প্রতিরোধের প্রেমপত্র

মনোয়ার হোসেন রতন।।
inside post
ইসরায়েল,
তোমাকে লেখা এ চিঠি শুধু প্রেম নয়, প্রতিশোধও নয়—এ এক আগ্নেয় দীর্ঘশ্বাস, যেখানে প্রতিটি বাক্য জন্ম নিয়েছে ধ্বংসস্তূপে, প্রতিটি শব্দে লুকিয়ে আছে শহীদের রক্তাক্ত চুম্বন। তোমার চোখে যা সন্ত্রাস, আমাদের হৃদয়ে তা শুদ্ধ প্রেমপত্র—রক্তে লেখা, আগুনে পোড়া, প্রতিজ্ঞায় স্নাত।
এসো, দেখো এবং পড়ো সেই চিঠি গুলোর নাম, যে চিঠি গুলো আকাশে জ্বলজ্বলে ধ্বনিরূপে উঠেছে—তার প্রতিটি নাম, প্রতিটি পঙ্‌ক্তি একেকটি আত্মমর্যাদার মিসাইল। যেমন:
১. আল-কুদসের অশ্রুবিন্দু: তোমার লৌহপ্রাচীর চিরে এক শিশু কান্নার ছায়া হয়ে ভেসে আসে আকাশে—তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিল,”আমার কাবা কি অপরাধ করেছিল?”
২. হায়ফার হাহাকার: উপসাগরের জলে প্রতিবিম্ব হয়ে জ্বলেছে বারুদের পদ্য—”তোমার শহরে বাতাসও রক্তে কথা বলে, শব্দ আমাদের, আগুন তো তোমারই চাষ।”
৩. গাজার ঘুমভাঙানো কবিতা: চাঁদের নিচে, শিশিরে মোড়ানো ড্রোনরূপী বার্তা—”আমরা জেগে আছি, তুমি কাকে ঘুম পাড়াতে এসেছো?”
৪. নাসেরের নীল চিঠি: নীলনদের তীরে বসে লেখা হয়েছিল ইতিহাসের পৃষ্ঠায়—এক পাশে ছিল ফারাওয়ের পতনের গল্প, অন্য পাশে রক্তে লেখা প্রতিজ্ঞা—”তুমি কি ভেবেছো, নাসেরদের উত্তরসূরি নেই?”
৫. ইমামের ঈদ উপহার: তোমার আতশবাজির শব্দে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল আমাদের উপহার-একটি সাঁজোয়া চুম্বন, যা বলেছিল,”আমরাও ঈদ করি, তবে রক্তে স্নান করে।”
৬. ইস্পাহানের ইশারা: ইরানের মৃত্তিকায় জন্মানো এক ছেলের লেখা—”মা বলেছে, শহীদ হতে পারলে চিঠি পৌঁছাবে। আমি পৌঁছে দেব, ইনশাআল্লাহ।”
৭. আল-আকসার অভিমান: কাঁটাতারের বুকে ছুটে গিয়ে মিনারের কণ্ঠে ফুঁপিয়ে উঠেছিল-“আর কতকাল নিঃশব্দ থাকবো?
আমার আজান কি শুধু ইতিহাসে থাকবে?”
৮. বেহেশতের বজ্রপত্র: তুমি ধরতে পারোনি সে চিঠি—কারণ তা রচিত হয়েছিল আবু মাহদীর হাতে, সোলাইমানির রক্তে ছিল তার সই—”তোমাকে আমরা জান্নাতের পথ চিনিয়ে দেবো—তোমার অনিচ্ছায়!”
৯. শহীদের শপথ: এটা আর চিঠি নয়, এটা প্রতিজ্ঞার গায়ে গাঁথা জীবন—প্রতিটি শিশুর চোখে লেখা, প্রতিটি মায়ের বুকের নীচে গর্জে ওঠা ঘোষণা—”আমরা মরবো, কিন্তু হারবো না।আমাদের মৃত্যু তোমার পতনের সূচনা!”
১০. ইরানের ইশ্‌কনামা: সবশেষে হৃদয় চিরে ঢুকে পড়া বার্তা—প্রহরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে সে লিখেছিল—”তুমি ভুলে গেছো আমরা কারা? তবে কারবালার কবরস্থান পড়ো—আমরা ওখানেই জন্ম নিই!”
পরিশেষে, ইসরায়েল এ চিঠিগুলো কোনো ক্ষেপণাস্ত্র নয়, এগুলো প্রতিরোধের কবিতা-
যা শহীদেরা লিখেছে রক্তে, ছাইয়ে, আগুনে। তুমি আগুন দাও, আমরা তাতে প্রেম লিখি।তুমি ধ্বংস করো, আমরা নির্মাণ করি আত্মমর্যাদার মিনার একদিন, এ চিঠিগুলো ইতিহাসের পাঠ্য হবে—’আত্মমর্যাদার কাব্যগ্রন্থ’ নামে পড়ানো হবে বিদ্যালয়ে, কারণ এগুলো শুধু অস্ত্র নয়—এগুলো একেকটি প্রেমপত্র, যার প্রতিটি পঙ্‌ক্তিতে বাস করে একটি জাতির শপথ। যে ভালোবাসে কেবল মুক্ত হৃদয় আর অম্লান আত্মা।
আরো পড়ুন