ফেরেশতা দিয়ে সাজানো বাংলাদেশ

এক কল্পিত রাষ্ট্রের রূপকল্প
মনোয়ার হোসেন রতন ।।
মানুষের হাতে গড়া রাষ্ট্রে সীমাহীন সীমাবদ্ধতা। রাষ্ট্রনায়ক থেকে শুরু করে পিয়ন পর্যন্ত কোথাও না কোথাও স্বার্থ, দুর্নীতি, প্রতারণা কিংবা অসততা বাসা বেঁধেছে। কিন্তু যদি ফেরেশতারা রাষ্ট্র চালাতো? যদি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভা, বিচার বিভাগ, সেনাবাহিনী, প্রশাসন—সবকিছুই নিয়ন্ত্রিত হতো ফেরেশতাদের দ্বারা? এই প্রশ্নটি কল্পনা হলেও, এর ভেতরে লুকিয়ে আছে আমাদের নৈতিক আত্মজিজ্ঞাসা।
রাষ্ট্রপতি: জিবরাইল (আঃ)
আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহি এনে দেওয়া ফেরেশতা জিবরাইল হতেন এক আদর্শ রাষ্ট্রপতি। তিনি হতেন নৈতিকতার প্রতীক, মতাদর্শের ধারক ও জাতির আত্মিক দিকনির্দেশক। রাষ্ট্রের রূপ ও রুচি নির্ধারণে তাঁর ভূমিকা হতো সর্বোচ্চ স্তরের।
প্রধানমন্ত্রী: মীকা’ঈল (আঃ)
রিজিক ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষাকারী এই ফেরেশতা হতেন আদর্শ প্রধানমন্ত্রী। তাঁর শাসনে ন্যায়, সাম্য ও শান্তির ফুল ফুটতো। সরকার হতো দুর্নীতিমুক্ত, মানবিক এবং জনকল্যাণমুখী।
মন্ত্রী পরিষদ:
এই ফেরেশতা-প্রধান মন্ত্রিসভায় মালিক (আঃ) হতেন অর্থমন্ত্রী—তিনি হতেন অপচয় ও ঘুষের বিরুদ্ধে কঠোর। আজরাঈল (আঃ) হতেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, যিনি অপরাধ নির্মূলে ছিলেন নিষ্ঠুর কিন্তু ন্যায়পরায়ণ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকতেন ইসরাফিল (আঃ), যিনি হতেন জ্ঞান ও জাগরণের অগ্রদূত।
পররাষ্ট্রে থাকতেন রিদওয়ান (আঃ)—জান্নাতের দ্বাররক্ষক, শান্তির কূটনীতির প্রতীক। আইন মন্ত্রণালয় পরিচালনা করতেন কারেকিব ও আতীদ—প্রতিটি কাজের নিখুঁত রেকর্ডকারক।
তথ্য মন্ত্রণালয়ে মনিকারেব (আঃ), স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে হারূত ও মারূত, পরিবেশে মীকা’ঈল (আঃ), আর নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকতেন রুহ—আত্মার পবিত্রতার ফেরেশতা।
বিচার বিভাগ:
প্রধান বিচারপতি হতেন আতীদ (আঃ), যিনি মানুষের প্রকাশ্য-গোপন সব কাজ লিপিবদ্ধ করেন। তাঁর অধীনে বিচার বিভাগ হতো দুর্নীতিমুক্ত, পক্ষপাতহীন ও দ্রুতগতি সম্পন্ন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পেত কথার চেয়ে কাজে।
সেনাবাহিনী:
সেনাপ্রধান হতেন আজরাঈল (আঃ)। তাঁর অধীনে সেনাবাহিনী হতো সাহসী, শৃঙ্খলাবদ্ধ, প্রয়োজনে কঠোর, তবে কখনোই দম্ভপূর্ণ নয়। বিমানবাহিনী জিবরাইল (আঃ), নৌবাহিনী মীকা’ঈল (আঃ) এর নেতৃত্বে থাকতো—দ্রুততা ও ভারসাম্যের মেলবন্ধন।
প্রশাসন ও নির্বাচন:
প্রশাসনের দায়িত্বে থাকতেন কারেকিব (আঃ)—দায়িত্ববান, স্বচ্ছ, নিষ্ঠাবান। আর নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে আতীদ (আঃ)—নিরপেক্ষ, নির্ভরযোগ্য এবং সত্যনিষ্ঠ। একটিও ভোট হারাতো না, একটিও অভিযোগ থাকতো না।
গণমাধ্যম:
মনিকারেব (আঃ) এর নেতৃত্বে গণমাধ্যম হতো সত্য ও মানবতার প্রচারক। গুজব, চরিত্রহনন, দলীয় দালালি—এ সবই নির্বাসিত হতো। সংবাদপত্র হতো বিবেকের আয়না, টেলিভিশন হতো শিক্ষার চ্যানেল।
ধর্ম ও নৈতিকতা:
জিবরাইল (আঃ) থাকতেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে। ধর্ম এখানে হতো শান্তির মাধ্যম, বিভাজনের নয়। ধর্মীয় জ্ঞান, সহনশীলতা ও মানবিক মূল্যবোধ হতো রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি।
নারী নেতৃত্ব:
নারীর মর্যাদা রক্ষায় ফেরেশতারা দিতেন সর্বোচ্চ গুরুত্ব। যোগ্যতার ভিত্তিতে নারীরা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদেও অধিষ্ঠিত হতো—কোটা নয়, প্রাপ্য অনুযায়ী।
এক নিষ্পাপ রাষ্ট্র কল্পনা
এই কল্পিত রাষ্ট্রে থাকতো না দলাদলি, দখলবাজি, ক্ষমতার লালসা, ভোট ডাকাতি, হাটে-বাজারে ঘুষ। এখানে মন্ত্রী-আমলা-নেতারা হতেন ফেরেশতা সদৃশ—পরিচ্ছন্ন, স্বচ্ছ, আত্মাহীন, অহংকারবিহীন।
ফেরেশতারা মানুষ নয়, তাই এ কল্পনা বাস্তবের নয়। কিন্তু মানুষ যদি তাদের মতো হতে শেখে? যদি নীতিকে বিশ্বাস করে, ক্ষমতাকে দায়িত্ব ভাবে, আর জনগণকে কর্তৃত্বের উৎস হিসেবে গ্রহণ করে? তবে এই বাংলাদেশও একদিন ফেরেশতাদের কল্পিত রাষ্ট্রে রূপ নিতে পারে—অন্তত নীতিতে, চিন্তায়, সংস্কারে।
এই লেখাটি একটি কল্পিত রূপক—নেতৃত্বে নৈতিকতা ও রাষ্ট্রে ফেরেশতাসদৃশ আদর্শ প্রতিষ্ঠার অনুপ্রেরণামূলক প্রয়াস।
inside post
আরো পড়ুন