ব্রাহ্মণপাড়া ছাত্রলীগে বৈধ কারা?

মোহাম্মদ শরীফ।

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার এক ইউনিয়নে দেওয়া হয়েছে ছাত্রলীগের তিন কমিটি। গ্রুপিং রাজনীতির এমন পৃথক পৃথক কমিটি নিয়ে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলছে আলোচনা- সমালোচনা। শুধু ইউনিয়নে নয়, উপজেলায় রয়েছে ছাত্রলীগের দুটি কমিটি।

এক ইউনিয়নে তিন কমিটি ঘোষণার বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জানান, ‘উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক জাহিদুল ইসলাম পলাশ কোনো প্রকার সম্মেলন ছাড়া আট ইউনিয়নের কমিটি ঘোষণা করেন। কিছুদিন পর (৫ মে ২০২১) উপজেলা ছাত্রলীগের সিনিঃ যুগ্ম আহবায়ক ইমদাদুল হক বাপ্পী, যুগ্ম আহবায়ক কাইয়ুম খান চৌধুরী, আবু কাউছার দিপু, এনামুল হক এনাম ও আশিকুর রহমান মিলে নতুন ভাবে আবারও আট ইউনিয়নে কমিটি ঘোষণা করে। এরপর আনোয়ার হোসেন মিশনকে সভাপতি ও শরীফুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে উপজেলা কমিটির অনুমোদন দেয় কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ। এর কিছুদিন পরই আবু কাউছার দিপু সভাপতি ও এনামুল হক মনিকে সাধারণ সম্পাদক করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এড. আবদুল বারী উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করে।

জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী অনুমোদিত উপজেলা ছাত্রলীগ নতুন করে ইউনিয়ন কমিটি দিলে, এতে ইউনিয়নে কমিটি দাঁড়ায় তিনটিতে।
প্রশ্ন উঠেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির অনুমোদন দিতে পারে কি না?

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র ধারা ৬ এর (চ) অনুচ্ছেদ অনুসারে, ‘সংগঠনের স্বার্থে সভাপতি সাধারণ সম্পাদক এবং উর্ধ্বতন কমিটি অধঃস্তন যে কোনো কমিটি বাতিল করে সাংগঠনিক কমিটি গঠন করতে পারেন’।

তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্তৃক ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন নিয়ে চলছে সমালোচনা।

 

এদিকে উপজেলা ও ইউনিয়নে কমিটির সবাই নিজেদের বৈধ বলে দাবী করছেন। অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগও তুলেছেন উভয় পক্ষ।

উপজেলা আওয়ামী লীগ অনুমোদিত ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগ কমিটির সভাপতি আবু কাউছার দিপু বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কমিটিতে স্বাক্ষর করেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমাদের কমিটি উপজেলা আওয়ামী লীগ কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। তাই আমাদের উপজেলা কমিটি বৈধ’।

ইউনিয়ন কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ ইউনিয়ন গুলোতে যে কমিটি আছে সেই কমিটি গুলোর মধ্যে আমাদের গুলো বৈধ। এই কমিটি গুলো আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে আমরা দিয়েছি’।

দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ অনুমোদিত উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন ছাত্রলীগ দেয়, আওয়ামী লীগ নয়। উপজেলা আওয়ামী লীগ যে কমিটি দিছে তা অবৈধ ও ছাত্রলীগের গঠণতন্ত্র বিরোধী’।
ইউনিয়ন কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ ইউনিয়ন কমিটি গুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা যে কমিটি গুলোকে সমর্থন দিবো সেগুলোই বৈধ বলে বিবেচিত হবে। এটাই নিয়ম’।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী বলেন, ‘তারা (অপি গ্রুপ) অছাত্র, মাদকসেবী ও বিবাহিতদের নিয়ে একটি উপজেলা কমিটি দিয়েছে। অপি ও তার সর্মথকরা বিগত চারটি নির্বাচনে নৌকার বিরোধীতা করেছে। ছাত্রলীগ যদি আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হয়, তাহলে তারা (অপি গ্রুপ) নৌকার বিরোধীতা করে ছাত্রলীগ হয় কিভাবে?

 

আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন দিতে পারে কি-না? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার প্রায় দুই হাজার ছাত্রনেতা একত্রিত হয়ে একটি উপজেলা কমিটি করে। তারা বলে আমরা আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করবো। যেহেতু তারা বলেছে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করবে, তাই আমরা তাদের সমর্থন দিয়েছি’।

এই বিষয়ে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবু তৈয়ব অপি বলেন, জেলার বিভিন্ন ইউনিটের ছাত্রলীগের কমিটির দেয় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এখানে আওয়ামীলীগের কেউ কমিটি দিতে পারে না। এটাই সংগঠনের নিয়ম। আমরা নিয়ম অনুযায়ী কমিটি দিয়েছি। সেই কমিটির স্বীকৃতি দিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নিজস্ব ওয়েবসাইটে কমিটির তালিকা প্রকাশ করেছে।

এদিকে ব্রাহ্মনপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী বক্তব্যর বিষয়ে আবু তৈয়ব বলেন,  যারা ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থান পেয়েছে তাদের সবার বায়োডাটা আমাদের কাছে আছে। কেউ চাইলে আমরা দেখাতে পারবো। আমরা বলবো উপজেলা আওয়ামীলীগ যে কমিটি করেছে তাদের অনেকেই অস্ত্র মামলার আসামী । কেউবা বিবাহিত। প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র ভেঙ্গে তারা কমিটি দিয়েচে আমরা সেই কমিটির বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্ররীগের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। শীঘ্রই এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সিদ্ধান্ত নিবে।