পাসপোর্টের ডিডির ভাই পরিচয়ে সেবাগ্রহীতাকে হুমকি!

আমোদ প্রতিনিধি।।
কুমিল্লায় পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক (ডিডি) নুরুল হুদার বিরুদ্ধে সেবাগ্রহীতাকে মারধর ও সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিক লাঞ্ছিত করার অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। আদালতের নির্দেশনায় পিবিআই কুমিল্লা সেবাগ্রহীতা থেকে একাধিকবার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। এরই জেরে ওই সেবাগ্রহীতাকে প্রথমে মোবাইল ফোনে ও পরে পাসপোর্টের ডিডির ছোট ভাই পরিচয়ে আরও চারজনসহ সেবাগ্রহীতার বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার এ ঘটনা ঘটে। ওই ভুক্তভোগীর নাম সাকিব।
সাকিব জানান, শনিবার ১৪ আগস্ট বিকেল বেলা একটি নম্বর থেকে তাকে ৮ থেকে ১০ বার কল করা হয়। কল রিসিভ করলে আমার এলাকার নাম এবং ইউনিয়নের নাম জানতে চাওয়া হয়। পরে আবারো ওই নম্বর থেকে কল করায় রিসিভ করিনি। আজ ১৫ আগস্ট বেলা ১১টায় একটি প্রাইভেটকারে করে পাঁচজন আমাদের বাড়িতে যান। এসময় আমি কাজে থাকার কারণে আমার মায়ের সাথে ওই পাঁচজন সিআইডি পরিচয়ে কথা বলেন।
সাকিব জানান, ওই লোকগুলো প্রথমে আমার বাড়িতে যান। আমাকে না পেয়ে আমার মায়ের সাথে কথা বলে যেখানে ইলেক্ট্রিকের কাজ করি সেখানে আসেন। আসার পর ওনারা আমাকে বলেন, পাসপোর্ট অফিসে কি হয়েছিল? তখন আমি আগের কথাগুলো হুবহু বলি। বলার পর উনারা আমাকে বলেন, এ বিষয়টা নিয়ে যেন আর কাউকে কোন কিছু না বলি। তাদের মধ্যে যেকোনো একজন আমাকে ফোন দিলে আমি যেন কুমিল্লা আদালতে গিয়ে একটি স্বাক্ষর দিয়ে চলে আসি। অন্যথায় আমাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি হতে হবে। এসময় একজন নিজেকে কুমিল্লা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের ডিডি নুরুল হুদার আপন ছোট ভাই পরিচয় দেন। তিনি বলেন, তোমাকে তো আর মারা হয়নি। মেরেছে অন্য একজনকে। তোমার গায়ে এসে পড়েছে। সাকিব বলেন, আমি আতঙ্কে আছি। বিভিন্ন লোকজন দ্বারা আমাকে ফোন দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে কুমিল্লা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের ডিডি নুরুল হুদার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
ঘটনার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা পিবিআই কুমিল্লার পরিদর্শক মাহফুজ আলম বলেন, ১২ আগস্ট আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। ১৪ আগস্ট তা আদালতে পৌঁছেছে বলে জানতে পেরেছি। সাক্ষীকে হুমকির বিষয়ে বলেন, হোমনা থানায় কথা বলেন।
হোমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, ভুক্তভোগী অভিযোগ দিলে হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য- গত ১৮ এপ্রিল কুমিল্লায় পাসপোর্ট অফিসে সাকিবসহ তিন সেবাগ্রহীতাকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে উপ-পরিচালক (ডিডি) নুরুল হুদার বিরুদ্ধে। এ ঘটনার বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহে গেলে সাংবাদিক মো. সাফি ও রাকিবুল রানাকে লাঞ্ছিত করা হয়। ভিডিও ধারণের সময় মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এমন একটি ভিডিও সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় ১৮ এপ্রিল বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হলে তা আদালতের নজরে আসে। ২৬ এপ্রিল কুমিল্লা ১ নম্বর আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্বাস উদ্দিন স্বপ্রণোদিত হয়ে র‌্যাবকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে তদন্তের ভার পড়ে পিবিআইয়ের ওপর। আদালতের নির্দেশনার পর ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সেবাগ্রহীতা সাকিবকে ২৬জুন ও ৯আগস্ট জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের পর থেকেই সাকিবকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হতে থাকে।