প্রেমিকের মৃত্যু গুজবে তিন পুলিশকে গণপিটুনি

 

আমোদ প্রতিনিধি।।

কুমিল্লার দেবিদ্বারের প্রেমিক যুগলকে বুড়িচং উপজেলা থেকে উদ্ধারে আসা পুলিশের লাথি খেয়ে আহত প্রেমিক অচেতন হয়ে পড়ে। প্রেমিকের মৃত্যু হওয়ার গুজবে তিনজন পুলিশ সদস্যকে গণপিটুনি দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে স্থানীয়রা। পরে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে ৯৯৯-এ ফোন করলে বুড়িচং থানা পুলিশ, দেবিদ্বার থানা পুলিশ, ময়নামতি হাইওয়ে পুলিশ ও দেবপুর পুলিশ ফাঁড়ির বিপুল সংখ্যক পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে আটক তিন পুলিশ সদস্য ও প্রেমিক যুগলকে উদ্ধার করে। ঘটনাটি ঘটে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার পোস্ট অফিস রামপুর এলাকায়। এদিকে শৃংখলা বিরোধী আচরণের দায়ে পুলিশের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান বুধবার জানিয়েছেন ব্রাক্ষণপাড়া- দেবিদ্বার সার্কেল এএসপি আমিরুল্লাহ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উদ্ধার করতে আসা দেবিদ্বার থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক ইকরামুল হক প্রেমিক ইউছুফকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তার তলপেটে লাথি মারলে অচেতন হয়ে পড়ে। সোমবার রাতের এই ঘটনার এক পর্যায়ে স্থানীয়রা পুলিশের উপর হামলা চালায়। এসময় এক যুবক তিন পুলিশকে উদ্ধার করে একটি ঘরে নিরাপদে রেখে ৯৯৯-এ ফোন করেন।
সূত্র আরো জানায়, দেবিদ্বার উপজেলার বিহারমন্ডল গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের মেয়ে মোহনপুর পাবলিক কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী আঁখি আক্তারের সাথে প্রতিবেশী সামসুল হকের ছেলে মুদি ব্যবসায়ী মো. ইউছুফের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। এর সূত্র ধরে রোববার সন্ধ্যায় তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।
বিহারমন্ডল গ্রামের আব্দুল গফুর জানান, প্রতিবেশী আঁখির সাথে ইউছুফের দুই বছরের প্রেম ছিল, এক মাস পূর্বে তারা পালিয়ে গিয়ে তিনলক্ষ টাকা দেন মোহরানায় বিয়ে করেন। ১০দিন পর তাদের পারিবারিক ভাবে মেনে নেয়ার আশ^াসে ফিরিয়ে আনা হয়। ওদের ফিরিয়ে আনার পর ঘটনার সমাধান না করে, পুনরায় ২৩ ডিসেম্বর আঁখিকে পাশ^বর্তী এলাহাবাদ ইউনিয়নের সিঙ্গারী খোলা গ্রামে বিয়ে দেন। বিয়ের দু’দিন পর রোববার সন্ধ্যায় নতুন স্বামীকে নিয়ে বাড়িতে আসার পর আঁখি পুরাতন প্রেমিক স্বামী ইউছুফকে নিয়ে পালিয়ে যায়। ওই ঘটনায় সোমবার আঁখির মা নূরজাহান বেগম বাদী হয়ে দেবিদ্বার থানায় একটি অপহরণের অভিযোগ পত্র দাখিল করেন।
পুলিশ ইউছুফকে ধরতে এসে তাকে না পেয়ে তার বড় ভাই ইব্রাহীমকে ধরে নিয়ে যায়। পুলিশ ইউছুফের সেল ফোনে জানান, তোমার ভাইকে উদ্ধার করতে তোমাদের দু’জনকে থানায় আসতে হবে। ইউছুফ তার প্রেমিকাকে নিয়ে বুড়িচং উপজেলার পোস্ট অফিস রামপুর এলাকা থেকে বাস যোগে থানায় আসার সময় প্রেমিকা আসবেনা বলে জানান। এসময় জোর করে তাকে গাড়িতে উঠাতে চাইলে স্থানীয়রা এসে তাদের আটক করে পাশ^বর্তী রামপুর গ্রামের সিএনজি অটো রিকশা চালক মনিরের বাড়িতে আটক রেখে উভয়ের অভিভাবকদের খবর দেন।
এরই মধ্যে দেবিদ্বার থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক ইকরামুল হক দু’জন সিপাহী নিয়ে সিভিল পোষাকে হাজির হয়ে ইউছুফের হাতে হাত কড়া পরিয়ে দেন।
এব্যাপারে দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ জহিরুল আনোয়ারের সাথে সেল ফোনে যোগাযোগ করলেও ফোন রিসিভ করেননি। তবে উদ্ধার করতে যাওয়া দেবিদ্বার থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক ইকরামুল হক জানান, ঘটনাস্থলে দু’টি গ্রুপ সৃষ্টি হওয়ায় আমাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। আহত ইউছুফ জানিয়েছে লাথিতে নয়, তার মৃগী রোগ থাকায় সে অচেতন হয়ে পড়েছিল।
বুড়িচং থানার ওসি মোজাম্মেল হক জানান, আমাদের অবহিত না করে আমাদের থানা থেকে আসামি ধরতে এসেছে। যেহেতু অভিযোগটি দেবিদ্বার থানার সেহেতু ওই থানায় বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেবে।
ব্রাক্ষণপাড়া- দেবিদ্বার সার্কেল এএসপি আমিরুল্লাহ জানান, কিছু সদস্য মানুষের সাথে সঠিক আচরণ করছেন না। তাদের কারণে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনে শৃংখলা বিরোধী কাজ করার অপরাধে দেবিদ্বার থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক ইকরামুল হকসহ তিন পুলিশের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।