নবীজির জীবন আদর্শে মধ্যপন্থা

 

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির।।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, – তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ ( সুরা আহযাব)। মহান আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজীদে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতদের কে উম্মাতান ওয়াসাতান বলে অভিহিত করেছেন।মহান আল্লাহ ইরশাদ করেনঃ আমি তোমাদেরকে এক মধ্যপন্থী উম্মতরুপে প্রতিষ্ঠিত করছি( সুরা বাকারাঃ আয়াত ১৪৩)। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মোবারক জীবনের নানা পর্যায়ের আমরা মধ্যপন্থা অবলম্বন করার নজীর দেকতে পাই। তিনি সাধারন মানুষের ন্যায় সাদাসিধা অথচ সুন্দর পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করতেন।তিনি বলেছেন,মধ্যপন্থা অবলম্বন করাই উত্তম। মিশকাত শরীফে বিধৃত হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত একখানা হাদিস থেকে জানা যায় যে, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ’ কাজ- কর্মের উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে শালীন আচার আচরণ এবং মধ্যপন্থা অবলম্বন। ‘

টাকা- পয়সা,ধন- সম্পদ ব্যয় করার ক্ষেত্রেও তিনি মধ্যপন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। কোরআন মাজীদে মুমিনদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে যে, যখন তারা ব্যয় করে তখন তারা অপব্যয় করে না আবার কার্পণ্যও করে না। বরং তারা থাকে এই দু’য়ের মধ্যখানে মধ্যম পন্থায়। ( সুরা ফোরকানঃ আয়াত ৬৭)। সর্বক্ষেত্রেই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মধ্যপন্থাঅবলম্বনের শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি খাবার – দাবারের ক্ষেত্রে অতিভোজন পরিহার করতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, তোমরা দু’ জনের খাবার তিনজনে খাবে। অন্য এক বর্ণনায় আছেঃ পানাহার এমন করে করবে যাতে পাকস্থলীর একভাগ খাদ্য দ্বারা পূর্ণ হয়, আর একভাগ পানি দ্বারা আর এক ভাগ বাতাস দ্বারা।

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অপচয় বা অপব্যয় করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘ অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। ‘ দয়াল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কয়েকজন সাহাবী চরম কৃচ্ছ্রতার জীবন নির্বাহ করার ইচ্ছা গ্রহণ করেন এবং দুনিয়াবী আনন্দ- ফুর্তি থেকে নিজেদেরকে বঞ্ছিত করার সিদ্ধান্ত নেন। তাদের এই সিদ্ধান্তের কথা জেনে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে তা করতে নিষেধ করেন। তিনি তাদেরকে বলেনঃকখনো রোজা রাখো আবার কখনো খাও। রাতের বেলা ইবাদত করো আবার নিদ্রাও যাও। কারণ শরীরে ও একটাহক আছে। না ঘুমালে শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে। দয়াল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বাবস্থায় ধৈর্য ধারণ করার শিক্ষা দিয়েছেন। কোরআন শরীফে ইরশাদ হচ্ছেঃহে ঈমানদারগণ, তোমরা ধৈর্য সহকারে সালাতের মাধ্যমে চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। ( সুরা বাকারাঃ আয়াত ১৫৩)।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উম্মতদেরকে আল্লাহতায়ালা সর্বোত্তম উম্মত বলে অভিহিত করেছেন। এবং তাদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ইরশাদ করেছেনঃ তারা সৎ কার্যের নির্দেশ দেয় এবং অসৎকার্য নিষেধ করে ( সুরা তওবা,আয়াত ৭১)। আরো ইরশাদ হয়েছেঃআল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়- স্বজনকে দান করার নির্দেশ দেন এবং তিনি নিষেধ করেনঃঅশ্লীলতা, অসৎকার্য এবং সীমালঙ্ঘন। ( সুরা নহলঃআয়াত ৯০)।

কোরআনে পাকে এমন অনেক আয়াত রয়েছে যেগুলোর দ্বারা মুমিনদেরকে সহৃদয়তার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ সম্বলিত। ইরশাদ হয়েছেঃতোমরা সৎ কাজ কর। আল্লাহ সৎ কর্মশীলদের ভালোবাসেন ( সুরা বাকারাঃ আয়াত১৯৫)। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত একখানা হাদীস শরীফে এসেছে যে, দয়াল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ দুঃখীজনকে সাহায্য কর এবং পথহারাদের পথ দেখাও। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ থেকে বর্ণিত হাদীস থেকে জানা যায় যে, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আমি কি তোমাদের কে একথা বলে দেব না যে, কাকে দোজখের আগুন থেকে দূরে রাখা হবে অথবা কার নিকট থেকে দোজখের আগুনকে দূরে রাখা হবে? তারপর তিনি বললেনঃযারা নম্র- ভদ্র, আচার- আচরনে সদয়, মেজাজ শান্ত, তাদের প্রত্যেকেই জাহান্নামের আগুন থেকে দূরে থাকবে।

মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেনঃ’ লা ইকরাহা ফিদ্ দ্বীন- ধর্মের কোন জোর জবরদস্তি নেই। বিদায় হজ্বের ভাষণে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃতোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি কর না। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কারণে তোমাদের পূর্ববর্তী অনেক জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে।

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের জন্য যে শিক্ষা দিয়ে গেছেন বা রেখে গেছেন তাঁর প্রত্যেকটিকে যদি আমরা গ্রহণ করি এবং তাঁর আদর্শকে অনুসরণ- অনুকরণ করি তাহলে আমাদের ইহকালীন শান্তি এবং সমৃদ্ধি যেমন আসবে তেমনি পরকালীন অনন্ত শান্তি লাভেও আমরা ধন্য হতে পারি-ইনশাআল্লাহ।

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির, ধর্মীয় লেখক, সংগঠক ও চেয়ারম্যান- গাউছিয়া ইসলামিক মিশন, কুমিল্লা। 01718-228446