পার্কের দেয়ালের ইট খসে পড়ছে-রাইড উধাও


দুই দশক ধরে বন্ধ দেবিদ্বার শিশু পার্ক

inside post

বাহার উদ্দিন খান।।
শিশুর স্বাভাবিক মনন বিকাশে যান্ত্রিক শহর কিংবা উপশহরে একটি শিশু উদ্যান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই উদ্দেশ্যেই ২০০৪ সালে প্রায় ৪০ শতক জায়গার উপর দেবিদ্বারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল উপজেলার একমাত্র শিশু বিনোদন কেন্দ্র মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী শিশু পার্ক। কিন্তু ক্ষমতার পালাবদলের রাজনীতি, কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও চরম অব্যবস্থাপনার কারণে প্রায় দুই দশক ধরে পার্কটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। পার্কের দেয়ালের ইট খসে পড়ছে। এদিকে রাইডগুলো উধাও হয়ে গেছে। পার্ক মানুষকে আনন্দ দেয়া দূরে থাক আজ তারই অস্তিত্ব বিপন্ন প্রায়। এতে একদিকে শিশুদের আনন্দের ব্যাঘাত ঘটছে, অন্যদিকে উপজেলাবাসীর মনে গভীর ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পার্কটির মালিকানা উপজেলা প্রশাসনের হলেও পৌরসভার ভিতরে হওয়ায় ড্রেনেজ সংস্কারসহ কিছু কাজ পৌরসভা করার কথা। ২০০৯ সালে রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে পার্কটির ব্যবস্থাপনার ধরনে পরিবর্তন আসে এবং তখন থেকেই পার্কটি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। মাঝে কয়েকবার সরকারিভাবে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও অজানা কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। ব্যক্তিগত উদ্যোগেও সংস্কারের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে আইনি জটিলতার কারণে।
এদিকে পৌরসভা প্রশাসন সূত্র জানায়, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৌরসভার ভিতরে সরকারি যেকোন অবকাঠামোর সংস্কার, লাইটিংসহ যাবতীয় কাজের চিঠি পেলে আইনি বাধ্যবাধকতার মধ্যে থেকে পৌরসভা প্রশাসন করে থাকে। সূত্র আরও জানায়, জলাবদ্ধতার সমস্যা নিরসনে “এনুয়াল ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান” এর অধীনে উপজেলার টেরিটরিতে উন্নতমানের ড্রেনেজ সিস্টেম চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে চলতি অর্থ বছরে। সেটা হলে পার্কে জলাবদ্ধতার সমস্যা দূর হবে।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পার্কটির একাংশের দেয়ালের ইট খসে পড়েছে। লোহার গ্রিল ভেঙে ঝুলে আছে অযতেœ। শিশুদের জন্য স্থাপিত রাইডগুলো উধাও। এছাড়া পার্কটি আশেপাশের জায়গা থেকে অনেক নীচু হয়ে গেছে। যার ফলে পার্কের ভিতরের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে আছে। যার ফলে কচুরিপানা ও ডোবায় পরিণত হয়েছে ভিতরের অংশ। একসময়ে কিছু প্রাণীর প্রতিকৃতি থাকলেও সেগুলোও ভেঙ্গে গেছে। এখনও পার্কের সামনে দিয়ে যেতে শিশুরা ভেতরে উঁকি মেরে মন খারাপ করে চলে যায়।
পৌরসভার বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান বলেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় যে অনেক বছর ধরে পার্কটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় আছে। শিশুদের বিনোদনের জন্য এটি সংস্কার করা অত্যন্ত জরুরি।
আরেকজন বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা আশা করেছিলাম দেশের এই পরিবর্তিত অনুকূল পরিবেশে কর্তৃপক্ষ পার্কটির সংস্কারে হাত দিবে। আশা করব যে কোনভাবে হোক এটি সংস্কার করা হোক।
পৌরসভার মেয়রের অবর্তমানে প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ রায়হানুল হক বলেন, যেহেতু পার্কের জায়গাটি উপজেলার অধীন তাই সংস্কারের বিষয়ে উপজেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে সহযোগিতা চাইলে সেই অনুযায়ী আমরা করে দিব। কিন্তু সেই ধরনের উদ্যোগের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।
উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আবুল হাসনাত খাঁন বলেন, যতটুকু জানতে পেরেছি ২০০৯ সালের পর এই পার্কের কোন ধরনের সংস্কার হয়নি। আমি এই বছরের শুরুতে দায়িত্ব নেওয়ার পর এই পার্কের সংস্কার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন কারণে পার্কের সংস্কার সম্ভব হয়ে উঠেনি। আপাতত সংস্কারের কোন পরিকল্পনা নেই বলেও জানান তিনি।

আরো পড়ুন