‘মাথার উপর দিয়ে গুলি যাচ্ছে’

গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি
মোহাম্মদ শরীফ।।
কুমিল্লা পুলিশ লাইনে পিস্তল, রিভলবার ও শটগান দিয়ে শিক্ষার্থীদের গুলি করছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ইতিমধ্যে একজন গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থীকে নিয়ে ছুটছে শিক্ষার্থীরা। সেই দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণের চেষ্টা করছি। হঠাৎ আশিকুর রহমান নামে কথিত সাংবাদিক আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী এসে আমাকে লাঞ্ছিত করলেন। আমার ফোন ক্যামেরাটি মাটিতে ফেলে দেয়। সাথে সাথে লাইভ কেটে যায়। গালমন্দ করতে লাগলেন। আ’লীগের সন্ত্রাসীদের উস্কে দিলেন আমার দিকে। ধাক্কা দিয়ে ফুটপাতের সিঁড়ি থেকে নামিয়ে অকথ্য ভাষায় তাচ্ছিল্য করলেন। আমার অপরাধ কেন আমি অস্ত্রের ভিডিও করতে গেলাম, শিক্ষার্থীদের উপর গুলির লাইভ করলাম। এটি ৩ অগাস্টের কুমিল্লা নগরীর পুলিশ লাইন মোড়ের ঘটনা।
জুলাইয়ে প্রথম দিন থেকে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে দেশ ব্যাপী। জেলা শহর কুমিল্লাও হয়ে পড়ে উত্তপ্ত। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নেমে পড়েন শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের করুণ স্মৃতি এখনো চোখে ভাসে। কত কান্না, শিক্ষার্থীদের রক্তাক্ত দেহ দেখেছি। নিজেও রাস্তায় পড়ে থাকা মৃত্যু পথযাত্রী আহত মানুষের দেহ তুলে দিয়েছি গাড়িতে। কুমিল্লায় প্রথম শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয় কোটবাড়ির আনসার ক্যাম্প এলাকায়। সেখানে শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের গুলির ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে জীবনে প্রথম বারের মতো টিয়ারশেলে আহত হয়েছি। প্রতিটি দিন মনে হচ্ছিলো, মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে সংবাদ সংগ্রহ করতে যাচ্ছি। ৪ অগাস্ট আলেখারচর বিশ্বরোডে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে সংঘর্ষ হয়। আমরা আ’লীগের মিছিলের পেছন থেকে ভিডিও করছিলাম। প্রথমে শিক্ষার্থীদের গুলি করে হটিয়ে ক্যান্টনমেন্টের দিকে ছড়িয়ে দেয় আওয়ামী লীগের নেতারা। কিছুক্ষণ পর আবার শিক্ষার্থীদের ইটপাটকেলে পিছু হটে তারা। একটা সময় আ’লীগের অস্ত্রধারীরা শিক্ষার্থীদের পুনরায় গুলি করলে পাল্টা শিক্ষার্থীদের পক্ষ হয়ে গুলি করে সেনাসদস্যরা। দু’পক্ষের গুলির মাঝে পড়ে মনে হচ্ছিলো মাথার উপর দিয়ে গুলি যাচ্ছে। কখনো কখনো মনে হয়েছে যে, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সাংবাদিকতা করছি। সকালের নাস্তা ও দুপুরের ভাত খেয়েছি সন্ধ্যার পর। কত স্মৃতি ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের। রাতে যখন বাসায় ফিরতাম, ঘুমাতে পারতাম না। মনে হতো, গুলি, চিৎকার ও মিছিলের শ্লোগান কানে বাজছে।

লেখক: অফিস রিপোর্টার,সাপ্তাহিক আমোদ।