বাবার ইচ্ছা পূরণে নবীর জীবনী রচনা

আবু সুফিয়ান রাসেল।।
সিরাত বলতে নবী জীবনীকে বুঝায়। প্রতিটি মানুষের উচিত মহামানবদের জীবন পাঠ। তেমনি এক মহামানব মোহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যিনি গোটা আরব সমাজকে মাত্র ২৩ বছরে আলোর পথে নিয়ে এসেছেন। আরবা জীবন্ত কন্যা শিশু মাটিতে পুঁতে ফেলা, ভাই-বোনে বিয়ে, মাকে বিবাহ, পণ্যের দামে মানুষ ক্রয়-বিক্রয়, দেব-বেদীর পূজা, মানুষ হত্যা, লুটতরাজসহ বিভিন্ন অপরাধ কাজে যুক্ত ছিলেন। অন্ধকার যুগের এসব মানুষরা পাল্টে গিয়েছেন একজন মানুষের কথা শুনে। তিনি ইসলাম ধর্মের নবী মোহাম্মদ।

বই পরিচিতি: মুহাম্মদ (সা.) এর জীবন ও মানবিক গুণ।
লেখক: এহ্তেশাম হায়দার চৌধুরী।
দাম: ৩৫০ টাকা
প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি-২০২৩
মোট পাতা সংখ্যা: ২৮৮
লেখক পরিচিতি: এহ্তেশাম হায়দার চৌধুরী। ১৯৫৪ সালে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে জন্ম গ্রহণ করেন। বাংলা সাহিত্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনেও তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক ছিলেন। সর্বশেষ তিনি নিমসার হাজী জুনাব আলী ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ, পরে ক্যামব্রিয়ান কলেজের অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
সার সংক্ষেপ: মোহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিব। ৫৭০ বা ৫৭১ সালে তিনি জন্ম লাভ করেন। সেকালের আরবের ভৌগলিক অবস্থা, অর্থনীতি, ব্যবসা, অন্ধকার যুগ, গোত্র শাসনসহ প্রতিটি বিষয়ের আলোচনা আছে এ গ্রন্থে। নবজাতক নিয়ে কাবাঘর তাওয়াফ করেন দাদা আব্দুল মুত্তালিব। এ গ্রন্থে আমার জন্য তথ্যটি নতুন। একাধিকবার নবীর বক্ষ বিদারণ, পাদ্রীর ভষিৎবাণী, শিশু থেকে যুবক মোহাম্মদ। ২৫ বছর বয়সে খাদিজা (রা.) কে বিবাহ, সামাজিক কাজে নেতৃত্ব প্রদান, সন্তান লাভ, ব্যবসায় সাফল্যসহ নানা বিষয়ে আলোকপাত হয়েছে। ৪০ বছর বয়সে তিনি নবুয়ত লাভ করেন। হেরা পর্বতের গুহাতে সূরা আ’লাকের প্রথম পাঁচ আয়াত পাঠ করে শুনালেন ফেরেস্তা জিবরাইল (আ.)। পরপর সূরা মুদ্দাছিরে ঘোষণা আসে- হে চাদর পরিহিত! মানুষকে আল্লাহর ভয় দেখাও। প্রভুর মাহাত্ম্যকথা জানাও। ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে বহুমূখী বাধার শিকার হন। প্রায় তিন বছর গোপনে বন্ধু, স্বজনদের নিকট ইসলাম প্রচার করেন। আল্লাহর আদেশে আবার প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু হয়। শুরু হয় নবীজী ও তার অনুসারীদের উপর নির্যাতন। হিজরত করেন আবিসিনিয়াতে। ৬২২ সালে হয়রত হামজা ও ওমর রা. ইসলামে প্রবেশ করেন। মুসলিমরা শক্তিশালী হয়। দাওয়াতি কাজে গতি বাড়ে। নবীজীর মদিনা গমন, মসজিদ তৈরি, আজানের আদেশ, মদিনা সনদের ঘোষণা দিলেন। মোহাম্মদ সা. কে সবাই মদিনার রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে মেনে নিলেন। অষ্টম হিজরিতে হুদাইবিয়া সন্ধি হলো। মুসলিমরা আরো শক্তিশালী হলেন। দু’বছরেও কম সময়ে কোন রক্তপাতহীন মক্কা বিজয় করলেন। ১০ হাজার সৈনিক মক্কায় প্রবেশ করলেন। তিনি ঘোষণা দিলেন যারা কাবা ঘর, আবু সুফিয়ানের ঘর ও নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করবে তারা নিরাপদ।
কাউকে প্রতিশোধ না নিয়ে, একটি বৃক্ষও নিধন না করে মক্কা জয় করেন। পরের বছর লক্ষ লক্ষ মানুষের সামনে বিদায়ী ভাষণ দিলেন। এক লক্ষ ৪০ হাজার সাথীদের নিয়ে হজ্ব পালন করলেন। এর পর ১২ রবিউল আওয়াল ছিলো পৃথিবীতে তার শেষ দিন। এছাড়াও রাসূল সা. ও সাহাবীদের মানবিকগুণের কথা বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এ গ্রন্থে।
পাঠ প্রতিক্রিয়া : সহজ শব্দে রচিত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবন ও মানবিক গুণ। বাংলা দেখে দেখে পড়তে পারেন এমন যে কোন মানুষের জন্য এ বইটি। যেমনটি মোহাম্মদ মিয়া রচিত তারিখুল ইসলাম স্কুল পড়ুয়া কিশোরদের নিকট খুব জনপ্রিয়।
নতুনত্বে রয়েছে প্রতিটি শিরোনামে লেখক ছন্দ মিল রেখেছেন। সুবিন্যস্ত সূচিপত্রের কারণে পাঠক মনে ইতিহাসের সন, হিজরতের ধারাবাহিকতা মনে রাখতে সহজ হবে। পুরো বইতে একটি বিষয় আমার খুব ভালো লেগেছে, গুরুত্বপূর্ণ সকল অংশ কালো কালিতে বোল্ড করেছেন। তবে কিছু কিছু শব্দের বানানের প্রতি যত্নবান হলে তরুণ মনে আরো ভালো লাগতো। এ লেখকের প্রতি নেক দোয়া ও ভালোবাসা বেড়েছে রেফারেন্সের কারণে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের নম্বর তিনি উল্লেখ করেছেন।
পরিশিষ্টাংশ অধ্যায়ের বিষয়গুলো প্রতিটি মুসলিমের জানা ফরজ। যে সকল গ্রন্থ থেকে তথ্য নিয়েছেন লেখক তা উল্লেখ করলে ভালো হতো। তবে সিরাত ইবনে হিশাম, আর রাহিকুল মাখতুম ও শামায়েলে তিরমিযী মোদ্দাকথা লেখক তথ্যবহুল ভাবে গ্রন্থে এনেছেন। পরিভাষাগত বিষয়েও তিনি স্কুল, কলেজে পড়ুয়া পাঠকদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন।