পুলিশকে গুলিবিদ্ধ করে ডাকাত পিতাকে ছিনিয়ে নিলো সন্ত্রাসী পুত্র

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতিসহ নানান অপরাধের সোয়া ডজন মামলার আসামী পিতাকে গ্রেপ্তার করার খবর পেয়ে মাদক কারবারী সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হলেন সন্ত্রাসী পুত্র শিপন। দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে গুলিবিদ্ধ করে বহুমাত্রিক অপরাধী পিতা মন্নাফ ওরফে মনেককে ছিনিয়ে নিতেও সক্ষম হয় শিপন গংরা। এক পুলিশের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এই ঘটনায় চারজনের নামোল্লেখসহ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে হয়েছে পুলিশ এ্যাসল্ট মামলা। জড়িতদের পাকড়াওয়ে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা এলাকার।
জেলার নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের নূরজাহানপুর গ্রামে বৃহস্পতিবার (০৮ সেপ্টেম্বর) দিবাগত গভীররাতে হামলাকারীদের গুলিতে আহত নবীনগর থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মোহাম্মদ সোহেল ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) রনি সোরে রানাকে উপজেলা হাসপাতালে নেবার পর উন্নত চিকিৎসার্থে এসআই রনিকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এই ঘটনায় শুক্রবার সকালে চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৩/৪ জনকে আসামী করে পুলিশ এ্যাসল্ট মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের নূরজাহানপুর গ্রামের মৃত সুধন মিয়ার ছেলে মাদক কারাবারি মন্নাফ (৫০) ওরফে মনেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতি, চুরিসহ ১৫টি মামলার বিদ্যমান। পুলিশ গত ১৯ এপ্রিল মাদক ও দেশীয় অস্ত্রসহ তাকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায়। সম্প্রতি জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারও মাদক বেচাকেনা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। তার ছেলে শিপন ডাকাতি ও মাদক মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভূক্ত আসামী। দাগী অপরাধী পিতা-পুত্র এলাকায় অবস্থান করছে, এমন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার গভীররাতে নূরজাহানপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে মনেককে আটক করে পুলিশ। পিতাকে আটকের খবর পেয়ে সন্ত্রাসী পুত্র শিপন তার মাদক কারবারী সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে দুই দিক থেকে পুলিশের ওপর আচমকা গুলি চালাতে শুরু করে। পুলিশও আত্মরক্ষায় পাল্টা গুলি চালায়। আটককৃত মনেককে ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। তাদের গুলিতে নবীনগর থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মোহাম্মদ সোহেল এবং এসআই রনি সোরে রানা গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয় জনতার সহায়তায় তাদেরকে উদ্ধার করে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে মাথায় গুলিবিদ্ধ এসআই রনিকে উন্নত চিকিৎসার্থে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। শুক্রবার সকালে এই ঘটনায় চারজনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ৩/৪ জনের বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এ্যাসল্ট মামলা দায়ের করা হয়।
নবীনগর থানার পরিদর্শক (ওসি) সাইফুদ্দিন আনোয়ার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ‘আটককৃত মনেককে ছাড়িয়ে নিতে তার ছেলে শিপন ও তার সহযোগীরা পুলিশের ওপর গুলি ছুড়ে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ পাল্টা গুলি ছুড়লেও সন্ত্রাসী মহলটি দুই পুলিশকে গুলিবিদ্ধ করে মনেককে নিয়ে পালিয়ে যায়। আহতদের মধ্যে মাথায় গুলিবিদ্ধ এসআই রনিকে উন্নত চিকিৎসায় কুমিল্লা পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় দায়ের করা হয়েছে একটি পুলিশ এ্যাসল্ট মামলা।’ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন জানান, ‘মাদক কারাবারি ও ডাকাত মন্নাক ওরফে মনেক এবং তার ছেলে শিপনসহ তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।’