কুবি উপাচার্যের বক্তব্য বিকৃতের অভিযোগ

 

গত ৩১ জুলাই, ২০২৩ ইং তারিখে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ‘দুর্নীতি হচ্ছে তাই বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে: কুবি উপাচার্য’ শিরোনামে এবং প্রায় কাছাকাছি শিরোনামে সংবাদ আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশপ্রণোদিত ও ব্যক্তিগত আক্রমণাত্মক।
মূল ঘটনাটি হচ্ছে, গত ৩১ জুলাই, ২০২৩ ইং তারিখে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের(কুবি) মার্কেটিং বিভাগের ‘নবীন বরণ ও বিদায় অনুষ্ঠান’-এ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এফ এম আব্দুল মঈন। উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে সবসময়ই শিক্ষার্থীদেরকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করেন। জ্ঞানভিত্তিক ও সমালোচনাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনের মধ্য দিয়ে যাতে শিক্ষার্থীরা নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করতে পারে, সে ব্যাপারে সর্বদাই তিনি দিকনির্দেশনা দেন।

তারই ধারাবাহিকায় উপাচার্য উক্ত অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা ও ‘ক্রিটিকাল থিংকিং’ করার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মুখস্থ বিদ্যার পরিবর্তে ‘ক্রিটিকাল থিংকিং’ চর্চার মাধ্যমে নতুন নতুন জ্ঞান তৈরির জন্য শিক্ষার্থীদের নিয়োজিত থাকতে হবে। নতুন জ্ঞান তৈরির জন্য প্রচলিত ধারণা ও তত্ত্বের উপর্যুক্ততা বিচারে প্রশ্ন করতে হবে। ‘ক্রিটিকাল থিংকিং’-এর বিষয়টি আরো ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উপাচার্য উদাহরণস্বরূপ দুর্নীতির প্রসঙ্গ আনেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রচলিত ধারণা হচ্ছে যে, দুর্নীতি অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে। এখন কোন শিক্ষার্থী ভাবতে পারেন, এ ধারণা সঠিক কিনা! যেমন দুর্নীতির মাধ্যমে মানুষ আয় করলে তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। এর ফলে বাজারে বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা বাড়ে এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। যেমন, তুমি দুর্নীতির মাধ্যমে আয় করে পদ্মার পাড়ে যেয়ে যখন ইলিশ মাছ খাও, তখন ওই এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিক কর্মকা-ে লিপ্ত হচ্ছে। সুতরাং অর্থনীতির চাকা সচল থাকে। প্রচলিত একটি ধারণার বিপরীতে নতুন ধারণা তখনই তৈরি হয়, যখন তুমি ‘ক্রিটিকাল থিংকিং’ করতে পারো। সুতরাং, যেকোন নতুন ধারণা বা তত্ত্বের জন্য ‘ক্রিটিকাল থিংকিং’ গুরুত্বপূর্ণ।’’

উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে যাতে কারো ভুল ধারণা তৈরি না হয়-সেজন্য একথাটিও জোর দিয়ে বলেছেন যে, ‘আমি কিন্তু দুর্নীতির পক্ষে বলছি না। বরং বোঝার জন্য উদাহরণটি দিলাম। আমি নিজে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুর্নীতি প্রতিরোধ করেছি।’

অথচ সৃষ্টিশীল বা বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞান সৃষ্টি তথা উপাচার্য স্যারের মূল কথা বা ভাবনাটি উল্লেখ না করে ‘দুর্নীতি হচ্ছে তাই বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে: কুবি উপাচার্য’ শিরোনামে যে অপসংবাদটি প্রচার করা হচ্ছে, তা দুঃখজনক ও হতাশাব্যঞ্জক। এমনকি উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে ‘বাংলাদেশ’ শব্দটিও উচ্চারণ করেননি। অথচ কীভাবে এমন বক্তব্য লিখে সংবাদ করা হলো, তা এক আশ্চর্যজনক বিষয়। এমন বানোয়াট সংবাদ যে গুটিকতেক স্বার্থান্বেষী মহলের অপকর্ম, তা বোঝা যায়, যখন এটি ‘জিএসটি এডমিশন হেল্পলাইন’-এর ফেসবুক পেজেও দেওয়া হয়। এটি একটি গভীর ষড়যন্ত্রেরও অংশ। কারণ, সংবাদটি করা হয়েছে তখন, যখন জিএসটিতে ভর্তি কার্যক্রম প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শীর্ষে অবস্থান করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন, উপাচার্য স্যারের অক্লান্ত পরিশ্রমপ্রসূত বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রা, স্যারের উদ্যম ও উদ্দীপনা এবং সর্বোপরি শিক্ষার্থীদের মনোবল ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য এ ধরনের অপসংবাদ করে প্রোপাগান্ডা করা হয়েছে, যা অপসাংবাদিকতা ও হলুদ সাংবাদিকতার সীমাকেও ছাড়িয়ে গেছে।

এমন বানোয়াট ও মানহানিকর সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর মৌখিকভাবে মাননীয় উপাচার্য মহোদয় প্রতিবাদ জানান। এরপর সংবাদটি ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি’র ফেসবুক পেজ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এতেই প্রমাণিত হয়, সংবাদটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার অপচেষ্টা। কিন্তু সরিয়ে নেওয়াই সমাধান এবং সাংবাদিকতার রীতি নয়।
আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, উক্ত সংবাদের প্রতিবেদক আগেও উপাচার্যের সম্মানহানির উদ্দেশ্যে এরূপ বানোয়াট সংবাদ লিখে সামাজিক মাধ্যমে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েছিল। পরে সে ওই সংবাদটিও সরিয়ে নেয়। এছাড়াও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অহেতুক অপসংবাদ লিখে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ও উন্নয়ন ধারাকে ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা করেছিল-যা এখনো চলমান।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এফ এম আব্দুল মঈন এর বক্তব্য বিকৃত করে প্রকাশিত সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্রের সম্পাদক মহোদয়গণ সরেজমিন তদন্ত করে এবং ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্যদের সঙ্গে আলোচনা ও রেকর্ড শোনা স্বাপেক্ষে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছে। একই সঙ্গে এই প্রতিবাদটি গুরুত্ব সহকারে প্রকাশের অনুরোধ করছে।

-প্রতিবাদ লিপিটি পাঠিয়েছেন কুবি জনসংযোগ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ এমদাদুল হক।