মা-বাবাহীন খালি বাড়ির ঈদ!

সুমন পাটায়ারী।।
মা ও ভাই মারা যাওয়ার পরে আমার বাড়ি যাওয়ার একমাত্র লক্ষ্য ছিল বাবার কাছে যাওয়া। বাবাকে দেখলে মা না থাকার বেদনাটা ভুলে যেতাম। মায়ের মত বাবা সময় মত কল দিয়ে খবর নিতেন, বাড়িতে গেলে একসাথে খাবে বলে আমার জন্য খাবার নিয়ে বসে থাকতেন। রমজানে ইফতার সামনে নিয়ে বসে আমাকে কল করে বলতেন বাইরে যেন কোথাও ইফতার না করি। ঈদ আসলে বলতেন কবে বাড়ি আসবি বাবা।
কয়েক মাস আগে বাবাকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম- বাবা কেমন আছেন? বাবা বলল- জ্বর। আমি ডাক্তার দেখাতে বললাম। তিনি একে একে কয়েকবার ডাক্তার দেখালেন। জ্বর কোন ভাবেই ভাল হচ্ছে না। আমি বললাম আপনি কুমিল্লা আসেন, আপনাকে ডাক্তার দেখাব। কয়েকদিন বলার পর আসলেন। আমার বাসায় রেখে ডাক্তার দেখালাম। কিন্তু জ্বর কিসের থেকে সেটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ডাক্তার দেখানোর সুযোগে বাবাকে কুমিল্লার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে ঘুরে দেখালাম। বাবাও বেশ খুশি হলেন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বাবাকে কয়েকবার দেখানোর পর বাবার শরীরের কোন উন্নতি দেখতে পাইনি। দিন দিন বাবার স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে। বাবাকে দেখলে তখন কি পরিমাণ মায়া লাগতো বুঝাতে পারব না। পরে বাবাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও কয়েকবার ডাক্তার দেখানোর পর বাবার শরীরের উন্নতি না হওয়ায় বাবাকে ভর্তি দিল। সেখানে তাদের পর্যবেক্ষণে ছিল ১৭ দিন। বাবার শরীরের কিছুটা উন্নতি হলে বাবাকে ছুটি দেয়। তার মধ্যে একটি রিপোর্ট ভুল আসায়, বাবাকে ডাক্তার ভুল ট্রিটমেন্ট করায় বাবার অবস্থা আরো খারাপ হয়। তারপর আবার ঢামেক হাসপাতালে ছিল ৩২ দিনের মত। কিছুটা উন্নতি হলে বাড়িতে নিয়ে আসি। এখন হাঁটাচলা করতে পারে, কথাও বলতে পারে। ভাবছি শীত গেলে হয়তো বাবা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবেন। কিন্তু শীত যাওয়ার আগেই বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।
রমজান আসলো, বাবা কিন্তু আমার জন্য ইফতার নিয়ে বসে থাকেন নি। ঈদও চলে আসছে, বাবা কল দিয়ে জিজ্ঞেস করেন নি বাবা বাড়ি আসবি কবে?
গত ঈদে বাবাকে ঘিরে আমার ঈদটা ছিল অন্য রকম। ঈদের দিন বাবা নতুন পাঞ্জাবি পড়ায় বাবাকে কি পরিমাণ সুন্দর লেগেছে তা বুঝাতে পারব না। বাবার সাথে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা। বাবার সাথে ঈদগাহে যাওয়া। নামাজ শেষ করে বাবাকে নিয়ে মা, ভাই, দাদা, দাদীর কবর জিয়ারত করা। কিন্তু আমার কি ভাগ্য দেখেছেন আজ সেই বাবার কবর আমাকেই জিয়ারত করতে হচ্ছে।
ঈদের জন্য প্রত্যেকেরই বাড়ি যাওয়ার একটি আগ্রহ থাকে। বাড়ি যাবে বাবা মায়ের সাথে ঈদ করবে। এর চেয়ে আনন্দ জীবনে আর কি হতে পারে। কিন্তু এবারের ঈদে আমার বাড়ি যাওয়ার কোন ইচ্ছাই নেই। ঈদ আসছে, সবার মাঝে আনন্দের হিল্লোল বইলেও আমার মাঝে বইছে বিভীষিকা। এই বিভীষিকা হয়তো থাকবে আজীবন ভর।

সকলের ঈদ ভাল কাটুক সেই প্রত্যাশা আজ এই পর্যন্তই। আল্লাহ হাফেজ।
লেখক:সাইফুল ইসলাম সুমন(সুমন পাটোয়ারী)।
সভাপতি,কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ সাংবাদিক সমিতি।