নগরীর গৃহকোণে গৃহকর্মীর আর্তনাদ

 

বছর চারেক আগে নিজের নাতির সাথে খেলাধুলা করার কথা বলে বিলকিস আক্তারের কাছ থেকে সুমাইয়াকে নিয়ে আসেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবু তাহেরের স্ত্রী তাহমিনা তুহিন। এরপর সুমাইয়াকে দিয়ে ঘরের সব কাজ করাতে থাকেন তাহমিনা ও তার মেয়ে ফাহমিদা তাহের তিমু। কখনো ঢাকায় নিয়ে কাজ করাতেন। কখনো কুমিল্লায় রেখে। এসময়গুলো চলতো নির্যাতন। আশেপাশে কেউ না থাকায় মুখ বুজে অত্যাচার সহ্য করতো শিশু সুমাইয়া। তার হাত পায়ে নতুন পুরাতন দগদগে ঘা। যন্ত্রণার কারণে ঘুমাতে গেলে এপাশ ওপাশ করতে পারে না। পুরনো দাগ ভালো হওয়ার আগেই খুন্তির ছ্যাকায় নতুন ঘা তৈরি হয় শিশু সুমাইয়ার কোমল শরীরে।
সুমাইয়া আক্তার কুমিল্লা দেবিদ্বার উপজেলার তেবাড়িয়া গ্রামের বিলকিস আক্তারের ছোট মেয়ে।

ফাহমিদা তাহের তিমু ঢাকার বাসায় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন করেন। সুমাইয়ার সারা শরীরে খুন্তির দগদগে দাগ। গত তিন দিন ধরে সুমাইয়াকে খেতে দেয়া হয়নি। খিদার চোটে ঘরে থাকা একটু দুধ পান করে সুমাইয়া। এই অপরাধে ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবু তাহেরের স্ত্রী তাহমিনা তুহিন জালি বেত দিয়ে বেদম প্রহার করেন। পরে তাহমিনা তুহিনের মেয়ে ফাহমিদা তাহের তিমু ওভেনে পানি গরম করে সুমাইয়ার পায়ে ঢেলে দেয়। এতে সুমাইয়ার উরু ঝলসে যায়। জীবন বাঁচাতে সুমাইয়া দু’তলা থেকে লাফ দিয়ে ছাত্রীদের ম্যাচে গিয়ে জীবন ভিক্ষা চায়। পরে ওই ছাত্রীরা তাদের ছেলে বন্ধুদের সহয়তায় সুমাইয়াকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে নিয়ে চিকিৎসা দেয়।
গৃহকর্মী সুমাইয়াকে নির্মম নির্যাতনের এমন লোমহর্ষক বর্ণনা দেন তার মামা ইব্রাহিম খলিল। মামা ইব্রাহিম খলিল বলেন, মঙ্গলবার রাতে তারা আমাকে ফোন দিয়ে বলে সুমাইয়া গরম পানিতে পড়ে গিয়ে পা পুড়ে গেছে। এ খবর পেয়ে আমি কুমিল্লা কোতয়ালী থানায় আসি। দেখি আমার ভাগ্নিকে নিমর্মভাবে নির্যাতন করেছে তারা।

ইব্রাহিম খলিল আরো বলেন, আমার বোন বিলকিস আক্তারের ৪ সন্তান। সুমাইয়া সবার ছোট। বিলকিসের প্রথম স্বামী তাকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। পরে বিলকিস আবার বিয়ে করে। বিলকিস বর্তমানে ওই স্বামীর সংসারে আছে। অভাব অনটনের সংসার বলেই সুমাইয়া যেন একটু ভালো থাকে তাই অধ্যক্ষ আবু তাহেরের বাসায় দিয়ে দেয়। এনিয়ে গত সপ্তাহে সাপ্তাহিক আমোদসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।
সংবাদে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ধর্মপুর ভিক্টোরিয়া কলেজ সংলগ্ন পূর্ব দৌলতপুর এলাকার এস আর টি প্যালেস বাসার পাশে থাকি। ওই বাসায় প্রায়ই গৃহকর্মী নির্যাতন করে। করোনার সময় উনার বাসায় থাকা দুই ছাত্রীকে ম্যাচ ভাড়া দিতে না পারায় তিনি গভীর রাতে দু’জন মেয়েকে বের করে দেন।
কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহমেদ সনজুর মোর্শেদ জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের শেষে আসামি তাহমিনা তুহিনকে আদালতে প্রেরণ করা হয়।
উল্লেখ্য, গৃহপরিচারিকা সুমাইয়া আক্তারকে(১২) মারধর করে গায়ে গরম পানি দিয়ে ঝলসে দিয়েছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবু তাহেরের স্ত্রী তাহমিনা তুহিন। মেয়েটি দোতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মরক্ষা করেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ৭ টায় কুমিল্লা নগরীর ধর্মপুর ভিক্টোরিয়া কলেজ সংলগ্ন পূর্ব দৌলতপুর এলাকার এস আর টি প্যালেস বাসায় এই ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা ৯৯৯ এ কল করলে পুলিশ দগ্ধ ওই গৃহপরিচারিকাকে উদ্ধার করে। তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে যায়।

 

এই ঘটনাটি আলোতে এসেছে। এরকম শত ঘটনা নিরবে চাপা পড়ে যাচ্ছে। নিভৃতে কাঁদছে গৃহকর্মীরা। এই বিষয়ে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। ইসলামসহ বিভিন্ন ধর্মে গৃহকর্মীকে সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, যে গৃহে গৃহকর্মীকে কষ্ট দেযা হয় সেখানে আল্লাহর অভিশাপ নেমে আসবে। এবিষয়ে প্রশাসনে আরো কঠোর হতে হবে। তাহলে গৃহকর্মী নির্যাতন কমে আসবে।