বিরোধ নিষ্পত্তির সালিশে যুবক খুন

 

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।

পাওনা টাকা নিয়ে একই গ্রামের মলাই মিয়া ও শাহ আলমের মাঝে চলছিলো বিরোধ। এই বিরোধ নিষ্পত্তিতে স্থানীয় গণ্যমান্যদের নেতৃত্বে আহুত সালিশী সভাতেই শুরু হয় বাকবিতণ্ডা৷ এরই জেরে দুই পক্ষের মধ্যে শুরু হয় সংঘর্ষ। এতে দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে প্রাণ গেলো খাইরুল ইসলাম খোকনের এবং আহত হয় অপর ১০ জন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা এলাকার নারকীয় এই ঘটনার সাথে জড়িতের দায়ে ৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

রোববার (০৪ মে) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে নিহতের ময়না তদন্তের পর মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর কর হয়। এর আগে শনিবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের কোড্ডা গ্রামের মেহের আলী শাহ্ মাজারের সামনে চলমান সালিশী সভায় ঘটে নারকীয় এই ঘটনা। নিহত খাইরুল ইসলাম খোকন (৪০) কোড্ডা গ্রামের কোড়াবাড়ির আবু সাইদ মিয়ার পুত্র।

নিহতের পরিবার, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় এলাকাবাসী এবং পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের কোড্ডা গ্রামের মলাই মিয়ার জমিতে হাল চাষ করেন একই গ্রামের শাহ আলম। হাল চাষের পাওনা ৫০০ টাকা বাকি রাখেন মলাই মিয়া। এই টাকা চাওয়া নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই শাহ আলম ও মলাই মিয়ার মধ্যে বিরোধ চলছিলো। তাদের মধ্যকার বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে স্থানীয় গণ্যমান্যদের উদ্যোগে শনিবার রাত আটটার দিকে কোড্ডা গ্রামের মেহের আলী শাহ্ মাজারের সামনে বসে সালিশী সভা। সালিশ চলাকালেই তুচ্ছ কথা নিয়ে শুরু হয় বাকবিতণ্ডা। এরই এক পর্যায়ে মলাই মিয়া গ্রুপের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শাহ আলম গ্রুপের লোকদের উপর হামলা করে। এতে শাহ আলমের পক্ষের খায়রুল ইসলাম খোকনের গলায় বল্লম (দেশীয় অস্ত্র) বিদ্ধ হওয়াসহ ১০ জন আহত হয়। গুরুতর আহত খোকনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পার্শ্ববর্তী আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ঘটনাস্থল থেকে ৯ জনকে আটক করেন। অপরদিকে পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে রোববার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে ময়না তদন্ত সম্পন্নের পর নিহতের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে। আহত অন্যরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নারকীয় এই ঘটনায় নিহতের ভাই আকরাম বাদী হয় সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়েরের পর পুলিশ আটককৃত নয়জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে পাঠায় জেলহাজতে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) মুহাম্মদ এমরানুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ‘এই ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে ৯ জনকে আটক করা হয়েছে। নিহতের ভাই আকরাম বাদী হয়ে দায়ের করেছেন হত্যা মামলা। এর আগে আটককৃতদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে এবং ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টা চলমান।’