বিজয়নগরে নিম্নমানের সামগ্রীতে হচ্ছে রাস্তা সংস্কার

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা। উপজেলা সদরের সাথে অন্তত চারটি ইউনিয়ন এলাকার সেতুবন্ধ স্থাপনকারী জনগুরুতাবপূর্ণ এই রাস্তা ১৭ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে হচ্ছে সংস্কার কাজ। আর এই কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে নিম্নমানের সামগ্রী! সরকারি নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে ঠিকাদার নিম্নমানের ইটের খোয়া ও পুরাতন পিচ দিয়ে কাজ করছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মাঝে সমালোচনার ঝড় ওঠে। স্থানীয়দের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ। এই চিত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা এলাকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের অধীনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক উপজেলার সিংগারবিল হতে হরষপুর ভায়া মির্জাপুর পর্যন্ত ১৯কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার করা হচ্ছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ কোটি ১০লাখ টাকা। কাজটি যৌথভাবে পেয়েছেন ‘মেসার্স মোস্তফা কামাল’ এবং ‘মাহাবুব ট্রেডার্স’ নামীয় দুই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। স্থানীয়রা জানান, মেরামত কাজে যেসব মালামাল ব্যবহৃত হচ্ছে সেগুলো আগের কাজের ব্যবহৃত মালামাল। আগের ব্যবহৃত ইট ও পিচ তুলে সেই মালামাল নতুন নিম্মমানের ইটের খোয়ার সঙ্গে মিশিয়ে কাজ করা হচ্ছে। আবার অনেক জায়গায় বালু না দিয়েই শুধু ইটের খোয়া ফেলেই কাজ করা হচ্ছে। আগের কাজের পিচ ও ইটের খোয়ার সঙ্গে ময়লা-আবর্জনাসহ রোলারের ব্যবহার সঠিক হয়নি বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সমাজসেবক আশরাফুল ভূইয়া সুমন জানান, ‘আমাদের এম.পি র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী উন্নত মানের কাজ হওয়ার জন্যই সরকার থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা বরাদ্দ এনেছেন। অথচ রাস্তায় কাজ হচ্ছে খুবই নিম্নমানের। আগের ব্যবহৃত পুরাতন রাস্তার পিচ ও ইটগুলো তুলে সেই ইটের খোয়া দিয়েই রোলার দিয়ে চাপিয়ে কাজ করা হচ্ছে। পুরাতন ইট হাতের আঙুল দিয়ে টিপ দিলেই গুঁড়া হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি এলে কিংবা কয়েকদিনের মধ্যে এমনিতেই এই রাস্তা আবার ভেঙে যাবে। রাস্তায় ইটের খোয়া ও বালুর পরিমাণেও নিয়ম মানা হচ্ছেনা। স্থানীয়জন প্রতিনিধি, প্রশাসন, সংশ্লিষ্টবিভাগ এ ব্যাপারে ভূমিকা নেওয়ার প্রয়োজন।’ বিজয়নগর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি এস.এম. মাহাবুব হোসাইন বলেন, ‘রাস্তাটি সংস্কারে যে পরিমাণ নিম্নমানের কাজ হচ্ছে, তা জীবনেও দেখিনি। বর্তমানে পুরাতন ইটের খোয়া, পুরাতন পিচ ও নতুন যে নিম্মমানের মালামাল দিচ্ছে তা কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তা আগের মতো হয়ে যাবে। আমার কাছে অনেকেই অভিযোগ দিয়েছে। রাস্তা নিম্নমানের কাজ হওয়া নিয়ে আমি নিজেও ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছি। আমি স্থানীয় চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপজেলা প্রকৌশলীকে অভিযোগ জানিয়েছি। এখনই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এই কাজের সঙ্গে জড়িতদের বিভাগীয় এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’
রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে ১২ দিন হলো, অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা মারুফ আহমেদ রনি মাত্র দুই দিন পরিদর্শন করেছেন বলে স্থানীয়রা জানান। কাজ তদারকি করছেন উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার অফিস। জানতে চাওয়া হলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা মারুফ আহম্মেদ রনি বলেন, ‘আপনি সাংবাদিক, উপজেলা প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগ করেন।’ মেসার্স মোস্তফা কামাল প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ দানা মিয়াকে নিম্মমানের কাজের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে কাজ ভালো হচ্ছে দাবী করে তিনি বলেন, ‘মানুষের অভিযোগ থাকতে পারে। আমরা বাঙালিদের কাজই হলো কেবল অভিযোগ দেওয়া।’
বিজয়নগর উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আনিছুর রহমান বলেন, ‘আমার কাছে অনেকেই অভিযোগ দিয়েছে। আমি গিয়ে দেখে আসছি ও বলে দিয়েছি যেনো ভালোভাবে কাজ করা হয়। রাস্তার কাজ যদি খারাপ হয় আমি বিল আটকে দেবো।’ বিজয়নগরউপজেলা চেয়ারম্যান নাছিমা মুকাই আলী বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে ও স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ দিয়েছে। রাস্তাটি গুরুত্বপূর্ণ আমি নিজে গিয়ে দেখে এম.পি মহোদয়কে জানাবো এবং উপজেলা প্রকৌশলীকে ভালভাবে তদারকি করার জন্য নির্দেশ দিব