‘বর্তমানে কুবি গবেষণায় একটি স্ট্যান্ডার্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে’
যা বললেন কুবি ট্রেজারার আসাদুজ্জামান
কুমিল্লা শিক্ষকদের পার্টটাইম রিউমুনারেশন বৃদ্ধি, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ভাতা প্রদান, গ্রেড ভিত্তিক শিক্ষকদের ল্যান্ডফোন ভাতা, পরীক্ষা পারিতোষিক নিয়মিত বরাদ্দের বাইরে বিশেষ বরাদ্দ এনে প্রদান,
বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে আইন বিভাগের মুট কোর্ট স্থাপন, গত চার বছরে মাত্র ৪৭ কোটি টাকার বাজেট ৭১ কোটি টাকার অধিককে উন্নীতকরণ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মিডিয়া ল্যাব স্থাপন, প্রত্যেক ফ্যাকাল্টিতে কনফারেন্স কক্ষ তৈরিতে অর্থ প্রদান, ফরিদপুর ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান মোঃ মীর নাসিরের কাছ থেকে নিজ উদ্যোগে ১৪-১৫ লক্ষ টাকার ১০০ জোড়া উন্নতমানের বেঞ্চ সংগ্রহ ও বিভিন্ন বিভাগে প্রদানসহ নানা উদ্যোগের কথা জানান এই সাক্ষাৎকারে। এছাড়া সাক্ষাৎকারে চার বছরে তার নানা কর্মকাণ্ড নিয়েও কথা হয়। নীচে সাক্ষাৎকারটি দেয়া হলো:
প্রশ্ন: বর্তমান উপাচার্য আসার পর থেকে আপনাকে (ট্রেজারার) গবেষণার বিষয়ে জোর দেয়ার বিষয়ে বলতে দেখা গিয়েছে।
অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় কোন অবস্থা থেকে কোথায় এসেছে তা এই চার বছর হিসাব করলে সহজেই বুঝা যায়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টি গবেষণায় একটি স্ট্যান্ডার্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে। শুধুমাত্র রিপোর্ট বাইন্ডিংয়ে বিশ হাজার টাকা, কিংবা বিদেশে ভ্রমণ করেও গবেষণায় ব্যয় দেখানো, নামে মাত্র রিপোর্ট দেয়া, কম্পিউটার সামগ্রী ক্রয় করা এসবই ছিল অতীতের প্রাকটিস। এ সকল অনিয়ম দূর করার লক্ষ্যে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণার ফরমেট এনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় জন্য নির্ধারিত ও উপযুক্ত একটি নিয়ম ও নীতিমালা প্রতিষ্ঠিত করেছি। ফলশ্রুতিতে বর্তমানে শিক্ষকগণ সেই নিয়ম নীতিমালা অনুসরণ করে সুশৃঙ্খলভাবে গবেষণা কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
প্রশ্ন: সময়ের সাথে সাথে কুবির বাজেট বেড়েছে। এই বাজেট বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আপনি কি বলবেন?
অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান: কোন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট একটি চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু বাজেট প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন সব সময় চ্যালেঞ্জের। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (বিমক) আমাদের যে অনুদান প্রদান করে থাকে তা যথাযথভাবে সঠিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছ উপায়ে ব্যবহার করলে এবং কাজের পরিধি উপস্থাপন করতে পারলে বিমক কর্তৃক অনুদান বৃদ্ধি করার সুযোগ রয়েছে। আমি সেই সুযোগ নিয়েছিলাম। ২০২০-এর ৫ জুলাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের পর থেকে তীব্র করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ও নিয়মিত অফিস করেছি। কিন্তু তৎকালীন উপাচার্য ইমরান কবির চৌধুরী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্কিত সোলার বিদ্যুৎ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত সাবেক রেজিস্ট্রার আবু তাহের ঢাকায় বসে সময় কাটিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবহেলিত ও পরিত্যক্ত প্রজেক্টের কাজ চলমানের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সাথে অনেকবার সবাই মিলিত হই । অতঃপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তৎকালীন সচিব মহোদয়ের সাথে সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে প্রজেক্টের অসুবিধা সমূহ এবং উত্তরণের পথ বলিষ্ঠভাবে ব্যাখ্যা করায় প্রায় ৯ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দের মাধ্যমে প্রকল্পটি সুচারুরূপে সম্পন্ন করি।
প্রশ্ন: কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আপগ্রেডেশন নীতিমালা সংশোধনের ব্যাপারে আপনার উদ্যোগ কি ছিল?
অধ্যাপক ড. মোঃ আসাদুজ্জামান: আমি দিনরাত পরিশ্রম করে কর্মকর্তা কর্মচারীদের আপগ্রেডেশন নীতিমালা সংশোধন করেছি। কারণ অতীতে স্বজনপ্রীতি করে রেজিস্টার আবু তাহের তার প্রিয় লোকদের আপগ্রেডেশনের সুবিধা দেয়ার জন্য খেয়াল খুশিমতো নিয়ম তৈরি করেছিল। পরোক্ষভাবে সাবেক রেজিস্ট্রার আবু তাহেরই বিশ্ববিদ্যালয়ের কলকাঠি নাড়াতো।
প্রশ্ন: আপনার এত অবদান ও কাজের কথা বলছেন আপনি কিন্তু তারপরেও আপনাকে নিয়ে শিক্ষকদের একটা অংশ সমালোচনা করে এটা কিভাবে দেখছেন?
অধ্যাপক ড. মোঃ আসাদুজ্জামান: এই প্রশ্নের উত্তর সকলেরই জানা উচিত। সত্যিকার অর্থে ট্রেজারারের কাজ একটি থ্যাঙ্কস লেস জব। আমার কাজই হলো অর্থ প্রদানের বিষয়ে আইন মেনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। আমি তো শিক্ষক, কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারীকে খুশি করতে আসিনি। আমি এখানে দায়িত্ব নিয়ে এসেছি দেশের স্বার্থ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ নিশ্চিত করার জন্য। হয়তো অনেকের আবদার আমি রক্ষা করতে পারিনি তাই তারা আমার প্রতি খুশি নন। যারা খুশি নন তাদের প্রত্যেককে আমি জানি এবং বুঝি তারা কে বা কারা? এদের মধ্যে কেউ কেউ প্রশাসনিক অনুমতি ব্যতিরেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি নিয়ে ব্যক্তিগত কাজে শতাধিকবার ঢাকা-কুমিল্লা যাতায়াত করেছে, ফলশ্রুতিতে বিশ্ববিদ্যালয় তথা দেশের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। আমি তা বন্ধ করার চেষ্টা করেছিলাম। আবার কেউ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তির অনুমতি ছাড়াই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেছে । আমি সার্টিফিকেট নথিভুক্তি কমিটির প্রধান থাকাকালীন কমপক্ষে ছয় মাস অতিক্রান্তর পর নথিভুক্তির সুপারিশ করেছিলাম কিন্তু পূর্বের উপাচার্য ওই শিক্ষকের সার্টিফিকেট নথিভুক্ত করার চাপ দেন। শুনেছি তিনি নাকি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিরত থাকা সত্ত্বেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ভর্তি ফর্মে তা উল্লেখ করেননি। কোন কোন শিক্ষক আপগ্রেডেশন সময়ের পূর্বেই পদোন্নতি পেয়েছেন। কেউ কেউ শিক্ষা ছুটিতে থাকার পরেও গবেষণার কাজ শেষ না করে নিজ বিভাগে যোগদানের চেষ্টা চালান। বিশ্ববিদ্যালয় একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে তার ব্যত্যয় ঘটানো মাননীয় উপাচার্য মহোদয়ের জন্য অসম্ভব। যেহেতু উপ-উপাচার্য ডঃ হুমায়ুন কবির নিয়মিতভাবে অফিস করেননি বিধায় মাননীয় উপাচার্য কখনো কখনো আমার নিকট এ ধরনের নথি পাঠিয়েছেন। আমি সম্পূর্ণ নিয়ম মোতাবেক মতামত প্রদান করেছি। মনে রাখতে হবে, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একজন অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন দ্বারা প্রাপ্ত ক্ষমতা এবং মাননীয় উপাচার্য কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করতে আমার কোন বাধা নেই। সঙ্গত কারণেই আমি সে সকল নথিতে মতামত দিয়েছি। আমার মতামত কার পক্ষে যাবে কিংবা কার বিপক্ষে যাবে সে চিন্তা করে আমি কখনো মতামত দেয়নি। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীর কিংবা CGPA মাত্র ৩.০ স্কোরের কোন সার্টিফিকেট অর্জন করিনি। যারা আমার সমালোচনা করছেন অনেকেরই শিক্ষক হওয়ার নূন্যতম যে যোগ্যতা বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন নির্ধারণ করেছে, তা নেই।
প্রশ্ন: আপনি ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের গভার্নিং বডির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কর্তৃক মনোনীত সদস্য ছিলেন। আপনাকে কেন বাদ দেওয়া হলো?
অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান: দেখুন আমি পরপর দুই মেয়াদে ৬ বছর ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে গভর্নিং বডির সদস্য হিসেবে কাজ করেছি। আমার পূর্বেও অনেক শিক্ষক এই মেডিকেল কলেজে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পালাক্রমে আমার দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য নতুন সদস্য মনোনয়ন দিয়েছেন। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আমি জানি এ মিথ্যা তথ্যটি কোন সোর্সের মাধ্যমে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অতিরঞ্জিত করে ছড়ানো হয়েছে। একজন সম্প্রতি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় উপ উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পাওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে স্থগিতাদেশ পান। তার সাথে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভাইস চ্যান্সেলরের খুব মহরম দহরম সম্পর্ক। অন্যজন অতীতে পিএসসিতে বিতর্কিত কাজ করেছেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও একজন ব্যর্থ প্রশাসক ছিলেন, তিনি কোন ফাইল পড়ে স্বাক্ষর করতেন না, অন্যদের কথা শুনে চলতেন। আরেকটি বিষয় স্পষ্ট করতে চাই, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের একজন অধ্যাপক চলতি দায়িত্বে রয়েছেন তিনি বিএমডিসির রুলস অনুযায়ী কোনভাবেই অধ্যাপক কিংবা অধ্যাপকের চলতি দায়িত্ব পেতে পারেন না এমনকি সহযোগী অধ্যাপকও হতে পারেন না। আমি বিষয়টি জানতে পেরে তীব্র প্রতিবাদ করেছিলাম কিন্তু সংশ্লিষ্ট ডীন ও অধ্যক্ষ মিলে সেই শিক্ষককে অধ্যাপকের চলতি দায়িত্ব দিয়েছেন। এসব কারণে দায়িত্ব পালনের সময় দুর্ভাগ্যক্রমে কিছু কিছু অযোগ্য ষড়যন্ত্রকারী আমার সমালোচনা করতে পারে।
প্রশ্ন: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি নানা সভা, আয়োজনে উপাচার্যকে নানা অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে এবং সেসকল কাজের দোসর হিসেবে আপনাকে আখ্যায়িত করেছে। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কি?
অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান: এটি একেবারেই ব্যক্তিগত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি জানিনা সাধারণ সম্পাদক এখন পর্যন্ত জনাব মেহেদী হাসান কোন যোগ্যতা বলে, কিসের ভিত্তিতে, কোন একাডেমিক ডিগ্রি অর্জন করার পরে আমাকে নিয়ে মন্তব্য করতে পারেন। শুনেছি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকালটি থেকে লেখাপড়া সম্পন্ন করেছেন। ছাত্র অবস্থায় তিনি কোন শ্রেণীভুক্ত শিক্ষার্থী ছিলেন সেটা নিয়ে আমার যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। এতোটুকু জানতে পেরেছি, তিনি ফার্স্ট ইয়ারে লেখাপড়া বুঝতে না পারায় এক বছর পরে দ্বিতীয় বার প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিলেন। অতঃপর একটি সিমেন্ট কোম্পানিতে চাকরি করতেন। কিন্তু তিনি শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন কিনা আমার জানা নেই। তবে আমি যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তার লেখাপড়ার সকল যোগ্যতার সঠিক তথ্য আমি পেয়ে যাব আশা করি। শুধুমাত্র উত্তেজনা কর কথা বলা, অন্যকে ছোট করা এবং মাঠে স্লোগান দেওয়া একজন শিক্ষকের কাজ নয়। তিনি আমার সাথে আমার বিভাগে পড়ালেখা করলে তিনি বুঝতে পারতেন আমাকে নিয়ে মন্তব্য করাটা তার কতটুকু দুঃসাধ্য ব্যাপার ছিল। তিনি যে সকল অভিযোগ করেছেন সবগুলোই মিথ্যা, অসত্য ও বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর ও অমর্যাদাকর । তিনি যে মিথ্যাচার করছেন তার জন্য তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত ও বিচারের ব্যবস্থা করা উচিত। শুধুমাত্র রাজনৈতিক বক্তৃতা দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা ছাড়া তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে কিছুই দেননি। এটা প্রমাণিত। বিগত বছরগুলোতেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপাচার্যদের সাথে তিনি দুর্ব্যবহার করেছেন। প্রায় পৌনে চার বছর পরে তিনি মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করে অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে এসে বিভাগে যোগদানের পর গত পাঁচ-ছয় মাসে একটি ক্লাসও নেননি সে তথ্য আমার কাছে রয়েছে । তিনি কিন্তু বর্তমানে শিক্ষা ছুটির নীতিমালায় বাধা পড়ে এখন আর শিক্ষা ছুটিতে অস্ট্রেলিয়া যেতে পারছেন না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করে নিজের ফায়দা হাসিলের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি অস্ট্রেলিয়া থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের ডিগ্রি সম্পন্ন করে যথা সময়ে ফেরত না আসায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট তাকে ৮ সপ্তার সময় বেঁধে দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আট সপ্তাহের শেষ দিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় যোগদান করেন। যোগদানের পরপরই কনভোকেশনের নাম দিয়ে আবার প্রায় তিন মাসের ছুটির জন্য আবেদন করেন। মাননীয় উপাচার্য মহোদয় মতামতের জন্য নথি আমার নিকট প্রেরণ করলে আমি বিষয়টি সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপনের পরামর্শ দিই। এতেই তিনি আমার প্রতি প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হন। কারণ সিন্ডিকেটে উপস্থাপন না হলে তিনি রাজনৈতিক চাপ দিয়ে মাননীয় উপাচার্য মহোদয় থেকে তার শিক্ষা ছুটি ভাগিয়ে নিতে পারতেন বলে মনে করেন।
অথচ সিন্ডিকেট সভা তার আবেদন বিবেচনা করে ১৫ দিনের ছুটি মঞ্জুর করেছিলেন এরপরেও তিনি অস্ট্রেলিয়া থেকে আর ছুটি বর্ধিত করার জন্য পুনরায় আবেদন করলে উপাচার্য মহোদয় নিজ ক্ষমতা বলে তাকে আরো কিছুদিন ছুটি ভোগ করার সুযোগ দেন। মনে রাখতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য সুবিধাজনক নিয়ম সৃষ্টি হতে পারে না, সকলের জন্য যে সকল নিয়ম নীতি প্রযোজ্য তার বেলায়ও সেটাই হবে । এটাই স্বাভাবিক ।
প্রশ্ন: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এমন কোন সিদ্ধান্তের কথা মনে পড়ে যা নিতে গিয়ে সমালোচনার শিকার হয়েছেন কিন্তু পরবর্তীতে সেই সিধান্তের সুফল বিশ্ববিদ্যালয় ভোগ করেছে?
অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান: আমার স্মৃতিতে একটি সিদ্ধান্তের মনে কথা আছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় চলমান নতুন প্রজেক্টের প্রাথমিকভাবে লাঞ্চ লে আউট, বিল্ডিংয়ের ড্রয়িং ও ডিজাইনের কাজ চলছিল। তখন বেশ কয়েকটি আবাসিক হলের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। সাবেক উপাচার্য ইমরান কবির ছেলে-মেয়েদের প্রত্যেকটি হলে একটি করে সুইমিং পুলের ব্যবস্থা রাখার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন। আমি যখন সুইমিং পুলের ব্যবস্থাপনা ও মেইনটেনেন্সের খরচের বিষয়ে দৃষ্টিপাত করি তখন তিনি আমার সাথে দুর্ব্যবহার করেছিলেন। অথচ তখনকার প্রজেক্ট ডিরেক্টরসহ অন্যান্য সদস্যবৃন্দ আমার কথার যুক্তিকতা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছিলেন। আমি বলেছিলাম ক্যাম্পাসে ছেলেদের ও মেয়েদের আলাদা সুইমিং পুল হতে পারে। প্রত্যেকটি হলের সুইমিং পুলের প্রয়োজন নেই।
অন্য আরেকটি ঘটনা, সাবেক উপাচার্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিবে এমন কোন সভা একাডেমিক কাউন্সিল কিংবা খাওয়া-দাওয়া করে ডিন ও চেয়ারম্যানদের সাথে আলোচনা করেননি। অথচ তিনি যখন ছুটিতে ইউএসএ গিয়েছিলেন তখন আমি উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকাকালীন একটি সভা আহবান করতে বাধ্য হই। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, সকল দোষ শুধুই আমার, শিক্ষকদের ক্ষোভ, অশালীন কথা সবকিছুই আমাকে ইঙ্গিত করে। কিন্তু সকল শিক্ষকরা জানতেন নিয়মিত উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে আমি সেই সভা করতে বাধ্য হয়েছিলাম। সেই সভা আমার জন্য একটি তিক্ত অভিজ্ঞতা ছিল। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করবেন মাননীয় উপাচার্য সেই পরিকল্পনার অংশীদারিত্ব থাকবে ট্রেজারারেরও। বিশ্ববিদ্যালয় আর্থিক স্বচ্ছতা ও উপযুক্ততার ভিত্তিতে রাষ্ট্রের আইন ও নিয়ম নীতি মেনে ব্যয় করাই হলো ট্রেজারারের কাজ। আমি যেভাবে গত চার চারটি বছর দায়িত্ব পালন করেছি সেভাবে সার্বিকভাবে মানোন্নয়ন হোক সেটাই চাই। ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা অর্থ দপ্তরে ইচ্ছাকৃতভাবে ফাইল আটকে রাখার প্রবণতা কমিয়েছি উল্লেখযোগ্যভাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রজেক্ট চলছে, সেটি সুসম্পন্ন হলে অবকাঠামোর দিক থেকে চমৎকার উন্নত মানের ক্যাম্পাস পাবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। সেটির যথাযথ যত্ন নেয়া ও উপযুক্ত ব্যবহার করাই হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল স্টেকহোল্ডারদের কাজ।
প্রশ্ন: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের এইচপিএলসি (HPLC) ক্রয় সংক্রান্ত একটি বিষয় অনেক দিন আলোচনা ছিল এ বিষয়ে যদি কিছু বলতেন।
অধ্যাপক ডঃ মোঃ আসাদুজ্জামান: আমি যখন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করি সময়টা ছিল ২০২০ সালের ৫ জুলাই। দুঃখের বিষয় হল ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের ইউজিসি কর্তৃক বরাদ্দকৃত টাকার মাধ্যমে সাবেক উপাচার্য মহোদয় কোন ধরনের সাইন্টিফিক ইন্সট্রুমেন্ট ক্রয় করতে পারেনি। অর্থাৎ নির্দিষ্ট কোডের অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেননি। আমি যোগদানের পর ২০২০-২১ অর্থবছরের টাকা সহ পূর্বের অর্থবছরের টাকা জমা হওয়ায় সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো ৩০ লক্ষ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ পেয়েছিল। বিভাগীয় প্রধানদের মাধ্যমে এই অর্থ দিয়ে প্রয়োজনীয় ইন্সট্রুমেন্ট ক্রয় করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, তখনকার ফার্মাসি ডিপার্টমেন্টের বিভাগীয় প্রধানের অনুরোধে আমি তাকে একটি আধুনিক এইচপিএলসি (High Performance Liquid Chromatography, HPLC) ক্রয় করার পরামর্শ দেই। আমার পরামর্শ গ্রহণ করে তিনি এইচপিএলসি (HPLC) ক্রয় করার পদক্ষেপ নেন।
অন্যান্য বিভাগ গুলো যেখানে ছোট ছোট ইন্সট্রুমেন্ট কিনে অর্থ ব্যয় করেছিল সেখানে ফার্মাসি ডিপার্টমেন্টের সাবেক প্রধান একটি দামি ও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যন্ত্র কিনে ডিপার্টমেন্টের গবেষণা ও শ্রেনী শিক্ষার্থীদের নতুন জ্ঞান সৃষ্টির সুযোগ করেছেন । ওই সময় সাবেক উপাচার্য মহোদয় আমার উপরে ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন কারণ সকলে যখন আমার প্রশংসা করছিল তিনি তা সহ্য করতে পারেননি। এ কারণে তার সৃষ্ট কতিপয় লোক কিভাবে আমি ফার্মাসি ডিপার্টমেন্টকে এইচপিএলসি (HPLC) ক্রয় করে দিয়েছিলাম সে বিষয়ে না জেনে না বুঝেই আমার সমালোচনা করছিল। অথচ এই ইনস্ট্রুমেন্ট ফার্মাসি ডিপার্টমেন্টের একটি অত্যন্ত জরুরী যন্ত্র যাহা আমরা বিশেষ করে ফার্মাসিটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহার করতে দেখি। এ ছাড়াও কেমিস্ট্রি, বায়োকেমিস্ট্রি, অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি বিভাগের গবেষণা কাজে যন্ত্রটি বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। সুতরাং সমালোচকরা যা কিছুই বলুক না কেন আমি একজন গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার হিসেবে সঠিক কাজ করেছি বলে মনে করি।
প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নানা আয়োজনে আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে ৯৬ লক্ষ টাকার জামানাত আপনি ঠিকাদারদের সাথে ভাগ বাটোয়ারা করেছেন। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?
অধ্যাপক ডঃ মো: আসাদুজ্জামান: অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমার মনে হয়, যারা এই অভিযোগ করেছে সৃষ্টিকর্তা তাদের মানবিক গুণাবলী দিয়ে সৃষ্টি করেননি। না হলে এ ধরনের মিথ্যা কথা বলতে পারতেন না। ৯৬ লক্ষ টাকা নয় মাত্র ৯৬ পয়সার জামানাতের কিংবা অন্য কোন উৎস থেকে ভাগ বাটোয়ারা যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে তাহলে রাষ্ট্র যে ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেয়া দরকার সেটা আমি মাথা পেতে নিব। কিন্তু কেউ যদি তা না পারেন তাহলে তাকে চাকুরিচ্যুত এবং যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।
প্রশ্ন: সরকারি দপ্তরগুলোতে দেখা যায় অযথাই অর্থের অপচয় করা হয়। আপনি কোষাধ্যক্ষ হিসেবে এমন কিছু কি দেখেছেন? দেখে থাকলে বন্ধ করার চেষ্টা করেছেন?
অধ্যাপক ডঃ মো: আসাদুজ্জামান: দেখুন আমি তো কারো ব্যক্তিগত শত্রু হতে পারি না। এখানে এসেছিলাম রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে। যেখানে যেখানে অসামঞ্জস্যতা দেখেছি কিংবা পেয়েছি তাদেরকে শুধরিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করেছি মাত্র। যেমন অধ্যাপক আবু তাহের সাহেব আমার শুরুর দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ছিলেন তখন তাকে আমি তার কৃতকর্মের জন্য বেশ কয়েকবার তার অফিস থেকে বের হতে বলেছিলাম। কারণ আমার কাছে অভিযোগ এসেছিল তিনি তার কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারি ফোন ব্যবহার করে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করছিলেন। অন্যদিকে তৎকালীন সময়ে তিনি ছিলেন বেপরোয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছায়া ভিসি। তার আক্রোশের শিকার অনেক শিক্ষকের প্রমোশন কিংবা আপগ্রেডেশনে বাধা দেওয়ার বিরোধিতা করায় তিনি অসন্তুষ্ট হতে পারেন। অন্যদিকে পদার্থ বিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান ডঃ জুলহাস মিয়া আমার দায়িত্বের দ্বিতীয় বর্ষ চলাকালীন সময়ে ২৫ লক্ষ টাকা দামের একটি সাইন্টিফিক ইন্সট্রুমেন্ট ক্রয় করেছিলেন। পরের অর্থবছরেই একই ইন্সট্রুমেন্ট ক্রয় করার চাহিদা আমার দৃষ্টিগোচর হলে আমি বন্ধ করে দেই এবং জানতে চাই পূর্বের যন্ত্রটি কোথায় কি অবস্থায় রয়েছে, তিনি তার কোন সদুত্তর দেননি। কোন একদিন মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. এফ এম আব্দুল মঈন স্যারের সাথে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে সারপ্রাইজ ভিজিটে যাই। তখন আমি জানতে চাইলে দেখতে পাই যন্ত্রটি নষ্ট এবং একটি স্টিল আলমারিতে রক্ষিত আছে। যন্ত্রটির এমন অবস্থা কেন জানতে চাইলে তিনি উনার সঠিক উত্তর দিতে পারেননি এবং কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সহায়তা নেননি এর কোন জবাব দেননি। জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে ক্রয়কৃত যন্ত্র এক বছরের মধ্যেই নষ্ট হওয়া এবং কেন তার ট্রাবল শুটিং করা হলো না এটা আজও আমার বোধগম্য নয় । এ ধরনের কাজগুলো সুস্পষ্টভাবে মনিটরিং করার কারণে তাদের অনেকেই আমার প্রতি বিরক্ত। কিন্তু আমি যে দায়িত্বে এসেছি তার তো কোন অবহেলা করা যাবে না।