বিএনপির মামলার আসামি হয়ে বৃটিশ নাগরিক কারাগারে!

 

বাদী কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ

অফিস রিপোর্টার।।
কুমিল্লায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুলিশ। ওই মামলায় এক বৃটিশ নাগরিককে আসামি করা হয়েছে। পরদিন তাকে গ্রেফতারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ওই বৃটিশ নাগরিকের পরিবারের দাবি তিনি বাংলাদেশের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নন।
পরিবার সূত্র জানায়,বৃটিশ ওই নাগরিক লন্ডনের ম্যানচেস্টার শহরের ডিউজবার্গ এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইলিয়াস মুকিত (৪২)। তিনি জন্মসূত্রে বৃটিশ নাগরিক। তার বাবা বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার আদর্শ সদর উপজেলার মনোহরপুর এলাকার বাসিন্দা মো. আব্দুল মুকিত।
জানা গেছে, ২৯ অক্টোবর বিএনপি, জামায়াতসহ সমমনা রাজনৈতিক দল গুলোর ডাকা হরতালের দিন কুমিল্লার চকবাজারে বিএনপি নেতাদের মিছিলে ধাওয়া দেয় পুলিশ। এসময় সংঘর্ষ শুরু হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ৩০ জনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এঘটনায় বিএনপি নেতাদের নামের সঙ্গে নিজ বাসায় অবস্থান করা ওই বৃটিশ নাগরিকের নামও যুক্ত করা হয়।


মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মামলার সর্বশেষ ৩০নম্বরের নামীয় আসামি মোহাম্মদ ইলিয়াস মুকিত। ওই মামলার বাদী কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই জীবন কৃষ্ণ মজুমদার। মামলার নথিতে স্বাক্ষর করেন কোতয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ রকিবুল ইসলাম ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহাম্মদ সনজুর মোরশেদ।
মোহাম্মদ ইলিয়াস মুকিতের স্ত্রীর বড় ভাই আবদুল গফফার রুবায়েত বলেন, আমরা সম্পর্কে খালাতো ভাইও। উনি জন্মসূত্রে বৃটিশ নাগরিক। করোনার আগে উনি বাংলাদেশে আসেন। স্ত্রীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাগজপত্র রেডি করছিলেন। তাই উনার দেরি হচ্ছিল। ২০২৭ সাল পর্যন্ত উনার ভিসার মেয়াদ আছে। উনি বাংলা কথাও ঠিক মতো বলতে পারেন না। বাংলাদেশের রাজনীতির সম্পর্কে তার কোন ধারণা নেই। যেদিন এ ঘটনা সেদিন উনি বাসায়। নিজের চুলকাটার নাপিতও বাসায় নিয়ে আসেন। কোনদিন শপিং করতেও যান না। উনি বাইরে গেলে আরেকজন সাথে যাওয়া লাগে। অথচ উনাকে মামলার আসামি করা হয়েছে। এই বিষয়ে পরিবার থানায় যোগাযোগ করেছে। পুলিশের অফিসার নাকি দুঃখপ্রকাশ করেছে।
তাকে মামলার আসামি করার বিষয়ে তিনি বলেন,এক স্বজনের সাথে সম্পত্তির ভাগ নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এনিয়ে তাকে আসামি করা হতে পারে।


এবিষয়ে মামলার বাদী এসআই জীবন কৃষ্ণ মজুমদার বলেন, অনেক সিনিয়র অফিসারের উপস্থিতিতে এটা করা হয়েছে। আমিতো ক্ষুদ্র একজন অফিসার। উনি ঘটনাস্থলে ছিলেন তাই নাম লেখা হয়েছে। উনি কোর্টে জবাব দেবেন উনি বৃটিশ নাগরিক।
মামলার ৭নং আসামি মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন,৩০নং আসামি  মোহাম্মদ ইলিয়াস মুকিত বিএনপির কেউ নয়, আমরা তাকে চিনি না।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ ইলিয়াস মুকিতের  আইনজীবী মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, গত ২৯  অক্টোবরের ঘটনার পরদিন আমার মক্কেল ইলিয়াস মুকিতকে পুলিশ তার বর্তমান বাসা থেকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারের সময় তার কাছ কোন হামলার প্রমাণ বা ঘটনাস্থলে যাওয়ার প্রমাণ পায়নি। এমন কি ঘটনাস্থলে তিনি ছিলেন না। পুলিশ মামলা দেয়ার পর তাকে বাসা থেকে গ্রেফতার করেছে। অন্যান্য আসামির বিরুদ্ধে রিমান্ড প্রাথর্না হলেও এ আসামির কোন রিমান্ড চাওয়া হয়নি,হয়তো আসামি ঘটনার সহিত সম্পৃক্ততা নেই বলে। আমরা বিচারকের কাছে অন্তবর্তীকালীন জামিন আবেদন করেছি এবং সকল কাগজপত্র জমা দিয়েছি। জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে। এদিকে বৃটিশ হাই কমিশন থেকে আমার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেছে। এবিষয়টা তাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। তাদের নাগরিকের যত সহযোগিতা দরকার তারা প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছে।
এবিষয়ে কুমিল্লা কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহাম্মদ সনজুর মোরশেদ বলেন, কে বলছে উনি বৃটিশ নাগরিক। উনিতো দেশেই থাকেন, দেশেই শিক্ষকতা করেন। আপনি যেহেতু জানছেন আমার এটা জেনে বলতে হবে।