‘মিডিয়া ছাড়া কেউ আমাদের খবর নেয় না’

তনু হত্যার ৯ বছরেও নেই তদন্তে অগ্রগতি

inside post

প্রতিনিধি।।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু। তার হত্যার নয় বছরেও কোন আসামি শনাক্ত হয়নি। নেই মামলার কোন অগ্রগতি। দেওয়া হয়নি কোন ধরনের চার্জশিটও । বাদীপক্ষের সঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তার কোন যোগাযোগও নেই। এ অবস্থার মধ্য দিয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) চাঞ্চল্যকর ওই হত্যাকা-ের নয় বছর পূর্ণ হচ্ছে। এদিকে তনুর নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী শুক্রবার ২১ মার্চ বাদ জুমা গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন,‘নয় বছর যারা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হোক। ওরা মামলাটারে নষ্ট করে দিয়েছে। ওদেরও বিচার করতে হবে।’
তিনি বলেন,‘মার্চ মাসের এই সময়ে মিডিয়া ছাড়া কেউ আমাদের খবর নেয় না। মামলা ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।’
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর লাশ কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের অদূরের কালভার্টের পশ্চিমে ঝোপ থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ২০১৬ সালের ২১ মার্চ বিকেলে তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন । এরপর প্রথমে ২০১৬ সালের ২১ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয় কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সাইফুল ইসলামকে। পরে দ্বিতীয়বার ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ মামলার তদন্ত দেওয়া হয় কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মনজুর আলমকে। পরবর্তীতে তৃতীয়বার ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত সিআইডির কুমিল্লার পুলিশ পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম তদন্ত করেন। চতুর্থবার ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা বদল করে সিআইডির নোয়াখালী ও ফেনী অঞ্চলের তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার (বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) জালাল উদ্দিন আহম্মদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পঞ্চমবার ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর হত্যা মামলাটি সিআইডি থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) ঢাকার সদর দপ্তরে স্থানান্তর করা হয়। পিবিআই ২০২০ সালের নভেম্বরের পর বাদীপক্ষের সঙ্গে আর যোগাযোগ করেনি বলে দাবি পরিবারটির। এদিকে গত বছরের (২০২৪) সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ষষ্ঠবারের মতো বদল হয়। এবার তদন্ত কর্মকর্তা দেওয়া হয় পিবিআইয়ের ঢাকার আরেক পরিদর্শক তরিকুল ইসলামকে।
তদন্ত কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই মামলার তদন্ত হুট করে করা যায় না। কিছু প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ঘটনাস্থলে যেতে হয়। আমরা সেনিরিখে কাজ করছি।’
কুমিল্লার সংস্কৃতিকর্মী খায়রুল আনাম রায়হান বলেন, ‘ধর্ষণের পর তনুকে মেয়েকে হত্যা করা হয়। এরপর লাশ নিরাপদ এলাকায় পাওয়া যায়। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার যারা ধামাচাপা দিচ্ছেন কিংবা চেষ্টা করছেন-তাদের উচিত নিজেদের বিবেক কে প্রশ্ন করা।’

আরো পড়ুন