ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, তিন শতাধিক মানুষ এখনও পানিবন্দী

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।
ভারী বর্ষণ না হওয়া, উজানের পানির চাপ কমে আসা এবং রোদের আলোর প্রভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশই উন্নতি ঘটছে। শনিবার (২৪ আগস্ট) জেলার দুই উপজেলার (কসবা-আখাউড়া) বিভিন্ন গ্রামের অনেক অংশে বন্যার পানি কমে গেছে। তবে এখনও পানিবন্দী রয়েছেন দুই উপজেলার তিন শতাধিক মানুষ। সড়ক, বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
প্রকাশ, গত মঙ্গলবার রাত থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ভারী বর্ষণ শুরু হয়। বুধবার সকালে স্থলবন্দরের পাশের কালন্দী খাল দিয়ে ভারত থেকে তীব্র বেগে পানি ঢুকতে থাকে। পানিতে তলিয়ে যায় আখাউড়া স্থলবন্দর এলাকাসহ ১০টি গ্রাম। ভেঙে যায় গাজীরবাজার এলাকার অস্থায়ী বেইলি সেতু। বন্ধ হয়ে পড়ে স্থলবন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম ও যাত্রী পারাপার। বুধবার রাতে আবারও প্রবল বৃষ্টি হলে কর্ণেলবাজার এলাকার আইড়ল-ইটনা সড়কের হাওড়া নদীর বাঁধের কয়েকটি অংশ ভেঙে যায়। এতে করে নতুন করে আরও কিছু এলাকা প্লাবিত হয়। উপজেলার বীরচন্দ্রপুর, আবদুল্লাহপুর, বঙ্গেরচর, রহিমপুর, সাহেবনগর, ইটনা, খলাপাড়া, কর্ণেলবাজার, উমেদপুর, সেনারবাদী, কুসুমবাড়ি, আওরারচর, ছয়ঘরিয়া, বাউতলা, দরুইন, বচিয়ারা, নোয়াপাড়া, নিলাখাদ, টানুয়াপাড়া, ধাতুরপহেলা, চরনারায়ণপুর, ভাটামাথা, চন্দ্রপুর, ধরখার, বিনাউটি, ভবানীপুর, খারকুট, মিনারকুট, কুড়িবিল, পদ্মবিল, টনকিসহ অন্তত ৩৫টির বেশি গ্রামে পানি ঢুকে পড়ে। পানিবন্দি হয়ে পড়ে অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফসলি জমি, শাকসবজির জমিসহ মাছের ঘের। হাওড়ার বাঁধ ভাঙ্গা পানিতে পার্শ্ববর্তী কসবা উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামও প্লাবিত হয়। অপরদিকে কসবা উপজেলার দক্ষিণ প্রান্তের সালদা নদী দিয়ে প্রবল বেগে পাহাড়ি ঢলের পানি নামার প্রভাবে উপজেলার বায়েক ও কায়েমপুর ইউনিয়নের প্রায় ২০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়। হাওড়া ও সালদা নদী দিয়ে পাহাড়ি ঢলের পানির প্রভাবে দুই উপজেলার আটটি ইউনিয়নের ৭০টিরও অধিক গ্রাম প্লাবিত হয়। এর মধ্যে আখাউড়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ৪৭টি গ্রামের এক হাজার ৬৯৭ টি পরিবারের ৪৯ হাজার ২০৯ জন এবং কসবা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ২৬টি গ্রামের দুই হাজার ৩৫০টি পরিবার বন্যাক্রান্ত হন। তবে বৃহস্পতিবার রাত থেকে পাহাড়ি ঢলের পানির বেগ কমায় এবং বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকে। দুর্গত এলাকাগুলো থেকে সরতে শুরু করে বানের পানি। তবে বন্যার কারণে আখাউড়ার আড়িয়ল ও খলাপাড়া এলায় হাওড়া নদীর দুইটি বাঁধসহ অন্তত ৮টি স্থানে সড়ক ধ্বসে পড়ায় ওইসব সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া পানি সরে গেলেও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় এখনও বন্ধ রয়েছে আখাউড়া স্থলবন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম। পাশাপাশি আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়েও যাত্রী পারাপার বন্ধ রয়েছে। এদিকে কসবা উপজেলার কসবা-নয়নপুর সড়কে বায়েক মোড়ে সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা হয়ে আছে বিপর্যস্ত। ভারী বর্ষণ না হওয়া, উজানের পানির চাপ কমে আসা এবং শনিবার দিনভর রোদের আলোর প্রভাবে বন্যা পরিস্থিতির যথেষ্ঠ উন্নতি ঘটছে। জেলার দুই উপজেলার (কসবা- আখাউড়া) বিভিন্ন গ্রামের অনেকাংশে বন্যার পানি কমে গেছে। তবে এখনও পানিবন্দী রয়েছেন তিন শতাধিক মানুষ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনজুর রহমান বলেন, ‘হাওড়া নদীর পানির সমতল হ্রাস পাওয়া অব্যাহত রয়েছে। পানি গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আজ শনিবার ভোর সকাল ৬টা পর্যন্ত আরও সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপদ সীমার ৫১ সেন্টিমিটারের নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ৩৬ ঘণ্টায় ২৪ সেন্টিমিটার পানি হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে হওড়া নদীর গঙ্গাসাগর পয়েন্টে পানির সমতল রয়েছে ৫.৫৪ মিটার। এতে আখাউড়ায় বন্যার পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। তবে কসবায় সলদা নদীতে কোনো স্টেশন না থাকায় পানির বিপদ সীমার ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই।’
কসবা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহরিয়ার মোক্তার বলেন, ‘কসবায় বন্যার পানির কমতে শুরু করেছে। গত দুই দিনে এক থেকে দেড় ফুট পানি কমে গেছে। তারপরেও কিছু এলাকায় বন্যার পানি রয়েছে। শনিবার সর্বমোট এক হাজার ৩৬৮ পরিবারকে ৭ মেট্রিক টন চাল, ২৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং পানি বিশুদ্ধকরণ খাবার ট্যাবলেট বিতরণ করা হবে। আশা করি খুব দ্রুতই এই বন্যার পরিস্থিতি উন্নতি হবে।’
আখাউড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজালা পারভীন রুহি বলেন, ‘উপজেলাটিতে পানি কমে আসছে। গতকাল শুক্রবারে তুলনায় আজ শনিবার আরও ৪ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। পানি আক্রান্তদের অনেককেই আমরা রিকভারি করতে পেরেছি। যেখানে প্রথম অবস্থায় ১১টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছিল। সেটি কমে গিয়ে ৭টি আশ্রয়ণ কেন্দ্র খোলা রয়েছে।’