ফাঁসির আদেশ রহিত হওয়া সেই মুক্তিযোদ্ধার মুক্তি
প্রতিনিধি।।
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহা অবশেষে রোবরার কুমিল্লা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ফাঁসির দণ্ডাদেশ রহিত হবার পর তিনি যাবত জীবন সাজা ভোগ করেন। ৫ বছর ৭ মাস সাজা রেয়াত হওয়ায় দীর্ঘ ২৪ বছরের কারা জীবনের অবসান হলো এ মুক্তিযোদ্ধার।
জানা যায়, উপজেলার হোসেনপুর গ্রামে ১৯৯৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেশী দীনেশ চন্দ্র দত্তকে হত্যার অভিযোগে রাখাল চন্দ্র নাহা ও তার ভাই নেপাল চন্দ্র নাহার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন নিহতের ছেলে নিখিল চন্দ্র। হত্যা মামলা দায়ের করার পর সন্ধ্যায় দেবিদ্বার থানা পুলিশ স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রাখাল চন্দ্র নাহাকে গ্রেফতার করে। নেপাল চন্দ্র নাহা পলাতক অবস্থায় মারা যান। মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ রাখাল চন্দ্র ও তার ভাই নেপাল চন্দ্রের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করলে ২০০৩ সালের ২০ জানুয়ারি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (প্রথম আদালত) খান আবদুল মান্নান অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্রর বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় প্রদান করেন।
এর পর ২০০৮ সালের ৭ এপ্রিল মধ্যরাতে রাখাল চন্দ্র নাহার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে ৩ এপ্রিল কর্তৃপক্ষর চিঠিটি পায় তার পরিবার। পরের দিন আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংগঠনের পক্ষ থেকে দেবিদ্বারে এবং ৫ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে এ মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসির দণ্ড রহিত করার জন্য দাবি জানানো হয়। এ আন্দোলনে যোগ দেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও। পরের দিন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসি কাল শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদের দৃষ্টি গোচর হয়। তিনি রাষ্ট্রপতিকে এ মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসির দণ্ড মওকুফের জন্য অনুরোধ করেন। ফাঁসি সম্পন্ন হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে রাষ্ট্রপতি তা রহিত করেন। ২৫ জুন রাষ্ট্রপতি তার মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন।
কুমিল্লা কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহাকে ফুলেল শুভেচ্ছায় অভ্যর্থনা জানান আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ হুমায়ুন কবির চেয়ারম্যান, কুমিল্লা জেলা সভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান তারিকুর রহমান জুয়েল, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নয়ন, প্রচার সম্পাদক শাহ পরান সিদ্দিকী তারেক প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
এ সময় মুক্তিপ্রাপ্ত রাখাল চন্দ্র নাহা তার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, ফাঁসি নিশ্চিত জেনে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম। সাংবাদিক সমাজ, আমরা মুক্তযোদ্ধার সন্তান এবং বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর চেষ্টায় আমার ফাঁসি রহিত হয়, আমি নব জীবন লাভ করি। একজন মুক্তিযোদ্ধার জন্য মানুষের ভালবাসা দেখে আমি এইটাই বুঝেছি যে, ৭১ এ যুদ্ধে গিয়ে ভুল করিনি।
আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় সভাপতি আলহাজ হুমায়ূন কবির বলেন, স্বাধীন দেশে একজন মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসি মেনে নিতে পারিনি বলেই আমরা আন্দোলনে নেমেছিলাম। আজ সেই আন্দোলন পূর্ণতা পেল। আমরা এখন বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহার সুচিকিৎসা এবং পুনর্বাসন চাই।