ব্রাহ্মণবাড়িয়া ঘরে গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

বসতঘরে গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ।বেপাত্তা হলেন শ্বশুর-শাশুড়ি। আর স্বামীতো প্রবাসেই। পুলিশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠালো নার্গিস বেগমের (২২) মরদেহ। যৌতুকের জন্য গৃহবধূ নারগিস বেগমকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ তার পরিবারের। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা এলাকার।

নিহত নারগিস বেগম বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের কামালমুড়া গ্রামের সায়েদ মিয়ার পুত্র-মধ্যপ্রাচ্যের সৌদিআরব প্রবাসী শাহ আলমের স্ত্রী এবং একই উপজেলার পার্শ্ববর্তী ভিটিদাউদপুর গ্রামের শাহ আলম মিয়ার মেয়ে। এদিকে গৃহবধূর মৃত্যু, শ্বশুর-শাশুড়ি বেপাত্তা হবার ঘটনায় এলাকায় ছড়িয়েছে চাঞ্চল্য।

নিহতের পরিবার, স্থানীয় এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিগত ছ’বছর পূর্বে বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের কামালমুড়া গ্রামের শাহ আলমের সাথে বিয়ে হয় একই ইউনিয়নের ভিটিদাউদপুর গ্রামের শাহালম মিয়ার মেয়ে নার্গিস বেগমের (২২)। বিয়ের সময় নগদ টাকা,স্বর্ণালঙ্কার, আসবাবপত্রসহ দেয়া হয় কয়েক লাখ টাকার যৌতুক। পরবর্তীতে আরো যৌতুকের জন্য শ্বশুরালয়ের লোকেরা নার্গিসের উপর চালাতো শারিরিক-মানসিক নির্যাতন। স্বামী বেকার, তাই পিত্রালয় থেকে রীতিমতোই টাকাসহ নানাকিছু আনতে হতো নার্গিসকে। এরই ধারাবাহিকতায় এক বছর পূর্বে দুই লাখ টাকা দেয় নার্গিসের পরিবার। সেই টাকা দিয়ে কাজের সন্ধানে স্বামী শাহ আলম সৌদিআরব পাড়ি জমায়। তারপরও শ্বশুর সায়েদ মিয়া এবং শাশুড়ি বেবী বেগম দেনা শোধ করার জন্য পুত্রবধূকে বাপের বাড়ি থেকে আরো টাকা এনে দেয়ার জন্য চাপ দিতো। এসব নিয়ে তাদের মাঝে প্রায়শই হতো কলহ। অবশেষে এই দুনিয়া থেকেই বিদায় নিলো গৃহবধূ নারগিস। এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ সোমবার রাতে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। বাড়ি ছেড়ে বেপাত্তা হয়েছেন নিহতের শ্বশুর-শাশুড়ি।

নার্গিসের মা সুজানা বেগম জানান, সোমবার দুপুরে লোক মারফত জানতে পারি আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে মেয়ের শ্বশুরকে ফোন দিলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে ফোন রেখে দেয়। পুত্রবধূর লাশ ঘরে রেখে বাড়ি ছেড়ে পালায় সায়েদ মিয়া। খবর পেয়ে পুলিশ এসে শাশুড়ি বেবী বেগমকে পুলিশ ধরে নিয়ে যেতে চাইলে গ্রামবাসী বাঁধা দেয়। পরে সেও পালিয়ে গেছে। আমার মেয়েকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই।’

বিজয়নগর থানাধীন আউলিয়াবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. কবীর খান বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ‘লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর বলা যাবে এটা হত্যা না আত্মহত্যা। তবে লাশের শরীরের কোথাও কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই।’