যানজটে হাঁসফাঁস নগরজীবন

 

কুমিল্লা নগরীর যানজট নগরজীবনকে নাজেহাল করছে নিত্যদিন। নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় পূবালী চত্বর,জিলা স্কুল থেকে নিউমার্কেট মসজিদ মোড়,কুমিল্লার ঐতিহ্য রসমলাই দোকানের মোড়,মনোহরপুর ,রাজগঞ্জ শাপলা চত্বর থেকে কান্দিরপাড় এবং মোগলটুলী থেকে রাজগঞ্জ,পানপট্টি কোতোয়ালি থানা রোড,চকবাজার রূপালি সিনেমা হল থেকে তেলিকোনা তেলের পাম্প,কাঁসারি পট্টি, শাসনগাছা,নজরুল এভিনিউ থেকে রাণীর বাজার,ঝাউতলা মুন হসপিটাল, সদর হসপিটাল রোড,হোটেল সালাউদ্দিন মোড়,টমছম ব্রিজ চৌরাস্তা থেকে কুচাইতলি মেডিকেল রাস্তা,দৌলতপুর রোড এবং শাকতলা পানি উন্নয়ন বোর্ড পর্যন্ত প্রতিদিন যানজট লেগে থাকে। এতে হয়রানি পোহাতে হচ্ছে নগরীর বাসিন্দাদের। এনিয়ে গত সপ্তাহে সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

সংবাদে উল্লেখ করা হয়,মনোহরপুর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী মিশলা। চকবাজার কাঁসারি পট্টি থেকে অসুস্থ মাকে(সন্তান সম্ভবা) নিয়ে নিত্য রিকশায় যাতায়াত করে বিদ্যালয়ে আসে। বাসা থেকে অনেক সময় নিয়ে বের হলেও যানজটের ভোগান্তি তাদের নিত্য পোহাতেই হয়। মিশলার মা বলেন, যানজটের কারণে প্রায়ই অসুস্থ শরীর নিয়ে রিকশা থেকে নেমে হেঁটে যেতে বাধ্য হই। রাজগঞ্জ শাপলা চত্বরের মোড় থেকে রাস্তার দুপাশেই ফুটপাথ দখল করে রেখেছে বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। হাঁটতে গেলে অনেক বাধাবিপত্তিতে পড়ি। যানজট সমস্যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে। প্রতিদিনই এই সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হচ্ছি অভিভাবকরা।
নগরীর একটি ঔষধ কোম্পানিতে চাকরি করেন মো.ইমন। তিনি জানান,মোগলটুলী থেকে কর্মস্থল কুমিল্লা মেডিকেল পরিদর্শনে যাওয়ার পথে নিত্য মোগলটুলি থেকে রাজগঞ্জ ট্রাফিক মোড়, চকবাজার থেকে তেলিকোনা জ্যামে আটকা পড়েন। এতে কর্মস্থলে নির্দিষ্ট সময় পৌঁছানো সম্ভব হয়না। মেডিকেল যাওয়ার বিকল্প পথগুলোর অবস্থা একই রকম।
মনোহরপুর সোনালী ব্যাংক মোড় চেকপোস্টে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য সত্যজিৎ বলেন,আড়াই বছর এই শহরে কর্মরত আছি। কুমিল্লা নগরীর যানজটের চিত্র দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও যানজট নিরসনে ব্যর্থ হচ্ছে। প্রকৃত অর্থে জনগণের আন্তরিক সহযোগিতা ছাড়া নগরীর যানজটের চিত্র কমিয়ে আনা অসম্ভব। নগরীর যানজট নিরসনে রিকশা -অটো রিকশা কমিয়ে নগর কর্তৃপক্ষ নগরীর কেন্দ্র গুলোতে নির্দিষ্ট কিছু মানসম্পন্ন গাড়ি নামানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
ধর্মপুর এলাকার তরুণী সূচি এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিপরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাকে নিয়মিত যাতায়াত করতে হয় ঝাউতলা ইউসিসি কোচিং সেন্টার শাখায়। সে বলে, ধর্মপুর রেলক্রসিং পার করেই কোচিং-এ আসি। পশ্চিম ধর্মপুর কলেজ মোড়,রেলক্রসিংয়ে নিত্যই জ্যামে পড়তে হয়। এতে অনেক সময় নষ্ট হয়,পড়ালেখার ক্ষতি হয়। চম্পকনগর (সাতরা) আল-মাদরাসুল ইসলামিয়া মদিনা-তুল উলুম মাদ্রাসার ছাত্র রাহাত। আরবি পড়ান কান্দিরপাড়সহ এর আশেপাশে কয়েকটি এলাকায়। সে জানায়,শাসনগাছা থেকে কান্দিরপাড় নিয়মিত আসা যাওয়া করতে হয়। যানজটের ভোগান্তিতে টিউশন গুলোতে সময় মতো পৌঁছাতে পারিনা।
মডার্ন স্কুলের সহকারী শিক্ষক(ড্রইং) মিজানুর রহমান বলেন,স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে প্রতিনিয়ত যানজটের শিকার হচ্ছি। যানজট নিরসনে দরকার-সুপরিকল্পনা, কর্তৃপক্ষের কঠোর আইন প্রয়োগ এবং বাস্তবায়ন। এছাড়াও দেখা যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিভাবকদের ব্যক্তিগত গাড়িগুলোও কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি করে থাকে। নগরীর বিভিন্ন কেন্দ্রে অবস্থিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্লাস শুরু এবং ছুটির সময় তীব্র যানজটের চিত্র দেখা যায়। তাই কর্তৃপক্ষের উচিত প্রতিটি বিদ্যালয়ের প্রধান,ক্ষুদ্র -বৃহৎ ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় সচেতনদের নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা করা।
অ্যাম্বুল্যান্স চালক মামুন জানান,কুচাইতলি মেডিকেল কলেজ,টাওয়ার হসপিটাল,মুন হসপিটালসহ নগরীর ভেতরের হসপিটাল গুলোতে ইমার্জেন্সি রোগী নিয়ে যাওয়ার পথে প্রায় সময় আটকে থাকি। রোগী সঠিক সময়ে হসপিটালে পৌঁছাতে পারিনা। অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে যায়।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. সফিকুল ইসলাম বলেন,আমরা চারটি ধাপে নগরীর যানজট নিরসনে অভিযান নিয়োজিত রেখেছি। প্রথম ধাপে ছিলো- দখলকৃত অস্থায়ী স্থাপনা উচ্ছেদ কার্য। এতে আমরা স্বক্রিয় ভূমিকা রেখে কান্দিরপাড় থেকে চকবাজার পর্যন্ত অভিযানটি সফল করেছি। তারপরেও কিছু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে পুনরায় দোকানপাট বসানো শুরু করেছে। দ্বিতীয় ধাপের অভিযানে আমরা শীঘ্রই নামবো। ফুটপাথ দখল করে কোনো ভ্যান বা অস্থায়ী দোকান যাতে স্থায়ী দোকানগুলোর সামনে না বসাতে পারে সেই দায়িত্বের ভার স্থায়ী দোকানদারদের প্রদান করবো। তৃতীয় ধাপে মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেওয়া অটো,সিএনজি অটো রিকশাগুলোকে সরিয়ে নেবো। অভিযান বাস্তবায়নের জন্য ট্রাফিক পুলিশের কঠোর অবস্থান নিশ্চিত করবো। সেই সাথে ট্রাফিক পুলিশ বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে হয়েছে। চতুর্থ ধাপে রাস্তার পাশে ছোট-বড় বাণিজ্যিক বা আবাসিক ভবন গুলোতে ভবন মালিক নিজ দায়িত্বে পার্কিং’র ব্যবস্থা করতে হবে। না হয় তাদের জরিমানা বা কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। এছাড়াও তিনি জানান,বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বাসগুলো যাতে নগরীতে প্রবেশ না করে,আশেপাশের এলাকাগুলোতে অবস্থান নেয় সেই পরিকল্পনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনায় বসবো। স্থানীয় মানুষের সহযোগিতা,সেচ্ছাসেবী সংগঠকদের অংশগ্রহণের আহ্বান করবো। নগরীর কেন্দ্র গুলোতে অবস্থিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নিয়ে আমরা অচিরেই বসবো। সকলের কর্তব্যনিষ্ঠ সহযোগিতাই আমাদের উপহার দেবে যানজটমুক্ত সুদৃশ্য কুমিল্লা নগরী।
আমরা চাই, যানজটমুক্ত সুদৃশ্য নগরী। শুধু কথা নয়। শুধু প্রতিশ্রুতি নয়। প্রতিশ্রতির বাস্তবায়ন হোক। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃত্ব,প্রশাসন সবার আন্তরিক ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।