ভাষা সৈনিকদের সম্মানী ভাতা দেয়া উচিত: আলী তাহের মজুমদার

 

আমোদ ডেস্ক।।

ভাষা সৈনিকদের সম্মানী ভাতা দেয়া উচিত মনে করেন ভাষা সৈনিক আলী তাহের মজুমদার। ২০১৬সালে জাতীয় দৈনিকে এক সাক্ষাতকারে তিনি এই দাবি করেন। শনিবার তিনি মারা গেছেন। লেখাটি পাঠকদের জন্য পুনরায় তুলে ধরা হলো।

আলী তাহের মজুমদার বলেন,ভাষা আন্দোলনের হাত ধরে স্বাধীনতা আন্দোলন। মুক্তিযোদ্ধাদের মতো ভাষা সৈনিকদেরও সম্মানী ভাতা দেয়া উচিত। সারা দেশে এক হাজারের বেশি ভাষা সৈনিক হবে না, তাদের সরকার সম্মানিত করতে পারে।

ভাষা আন্দোলনে যুক্ত হওযার বিষয়ে বলেন,আমি ১৯১৭সালে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার চাঁদপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করি। পিতা মো.চারু মজুমদার,মাতা সাবানী বিবি। আমার ২ছেলে ২ মেয়ে। ১৯৪২ সালে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত হই। বৃটিশ আর্মিতে যোগ দিয়েছিলাম। ৪৩সালে পূর্ব বাংলায় দুর্ভিক্ষে লাখ লাখ মানুষ মারা যায়। ৫টাকার চাল ৬০টাকা হয়ে যায়। এতে ৮মাস পর বৃটিশ আর্মি থেকে পালিয়ে এসে আবার বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ি। প্রথমে কংগ্রেস করতাম। পরে আওয়ামী মুসলিম লীগে জড়িত হই। ১৯৪৭ সাল থেকে রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য কুমিল্লায় মিছিল-মিটিং ও পোস্টারিং করি। যুক্তফ্রন্টের পক্ষে এবং ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় থাকায় ১৯৫৪সালে কুমিল্লায় পাকিস্তান সরকার ২শ‘ জনকে গ্রেফতার করে। তাদের মধ্যে আমাদের ১৪জনকে ৩বছর আটক রাখা হয়। আমি ১৯৫৬সালে কুমিল্লা কোতয়ালী আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি ছিলাম। ১৯৭১সালে ২নং সেক্টরে স্বাধীনতা যুদ্ধ অংশ গ্রহণ করি। ১৯৯৪ সালে কুমিল্লা জেলা কৃষকলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করি।

রাজনীতিতে আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন,৩০এর দশকে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার হাসনাবাদে কৃষক আন্দোলন হয়েছিলো। সেখানে পুলিশের গুলিতে তিনজন কৃষক মারা যান। তাদের লাশ আমার বাড়ির সামনের দিয়ে শহরে নেয়া হয়। আমি একটি লাশের মুখ খুলে দেখি তার চোখ খোলা। সে যেনো আমাকে কিছু বলতে চায়! সে থেকে আমি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি।

অভাব অনটনে কাটা জীবন নিয়ে তিনি বলেন,আমি কখনও ভোগ বিলাসের রাজনীতি করিনি। তাই জীবনের শেষ সময়ে এসে পরিবারের নেতিবাচক কথা শুনি। অধিকাংশ সময়ে নগরীর এক পালিত নাতনির বাসায় থাকি। মুক্তিযোদ্ধার কিছু ভাতা দিয়ে চলি। প্রতি মাসে ভাতা পেলে ভালো হতো। তিন মাস পর এক সাথে ভাতা পাই, এর মধ্যে আমার মতো বৃদ্ধরা না খেয়ে মরেও যেতে পারে। দেশ সমাজ সুন্দর চলবে এ আশায় সারাটি জীবন কাটিয়ে দিলাম ঘোরের মধ্যে দিয়ে। এখনও স্বপ্ন দেখি বাংলাদেশ একদিন বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে সব সময় একুশের চেতনাকে লালন করতে হবে।