প্রতিভাবান আইনজীবী ও রাজনীতিক মফিজুল ইসলাম

।। মোতাহার হোসেন মাহবুব।।

শিক্ষাবিদ ও আইনজীবী মফিজুল ইসলাম ছিলেন সৎ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। বিশেষত কুমিল্লায় রাজনৈতিক অঙ্গনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম মফিজুল ইসলাম বললে অত্যুক্তি হবে না। ভাষা আন্দোলন ও চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের মর্মমূলে প্রবেশ করেন। বাংলাদেশ জাতীয় লীগের অন্যতম সহ-সভাপতি অধ্যাপক মফিজুল ইসলাম ১৯২৬ সালে কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানাধীন (বর্তমান উপজেলা) বাকশীমূল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মোঃ বন্দে আলী মিয়া ছিলেন তহশীলদার এবং মাতা আতরুন্নেসা ছিলেন গৃহিনী।

১৯৪৩ সালে তিনি স্কুল জীবন থেকেই তিনি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। একই বছর তিনি ইউসুফ বহুমুখী কারিগরী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৪৫ সালে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পাকিস্তান আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৬ সালে চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি ন্যাপ প্রধান অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদের সরাসরি ছাত্র ছিলেন। তাঁর সাহচর্য অধ্যাপক মফিজুল ইসলামকে বাম রাজনীতির দিকে ঝুঁকে পড়ার কার্যকরী ভূমিকা রেখেছিল- এমন কথা অনেকে বলেন। ১৯৪৬ সালেই তিনি চট্টগ্রাম জেলা মুসলিম ছাত্রলীগ সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন।

১৯৫০ সালে তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। চট্টগ্রামের আবু তোরাব হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনকালে তিনি প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণিতে প্রথমস্থান অর্জন করেন।

এরপর ঐতিহাসিক ঢাকা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করার দায়ে সরকারি চাপের মুখে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব ছেড়ে দেন এবং লাহোরস্থ ‘দি পাকিস্তান টাইমস’ এর চট্টগ্রাম সংবাদদাতার কাজ করেন।

তাঁরই উদ্যোগে ও পরিচালনায় ১৯৫২ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম সরকার বিরোধী বাংলা দৈনিক ‘আমার দেশ’ ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়। ৬ মাস পর সরকারি চাপের মুখে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে গেলে তিনি ১৯৫৩ সালের গোড়ার দিকে সার্বক্ষণিক রাজনীতিতে আত্মনিয়োগ করেন। এর আগে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি প্রথমে মাওলানা ভাষানীর নেতৃত্বাধীনে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। এ নির্বাচনে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নাগাইসের বঙ্গশার্দুল মেজর আবদুল গণি। জনাব গণি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এ নির্বাচনে বিজয়ী হলেও পরবর্তীতে তিনি মুসলিম লীগের সাথে যুক্ত হয়ে যান। বছর দুয়েকের মাথায় কেন্দ্রীয় মুসলিম লীগ সরকার তৎকালীন পশ্চিম জার্মানীর বন শহরে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তাঁকে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠান এবং সেখানেই তিনি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। সেই সময়ে অনেকে তাঁর মৃত্যুকে পাকিস্তান সরকারের পরিকল্পিত হত্যা বলেও উল্লেখ করেন। তাঁর মৃত্যু রহস্য আজও অনাবিষ্কৃত রয়েছে।

১৯৫৪ সালে অধ্যাপক মফিজুল ইসলামের উদ্যোগে চট্টগ্রাম নাইট কলেজ (বর্তমানে চট্টগ্রাম সিটি কলেজ) প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তিনি এ কলেজের প্রথম উপাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন এবং একই সালে পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকার চট্টগ্রামস্থ সংবাদদাতার কাজ করেন। কিন্তু কিছুদিন পর প্রদেশব্যাপী ৯২-ক ধারা জারি হলে তাঁকে গ্রেফতার করা হয় এবং ১৯৫৫ সালের জুন মাসে তিনি মুক্তি পান। পুনরায় ১৯৫৫ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত পুলিশ ধর্মঘটের সময তাঁকে গ্রেফতার করা হয় এবং ৯ মাস পর তিনি মুক্তিলাভ করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।

তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সেন্টো-সিয়াটো এবং পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তির প্রতিবাদে এবং সর্বোপরি পূর্ব বাংলার স্বায়ত্ব শাসনের দাবিতে আওয়ামী লীগের কাগমারী সম্মেলনে মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ থেকে কমিউনিস্ট পার্টি ও বামপন্থীরা বেরিয়ে এলে অধ্যাপক মফিজুল ইসলামও তাদের সাথে বেরিয়ে আসেন এবং মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ১৯৫৭ সনে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- ন্যাপ গঠিত হলে তিনি তাতে যোগদান করেন এবং কুমিল্লা জেলা ন্যাপের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সাংগঠনিক কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রধানমন্ত্রী হবার পর দাবি ওঠেছিল যুক্তফ্রন্টের একুশ দফার অন্যতম দাবি পূর্ব বাংলার স্বায়ত্বশাসনের বিষয়টি কার্যকর করার। কিন্তু সোহরাওয়ার্দী তার জবাবে বলেছিলেন ‘নাইনটি এইট পার্সেন্ট অটোনমিতো হো গিয়া আওর ফাইভ পার্সেন্ট কা লিয়ে তো মাই রহে হো’। তার এ বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানসহ বামপন্থী ও কমিউনিস্টরা। শেখ মুজিবুর রহমান তখন ক্ষোভের সাথে বলেছিলেন, কেউ একজন প্রধানমন্ত্রী হলেই পূর্ব বাংলার স্বায়ত্বশাসন হয়ে গেল তা কোন কথার কথা নয়। কিন্তু আওয়ামীলীগ থেকে বামপন্থী ও কমিউনিস্ট বেরিয়ে এলেও শেখ মুজিবুর রহমান তাদের সাথে যোগ দেননি। একই বছর অর্থাৎ ১৯৫৭ সালে বঙ্গশার্দুল মেজর আবদুল গণির আকস্মিক মৃত্যুতে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক শূন্য আসনে (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আবার উপ-নির্বাচন হয়। অধ্যাপক মফিজুল ইসলাম এ নির্বাচনে ন্যাপের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।

আওয়ামীলীগ মনোনয়ন দেয় নবীন আইনজীবী এডভোকেট আমীর হোসেনকে। এ নির্বাচনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবুর রহমানসহ আওয়ামীলীগের সব বাঘা বাঘা নেতারা বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার বিভিন্ন জনসভায় যোগদান করেন। বঙ্গবন্ধু এ উপলক্ষে ১৫-২০ দিন ব্যাপক প্রচার অভিযান পরিচালনা করেন। ন্যাপ প্রার্থী অধ্যাপক মফিজুল ইসলামের পক্ষে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ প্রচার প্রচারণা করেন। ১৯৫৮ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে এডভোকেট আমীর হোসেনের কাছে অধ্যাপক মফিজুল ইনলাম ১,৭৯৫ ভোটে পরাজিত হন। ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর সারা দেশে সামরিক আইন জারী হয়। আইয়ুব খান একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত হন।

সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়। রাজনৈতিক নেতাদের অনেকের বিরুদ্ধে জারী করা হয় এবডো। শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেক রাজনৈতিক নেতার স্থান হয় কারাগারে। এ সময় আইউব খান ইসলামাবাদে মুসলীম লীগের একটি কনভেনশন আহ্বান করেন। আকরাম খাসহ বিপুল সংখ্যক জাঁদরলে নেতা কনভেনশানে যোগদান থেকে বিরত থাকেন। মুসলীম লীগ দুভাগে ভাগ হয়ে যায়। যারা কনভেনশানে যোগদান করেছিলেন তাদের বলা হতো কনভেনশন মুসলিম লীগ আর যারা যোগ দেননি তাদের বলা হতো কাউন্সিলর মুসলিম লীগ। সামরিক ফরমান বলে এ সময় প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক আইউব খান দেশের জন্য একটি সংবিধান প্রদান করেন। এ সংবিধানে পাকিস্তানের উভয় অংশের চল্লিশ হাজার করে আশি হাজার মৌলিক গণতন্ত্রী জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে। এই মৌলিক গণতন্ত্রীদের ভোটে প্রথমে নির্বাচিত হবে দেশের প্রেসিডেন্ট।

একইভাবে তাদের ভোটে নির্বাচিত হবে দেশের উভয় অংশের ১৫০ জন করে ৩০০ জন এমএনএ ও প্রত্যেক অংশে ৩০ জন করে এমপি নির্বাচিত হবে। কোনো রাজনৈতিক দলই এ সংবিধান মেনে নেয়নি। আবার সাহস করে এর প্রতিবাদও কেউ করেনি। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এর বিরুদ্ধে প্রথম মুখ খুলেন। আর তখনই তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে হামিদুর রহমান নামে একজন সাবেক বিচারপতিকে দিয়ে গঠন করা হয় একটি শিক্ষা কমিশন। হামিদুর রহমানের এ শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার ছাত্র সমাজ জ¦লে ওঠে স্ফূলিঙ্গের মতো। আরম্ভ হয় ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন। ১৯৬২ সনের ১৭ সেপ্টেম্বর ছাত্রদের মিছিলে গুলি চালায় পাকিস্তানি পুলিশ। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে দেশের প্রখ্যাত নয় জন রাজনৈতিক নেতা সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে বিবৃতি প্রদান করেন। যা নয় নেতার বিবৃতি হিসেবে পরিচিত। পরবর্তীতে এ বিবৃতিতে কেন্দ্র করে গঠিত হয় ন্যাশন্যাল ডেমোক্রেটিভ ফ্রন্ট, সংক্ষেপে এনডিএফ রাজনৈতিক মোর্চা। এ ফ্রন্টের আহ্বানে সাধারণ মানুষও মাঠে নেমে পড়ে। শুরু হয় সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন। অধ্যাপক মফিজুল ইসলাম এনডিএপ এর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৮-৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন ও গণ অভ্যুত্থানে অধ্যাপক মফিজুল ইসলাম অনন্য ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তীতে আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে জাতীয় লীগ গঠিত হলে অধ্যাপক মফিজুল ইসলাম তাতে যোগদান করেন এবং এক পর্যায়ে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি বুড়িচং থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু এ সংসদ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। তিনি বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া নির্বাচনী এলাকা থেকে ১৯৫৪, ১৯৫৭, ১৯৭০ ও ১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে বিরোধী দলীয় প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন। সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার পর জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় থেকেই জাতীয় সংসদ সদস্য হন আনসার আহমেদ। পরবর্তীতে আনসার আহমেদই এ দলের জেলা কমিটির সভাপতি হন। এরপর অধ্যাপক মফিজুল ইসলাম রাজনৈতিক আর কোনো দলের সাথে সম্পর্ক রাখেননি। কুমিল্লার আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্ট আইনজীবী মফিজুল ইসলামের পরবর্তী জীবন অনেকটা নিরবে-নিভৃতেই কেটেছে। সংসদ সদস্য থাকাকালীন সময়ে তিনি সোভিয়েত, রাশিয়া, আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ সফর করেন। সে-সময় আফগানিস্তান সফরের উপর তিনি ‘আফগানিস্তান ফেক্টস এন্ড ফিকসান’ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন এবং তা বহুল আলোচিত হয়। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে Degree Functional English.’ Advanced Eassy’, Principles of commerial law.’ Standerd Commercial English’. Fundamentals of Political English’. Fundamentals of Political Science. ‘মৌলিক অর্থনীতি’ ‘বাণিজ্যিক পত্র সংযোগ’ International law made Easy.’ Standard Functional English’. ‘সোভিয়েত ইউনিয়ন: স্বাস্থ্য ব্যবস্থা’ ইত্যাদি। তাঁর রচিত প্রতিটি গ্রন্থই তথ্য সমৃদ্ধ ও পাঠক সমাদৃত।

সারাজীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করলেও তাঁর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন তেমন সুখময় ছিল না। চট্টগ্রাম থাকাকালে এক ধনাঢ্য ব্যক্তির কন্যাকে তিনি বিয়ে করেন। কিন্তু সেই বিয়ে বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এ বিবাহ বিচ্ছেদের পর তিনি কুমিল্লায় এসে শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে দিয়ে আইন পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। বাসা নেন অশোকতলার প্রফেসর পাড়ায়। তার বাসায় বিপরীত পাশে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইংরেজি বিভাগের খ্যাতনামা প্রফেসর লায়লা নূরের বাসা। দু’জনই গুণীজন। দুজনে বৈবাহিক বন্ধনেও আবদ্ধ হন। কিন্তু এ বিয়েও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এরপর অধ্যাপক মফিজুল ইসলাম প্রফেসর পাড়ার বাসাটি ছেড়ে দিয়ে বাগিচাগাঁওয়ে খান মঞ্জিলের পাশের বাসাটি ভাড়া নিয়ে সেখানে চলে আসেন এবং আবার বিয়ে করেন। এর মধ্যে আইন পেশায় তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। অনেক কঠিন মামলার আর্জিও তিনি এমনভাবে সাজাতেন যে মামলাটি তার পক্ষে চলে আসতো।

সংসারে স্বচ্ছলতা এলে তিনি রাণীর বাজার রাসস্থলী আশ্রমের বিপরীতে একখ- জমি কিনে বাড়ি নির্মাণ করেন। তাঁর তৃতীয় স্ত্রীর ঘরে চার কন্যা জন্মলাভ করে। তারা সবাই এখন প্রতিষ্ঠিত। ভ্রাতৃষ্পুত্র এডভোকেট রফিকুল ইসলাম ব্যতীত আর কেউ এ বাড়িতে থাকেন না। সেই বাড়িটির আগের অবয়বও এখন আর নেই। এখানে গড়ে ওঠেছে ৯ তলা বিশিষ্ট বিশাল ইমারত। শুধু নেই বিশাল মনের সেই মানুষটি। এমনিভাবে কুমিল্লার রাজনৈতিক অঙ্গনের বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতাদের অনেকে বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে গেছেন। সমাজকল্যাণে যাঁদের অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৯১ সালের ২৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ৩ টায় তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি দেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৪ কন্যা, আত্মীয়-স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

এডভোকেট রফিকুল ইসলামকে ধন্যবাদ, তিনি অধ্যাপক মফিজুল ইসলাম সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত একটি চিরকুট না দিলে হয়তো এ লেখা সম্ভব হতো না। অধ্যাপক মফিজুল ইসলামের তৃতীয় কন্যা শারমিন সাথী ইসলাম ময়নাকেও ধন্যবাদ। তিনিও বেশ কিছু তথ্য উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।

লেখক: কবি, সাংবাদিক ও গবেষক।