ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চিকিৎসক দ্বন্দ্বে হাসপাতালে অচলাবস্থা : তদন্ত শুরু

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের সাথে আবাসিক চিকিৎসকদের বিরোধকে ঘিরে হাসপাতালে সৃষ্ট অচলাবস্থা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে দায়িত্ব বন্টনের দ্বন্ধ এবং দায়িত্বে অবহেলায় দুই চিকিৎসকের বেতন বন্ধ রাখার জেরে তত্ত্বাবধায়কের সাথে আবাসিক চিকিৎসকদের বিরোধের ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছেন চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ডা. মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের ৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল। মঙ্গলবার (০১ আগস্ট) সকালে তারা এই তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছেন।
inside post
জেলার একমাত্র প্রধান সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের দুই আবাসিক চিকিৎসক ডা. রানা নূরুস শামস্ ও ডা.ফাইজুর রহমান ফয়েজের বিরুদ্ধে সরকারি সেবা বন্ধ রেখে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এই অবস্থায় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করায় চলতি মাস থেকে অভিযুক্ত দুই চিকিৎসকের বেতন বন্ধ রাখার সুপারিশ করেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে  ডা. রানা নূরুস শামস্ ও ডা. ফাইজুর রহমান ফয়েজ তত্ত্বাবধায়ককে লাঞ্ছিত করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। সোমবার (৩১ জুলাই) সকালে চক্ষু বিভাগের চিকিৎসক ডা.ওবায়দুল হকসহ তিনজন চিকিৎসক হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে প্রবেশ করে সপ্তাহে তিন দিন বহি:র্বিভাগে রোগী দেখবেন এবং বাকি তিন দিন বৈকালিক সেবা দেবেন বলে জানান। কিন্তু বহি:র্বিভাগ বন্ধ থাকলে রোগীরা চিকিৎসক না পেয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করবেন বলে হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক জানালে ওই তিন চিকিৎসক তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এরই এক পর্যায়ে তারা কক্ষের দরজায় লাথি দিয়ে বের হয়ে যান। এসময় তারা কৌশলে হাসপাতালের সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে রাখেন। সকালের ঘটনার জেরে ডা. রানা নূরুস শামস্, ডা. ফাইজুর রহমান ফায়েজ এবং ডা. ওবায়দুল হক দ্বিতীয়বার তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে গিয়ে আবারও অসদাচরণ করাসহ তত্ত্বাবধায়কের কোনো নির্দেশনা মানবেন না বলেও জানান। উদ্বুত পরিস্থিতি বিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রানা নূরুস শামস বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, ‘যেহেতু আমার বিরুদ্ধে অহেতুক অভিযোগই তুলেছেন, সেহেতু আমি লিখিতভাবেই বিষয়টি জানাবো। অপর আবাসিক চিকিৎসক ডা. ফাইজুর রহমান অভিযোগ তুলে বলেন, ‘হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ওয়াহিদুজ্জামান সকল চিকিৎসকের সঙ্গেই দুর্ব্যবহার করেন। সেজন্য এখন থেকে কেউ তাঁর নির্দেশনা মানবেন না।’
সরকারি হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মিটিং করে অন্তত এক ঘণ্টা হাসপাতালে রোগী দেখা বন্ধ রাখায় দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ রোগীরা। তাছাড়া হাসপাতালের প্রশাসনিক কার্যক্রম কার্যত অচল করে রাখা হয়। এসব বিষয় গণমাধ্যমে প্রকাশের পর টনক নড়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ডা. মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৌঁছে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছেন। প্রতিনিধিদল হাসপাতালের চিকিৎসকদের সাথে বৈঠক করেন। আগামী সাত দিনের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে জানানো হয়। এদিকে তদন্ত কার্যক্রম চলার কারণে আজও (০১ আগস্ট মঙ্গলবার) অন্তত দুই ঘন্টা চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা। 
আরো পড়ুন