আখাউড়ায় নির্ধারিত সময়ে অফিস করেন না কর্মকর্তারা
মো.ফজলে রাব্বি,আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)।।
সোমবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাঃ তানিয়া তাবাসসুমের অফিসের দরজায় তালা দেখা যায়। অফিসের এসএম জামাল হোসেন বলেন,স্যার বাসায় আছেন। ৯টা ৩০ মিনিটে উপজেলা মৎস্য অফিস গিয়ে দেখা যায় একটি কক্ষে মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রেজাউল করিম বসে আছেন। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রওনক জাহান তখনও অফিসে আসেননি।
সকাল ৯টা ৫৫ মিনিট উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসারের কক্ষটি খোলা, তবে তিনি এখনও অফিসে আসেননি। অফিসের একজন কর্মচারী এসে বললেন স্যাররা এখনও আসেননি। সকাল ১০ টা ১০ মিনিটেও অফিসে আসেননি সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রশান্ত চক্রবর্তী।
এমন দৃশ্য প্রায় প্রতিদিনই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার অধিকাংশ সরকারি অফিসের। এখানে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সরকার নির্ধারিত সময় মেনে অফিসে আসেন না। কেউ কেউ আবার অফিস ছুটির নির্ধারিত সময়ের আগেই অফিস ত্যাগ করে চলে যান। এতে বিভিন্ন সরকারি অফিসে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসটি উপজেলা পরিষদের তৃতীয় তলায়। সকাল ১০টা ১০ মিনিটে গিয়ে দেখা যায় উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো.লুৎফর রহমানের কক্ষের চেয়ার ফাঁকা। তখনও তিনি অফিসে আসেননি। তবে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মো.আজিজুর রহমানকে বসে কম্পিউটারে কাজ করতে দেখা যায়।
সকাল ১০টা পর্যন্ত উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তাপস কুমার চক্রবর্তী অফিসে আসেননি। অফিসের এক কর্মচারী জানান, স্যার এখনও আসেননি। এসবের মধ্যে ব্যতিক্রমও আছে। সকাল ১০ টা ১০ মিনিটেও উপজেলা সমবায় অফিসার দুবরাজ রবিদাস অফিসে না আসলেও অফিসের অফিস সহায়ক হানিফ খাদেম সকাল ৯টায় অফিস খুলে টেবিল-চেয়ার পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে অফিসের বারান্দায় হাটা-চলা করছেন। তিনি বলেন,আমি সকাল ৯ টায় অফিসে চলে আসি।
সকাল পৌনে দশটা পর্যন্ত উপজেলা প্রকৌশলীর অফিসে গিয়ে দেখা যায় উপজেলা প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম তখনও অফিসে আসেননি। এসময় অফিসের ইলেকট্রিশিয়ান আবুল হোসেন বলেন, মনে হয় স্যার একটি কাজের সাইটে আছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই অফিসে আসবেন। সকাল পৌনে ১০ টায় উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে গিয়ে দেখা যায় একজন আয়া অফিস ঝাড়– দিচ্ছেন। আয়া বলেন, আতাউর স্যার (হিসাব রক্ষক) এসে কোথায় যেন গেছে। বড় স্যার (মহিলা বিষয়ক অফিসার রওনক ফারজানা রুবা) কসবা থেকে সপ্তাহে ১ দিন আসেন। আখাউড়া তার অতিরিক্ত দায়িত্ব।
সকাল ১০টায়ও অফিসে আসেননি উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার সাইমুন ইমতিয়াজ। সকাল পৌনে ১০টায়ও তালা ঝুলছে উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার মোসলেহ উদ্দিন আহম্মদ এর কক্ষে। অভিযোগ রয়েছে তিনি প্রতিদিনই সকাল সাড়ে ১০ টার আগে অফিসে আসেন না। আবার দুপুর ১ টায় ট্রেনে করে চলে যান। সকাল ১০টায় গিয়ে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অফিসের প্রধান ফটকে তালা ঝুলতে দেখা যায়।
আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সকাল ৯টা থেকে ৯টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত অফিস কক্ষে থাকা বাধ্যতামূলক।
তবে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ অফিসে নির্ধারিত সময়ে কর্মকর্তারা আসেন না। ৯টায় অফিসে আসার বাধ্যবাধকতা থাকলেও বেশির ভাগই পৌনে ১০টা থেকে সাড়ে ১০ টার মধ্যে আসেন। এ সুযোগ নিয়ে অধস্তন কর্মচারীরাও নির্ধারিত সময়ে অফিসে আসছেন না।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার অংগ্যজাই মারমা বলেন, উপজেলা পরিষদের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সরকার নির্ধারিত সময় মেনে অফিস করার নির্দেশ দেওয়া আছে। সবাইকে এই নির্দেশ মেনে চলা উচিত। কেউ এই নির্দেশনা অমান্য করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন,আখাউড়ার সাথে রেল যোগাযোগ ভালো হওয়াই অনেক অফিসার ট্রেনে আসেন, তাই একটু লেইট হয়ে থাকে। আগামী মাসিক সমন্বয় সভায় এ ব্যপারে আবারও তাগিদ দেওয়া হবে।