বাল্লা স্থলবন্দরে বাণিজ্যে নতুন দিনের হাতছানি

 

মোঃ হাসান আলী, চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) :

শিগগির চালু হতে যাচ্ছে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী বাল্লা কেদারা কোর্ট নামক স্থানে অবস্থিত দেশের ২৩তম স্থলবন্দর বাল্লা। এরই মধ্যে সমাপ্ত হয়েছে বন্দর আধুনিকায়নের মূল কাজ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্দরটি চালু হলে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন অধ্যয়ের সূচনা হবে।
১৯৫১ সালে ৪ দশমিক ৩৭ একর জমির ওপর প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় বাল্লা স্থলবন্দর। এর পর থেকে এ বন্দর দিয়ে খোয়াই নদী হয়ে ভারতের সঙ্গে গড়ে ওঠে বাণিজ্যিক সম্পর্ক। প্রতিষ্ঠার প্রায় ৭১ বছর পর স্থলবন্দরটি আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয় বর্তমান সরকার। এ লক্ষ্যে আগের স্থান থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার পশ্চিমে চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের কেদারাকোট মৌজায় ১৩ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। এর পর সেখানে শুরু হয় নতুন করে স্থলবন্দর নির্মাণের কাজ। এরই মধ্যে সীমানা প্রাচীর, ইমিগ্রেশন, কাস্টমস, গোডাউন, ইন গেট, আউট গেট, শেড, ব্যারাক, আবাসিক এলাকা, ইয়ার্ডসহ ৮৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বন্দরের। পর্যায়ক্রমে ডকইয়ার্ড, ওয়্যার হাউস, মেজরমেন্ট স্কেল স্থাপন, ব্যাংক, বীমা, মানি চেঞ্জারসহ অন্যন্য স্থাপনাও নির্মিত হবে বন্দর জোনে।
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়মুড়া অংশে নির্মাণকাজ শুরু না হওয়ায় স্থলবন্দরটি যথাসময়ে চালু নিয়ে শঙ্কা থাকলেও কর্তৃপক্ষ বলছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্থলবন্দরটি চালু করতে সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। উভয় দেশের প্রয়োজনীয় স্থাপনাগুলো সমানতালে এগিয়ে গেলে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যেই বন্দর চালুর ব্যাপারে আশাবাদী তারা।
ভারতীয় অংশের নির্মাণকাজ এখনও শুরু না হওয়ায় যথাসময়ে স্থলবন্দরটি চালুর ব্যাপারে শঙ্কা রয়েছে। স্থলবন্দরের চারদেয়ালের ভেতরে এখনও বসবাস করছে আটটি পরিবার। বাসিন্দারা বলছেন, তারা ক্ষতিপূরণ পাননি তাই বসতভিটা ছাড়ছেন না। এ অবস্থায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাসিন্দারের ঘরবাড়ি রেখেই নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
বন্দর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ডন ইন্টারন্যাশনাল ও সনিক্স এন্টারপ্রাইজ নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বন্দরের উন্নয়নে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সনিক্স এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আব্দুর রাজ্জাক জানান, এটা দেশ এবং তাঁর জন্য একটি স্বপ্নের প্রকল্প। গুণগত মান ঠিক রেখে শিডিউল অনুযায়ী যথাসময়ে বন্দর উন্নয়নের কাজ শেষ করা হবে।
প্রজেক্ট ডাইরেক্টর (পিডি) আমিনুল ইসলাম জানান, নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এখন পর্যন্ত কাজে কোনো ধরনের ত্রুটি পাওয়া যায়নি। প্রজেক্টের কাজ প্রায় শেষ। ভেতরের কিছুটা কাজ বাকি শুধু। ডিসেম্বরের মধ্যে সেটাও শেষ হয়ে যাবে। স্থলবন্দরের আধুনিকায়নে আনন্দিত স্থানীয় মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। সেখানকার বাসিন্দারা বলছেন, এর মাধ্যে কর্মসংস্থান ও মানবসম্পদ উন্নয়নে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে এই অঞ্চলে।
বাল্লা স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, ব্যবসায়ীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বন্দরের কাজ চালু হওয়ার। বর্তমান স্থান দিয়ে আমদানি-রপ্তানিতে ব্যয় বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা লাভবান হতে পারছেন না। তার পরও নদীতে নৌকা দিয়ে মালপত্র আনা-নেওয়া চলছে।
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের খোয়াই জেলার বাসিন্দা সুজন আহমেদ জানান, বন্দরটি চালু হলে শুধু পণ্য আনা-নেওয়ার কাজই হবে না– এই বন্দর দিয়ে প্রচুর লোকজন আসা-যাওয়া করবে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক উন্নয়নে এই বন্দর বিশাল ভূমিকা রাখবে।
বাল্লা স্থলবন্দর চালু হলে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নতিকরণে বন্ধ হয়ে যাওয়া শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা রেল যোগাযোগ আবার চালুর কথা জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। এ ছাড়া চুনারুঘাট থেকে বাল্লা স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্ত ও উন্নত করার কাজ করার কথা জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
চুনারুঘাটের ইউএনও সিদ্ধার্থ ভৌমিক জানান, বন্দরের কাজ প্রায় শেষ প্রান্তে। এখানকার মানুষ এক অনন্য ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে শিগগিরই।
গাজীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জানান, চুনারুঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় স্থলবন্দর চালু হলে সারা বাংলার মধ্যে কর্মস্থলের স্থান হিসেবে খ্যাতি লাভ করবে। এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থারও উন্নয়ন ঘটবে।
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক দেবী চন্দ বলেন, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা জেলা প্রশাসন বরাবর প্রদান করেছে। বৈধ কাগজ নিয়ে এলেই ভুক্তভোগীদের টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হবে।