়ে চলা। তার মাঝে পা ভিজিয়ে কোমলতার অনুভূতি ফিরে পেলাম। ছোট ছোট পাথর স্বচ্ছ পানিতে আলপনা এঁকে বসেছে। এই পানির পথ ধরে ২০ মিনিট হাঁটার পর কানে ভেসে আসে রূপসী ঝর্ণার গানের সুর। যেন আমাদের স্বাগত জানাতে তার যত আকুতি।
রুপসীর প্রথম ধাপটা অনেকটা খাড়া। বর্ষায় পুরো ঝর্ণা বেয়ে পানি পড়ে, ভেতরের রুপটা আরো বেশি সুন্দর। রূপসীর প্রথম ধাপ বেয়ে উপরে উঠলে খোলা একটা জায়গা, তারপর একটা বড় পাথর। এই পাথরের মাঝ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে। দশ ফুটের খাড়া পাথরটি বেয়ে উঠতে পারলেই এবার অন্যরকম এক সৌন্দর্য। বিশাল ছড়া, তবে বেশ আঁকাবাঁকা, ঠিক যেন বয়ে চলা কোন নদী। ঝর্ণার পাশে কয়েকজন কিশোর আধা ডজন তরুণীর ভিড় দেখা গেছে। ঝর্ণার রুপ দেখা যেন শেষ হয়না। সেখানে তরুণীদের রুপ দেখার সময় কোথায়!

ছড়া দিয়ে হাঁটার সময় চোখে পড়বে হরেক রকম পাহাড়ি বৃক্ষ, ফুল, ফল, লতা গুল্ম। দুপাশে সবুজ আর সবুজ, আর ছড়ার বুক চিরে হাঁটতে হাঁটতে মনে হবে যেন কোন গুহার মধ্য দিয়ে হেঁটে হেঁটে রহস্যভেদ করা হচ্ছে।
ছড়ার গহীনে অরণ্যের কিছু রোমাঞ্চ নিতে রুপসীর চূড়ার পথ ধরে কিছুটা হেঁটেছি আমরা। অন্যান্য ঝর্ণার চেয়ে এখানে উপভোগ বেশি করা যায়। কারণ ঝর্ণার চূড়া পর্যন্ত উঠতে এখানে সর্তকতার নির্দেশনা থাকলেও, নিষেধাজ্ঞা নেই। ঝর্ণার স্পর্শে আসলে গোসলের নেশা ধরে যায়। মনোয়ার কানন ভাইয়ের গামছা ধার নিয়ে ঝর্ণার জলে কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে যাওয়ার অনুভূতি খোঁজে পেলাম।
ঝর্ণার দেখার প্রশান্তি নিয়ে আমরা কুমিল্লার উদ্দেশ্যে চলতে হলো। মাঝ পথ ফেনীতে এক সাথের খাবার শেষে বিদায় জানাই মনোয়ার কানন ও মোহাম্মদ মাসুদ আলম ভাইকে। কিন্তু বিদায় নেয়না ঝর্ণার মুগ্ধতা। কানে বাজে তার কলকল ধ্বনি।