বিজয়নগরে বাড়ছে কুল চাষ

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
 ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় চাষিদের মাঝে বিভিন্ন জাতের কুল আবাদ বাড়ছে। ক্রমেই বাণিজ্যিকভাবেও কুল আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে এই উপজেলায়। চলতি মৌসুমে আবাদকৃত ৪০ হেক্টর জমি থেকে পাঁচ শতাধিক মেট্রিকটন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ফলন ভালো হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবার প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রকাশ, কুল একটি স্বল্পমেয়াদী অধিক পুস্টি সমৃদ্ধ ফল। বছরের যে কোনো সময়েই কুলের আবাদ করা যায়। তবে বর্ষা মৌসুমটি হচ্ছে কুল’র চারা লাগানোর উৎকৃষ্ট সময়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তঘেঁষা পাহাড়ি অঞ্চল বিজয়নগর উপজেলার লাল রঙের মাটি এবং এখানকার আবহাওয়া বিভিন্ন জাতের ফল চাষের জন্য উপযোগী।  কুল একটি স্বল্পমেয়াদী ও লাভজনক ফল হওয়ায় দিনদিন কুলের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে এই উপজেলায়। চলতি বছর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় ৪০ হেক্টর জমিতে বল সুন্দরী, ভারত সুন্দরী, আপেল কুল এবং স্থানীয় বিভিন্ন জাতের কুলের আবাদ হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের তদারকি, চাষীদেরকে সঠিক সময়ে সঠিক পরামর্শ প্রদান, সর্বোপরি চাষিদের আন্তরিকতায় এবছর ফলনও হয়েছে বেশ আশাব্যাঞ্জক। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার কুল বিক্রয় বাবদ কৃষকরা সাড়ে তিন কোটিরও অধিক টাকা আয় হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের দুলালপুর গ্রামের কৃষক সোহাগ মিয়া জানান, বিগত ২০২১ সালে তিনি প্রথম কুল আবাদ শুরু করেন। স্থানীয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা নুরে আলমের পরামর্শক্রমে তিনি দুই বিঘা জমিতে ২০০টি বল সুন্দরী জাতের  চারা রোপণের মাধ্যমে কুল আবাদ শুরু করেন। এর ঠিক ছয় মাস পরেই প্রথম ফলন আসে। উৎপাদিত কুল বিক্রি করে এক লাখ টাকা আয় করেন। দ্বিতীয় বছর আয় হয় দেড় লাখ টাকা। চলতি বছর কুল বিক্রি বাবদ আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা আয় করতে পারবেন বলে তিনিজানান।
দুলালপুরের কুল চাষি সোহাগ মিয়া আরো জানান, ‘উপ-সহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরে আলম বিভিন্ন সময়ে আমার বাগান পরিদর্শন করে কুলের আবাদ, পরিচর্যা, রোগবালাই দমন সম্পর্কে আমাকে পরামর্শ দিয়ে আসছেন।’
উপজেলা উপ-সহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরে আলম জানান আমাদের দেশে কুল ঐতিহ্যবাহী একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌসুমী ফল। স্বাদ-পুষ্টিমান বিচারে কুল উৎকৃষ্টমানের একটি ফল। বিশেষ করে ভিটামিন সি’র দিক থেকে আমলকি ও পেয়ারার পরেই এটির স্থান। মানবদেহে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন খনিজ দ্রব্য ও ভিটামিন-এ এবং সি’র সহজ স্বল্প মূল্যের উৎস হচ্ছে কুল। বছরের যে কোনো সময় কুলের আবাদ করা যায়। তবে বর্ষা মৌসুমই কুল’র চারা লাগানোর মোক্ষম সময়। বিজয়নগর উপজেলা লাল মাটি এবং এখানকার আবহাওয়া কুল চাষের জন্য বেশ উপযোগী। ফলে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে কুল আবাদ।
স্থানীয় দুলালপুর গ্রামের সফল কুলচাষি সোহাগ মিয়ার বাগান দেখে স্থানীয় অনেকেই এখন কুল চাষে হয়ে ওঠছেন দারুণ আগ্রহী। কুল ফলে সাধারণ ফল ছিদ্রকারী পোকা, মাকড়, পাউডারী মিলডিউ, এনথ্রাকনোজ, সুটিমোল্ড’র আক্রমণ হয়ে থাকে। এসকল পোকার আক্রমণ এবং রোগবালাই দমনের বিষয়ে নিয়মিত বাগান পরিদর্শন করে কুল চাষীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসছি। এতে কৃষকরা অধিকতর আশান্বিত হচ্ছেন।’
বিজয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ জানান, ‘বিজয়নগর উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া ফল চাষের উপযোগী হওয়ায় এবং কুল স্বল্পমেয়াদী ও লাভজনক ফল হওয়ায় দিন দিন এর আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি বছর এই উপজেলায় বল সুন্দরী, ভারত সুন্দরী, আপেল কুল এবং স্থানীয় জাতের মোট ৪০ হেক্টর জমিতে কুলের আবাদ হয়েছে। প্রায় ৫১৩ মেট্রিকটন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে যা বিক্রি বাবদ কৃষকদের প্রায় তিন কোটি ৫৯ লাখ ১০ হাজার টাকা আয় হবে বলে আমরা আশাবাদী।’