বিজয়নগরে সংঘর্ষে পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত

 হামলা-ভাঙচুর, ৩৩ জন আটক
এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।
বহুমাত্রিক বিরোধের জেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছে।সংঘর্ষ চলাকালে অনেক বাড়িঘরে চলে হামলা-ভাঙচুর-লুটপাট। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জ করাসহ রাবার বুলেট ছোঁড়ে এবং আটক করে ৩৩ জনকে। পরবর্তী সংঘাত এড়াতে এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর নাগাদ জেলার বিজয়নগর উপজেলার হরষপুর ইউনিয়নের বুল্লা গ্রামে নোয়াব আলীর গোষ্ঠির সাথে কাউসার মেম্বারের লোকদের মধ্যে ঘটে এই সংঘর্ষ, যাতে আরো সাত গোষ্ঠির মানুষ এই সংঘর্ষে জড়ায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় এলাকাবাসী এবং পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিগত ইউপি নির্বাচন পরবর্তী বিরোধ নিয়ে স্থানীয় নোয়াব আলী গোষ্ঠীর সাথে কাউসার মেম্বারের গোষ্ঠি, হাজী গোষ্ঠি, মাইঝগাঁও গোষ্ঠিসহ অন্তত সাতটি গোষ্ঠীর বিরোধ চলমান। এরই মাঝে গত ছ’মাস আগে কাউসার মেম্বারের মেয়ে নোয়াব আলী গোষ্ঠির আব্দুল আহাদের ছেলে মহসীনের সাথে পালিয়ে যায়।এই নিয়ে তাদের মধ্যে আবারো নতুন করে বিরোধ দেখা দেয়। এরই জের ধরে বুধবার সকাল সাতটার দিকে উভয় গোষ্ঠীর লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় কাউসার মেম্বার গোষ্ঠীর পক্ষে হাজী গোষ্ঠি, মাইঝগাঁও গোষ্ঠিসহ অন্তত সাতটি গোষ্ঠি সংঘর্ষে জড়িয়ে যায়। খবর পেয়ে বিজয়নগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ব্যাপক লাঠিপেটা করাসক চার রাউণ্ড রাবার বুলেট ছোঁড়ে দুপুরের দিকে পুরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। প্রায় দুপুর নাগাদ চলমান সংঘর্ষে পুলিশের তিন সদস্য সহ উভয় পক্ষের অন্তত অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়। তাদের মধ্যে মহিলাও আছেন।তাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এদিকে ঘটনার পর পুলিশ বুল্লা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে এবং হাসপাতাল থেকে আরো ২৩ জনসহ মোট ৩৩ জনকে আটক করে। সংঘর্ষকালে অন্তত দশটি বাগিঘরে ব্যাপক হামলা-ভাঙচুর-লুটপাট চালানো হয়।
আহতদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, কাউসার মেম্বার (৪২), মুখলেস মিয়া (২৯), মোহন মিয়া (২৫), জহুরুল হক (৩২), আব্দুল্লাহ মিয়া (২৫), ছোটন মিয়া (৫৫), মিলন মিয়া (২৩), রিপন মিয়া (২৯), জাকির হোসেন (২৮), রিপন মিয়া (২২), আব্বাস আলী (৪৫), তানভীর হোসেন (২২), আশু মিয়া (৪২), শফিকুল ইসলাম (৩২), রফিক মিয়া (৩৮), জসিম উদ্দিন (৩২), রিপন মিয়া (২৮), আবু লাল (৪০), কাউসার আলম (১৪), আবন মিয়া (৩০), জয়নাল আবেদীন (৪০), লুৎফুর রহমান (৩০), সাদেকুল ইসলাম (৪০), নাজমুল হক (২০), অহিদ মিয়া (৪০), তারেক আলী (২০), রামিত হোসেন (৩০), জসিম উদ্দিন (২০), সিরাজ মিয়া (৪৫), কুশনাহার বেগম (৪০), রাসেল মিয়া (১৪), নাসির উদ্দিন (৪৫), ফায়েজ মিয়া (৩০), বিল্লাল মিয়া (৩৫), আব্দুল্লাহ (২৭), আবু তাহের (৯০), মোশাররফ (৩০), সাকিব (১৮), মিলন মিয়া (২৮), মনা মিয়া (১৮), নাঈম মিয়া (১৫), আবদুল হাকিম (৩০), শামীম মিয়া (৩০), আবুল হোসেন (৩৫), মোজাম্মেল হক (২৫), মামুন মিয়া (৩৫), আজগর আলীকে (৪০)। 
বিজয়নগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) আরশাদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘মেয়ে সংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে তারা সংঘর্ষে বাধে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হয়। এলাকা থেকে ১০ জন এবং হাসপাতাল থেকে ২৩ জনসহ মোট ৩৩ জনকে আটক করা হয়েছে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. বিল্লাল হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘বুল্লা গ্রামের দু’টি পক্ষের বিরোধ দীর্ঘদিনের। বুধবারের সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ৩৩ জনকে আটক করে। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে পুলিশের তিন সদস্যও আহত হয়েছে। নতুন করে যেন সংঘর্ষ না হয় সেজন্য এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।’