যে বাড়ি নিয়ে কুমিল্লার তরুণদের হাহাকার!

মাহফুজ নান্টু।
কুমিল্লা নগরীর নানুয়ারদিঘি। একখন্ড বৈকালিক অবসর কাটাতে নানুয়ারদিঘির জুড়ি নেই। এই নানুয়ারদিঘির উত্তর পাড়ে পুরোনো দিনের ডিজাইনে করা একটি দোতলা বাড়ি নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় তরুণ ও কিশোরদের মধ্যে হাহাকার শুরু হয়েছে। কেন এই হাহাকার। তার কারণ জানা গেলো। সম্প্রতি বাড়ির মালিক তার এই বাড়িটি বিল্ডারদের কাছে দিয়েছেন। এখানে এখন নতুন ডিজাইনের বহুতল বাড়ি হবে। তাই রোববার সকাল থেকে বির্ল্ডাসরা বাড়িটি ভাঙ্গতে শুরু করেন। সোশাল মিডিয়ায় ওই বাড়ি ভাঙ্গার একটি ছবি শেয়ার হচ্ছে বিদ্যুৎগতিতে।

ছবিটিতে দেখা যায়, বাড়ির সামনে উপুড় হয়ে পড়ে আছে গেইটফুল গাছটি। এই একটি গেইটফুল গাছটি সারা বছর বাড়িটিকে জড়িয়ে ছিলো। সকাল হলেই গাছটির নিয়ে সাদা নীলাভ ফুল বিছিয়ে থাকতো। এই বাড়ির ডিজাইন যেমন ঐতিহ্যর, তেমনি বাড়ির সৌন্দয্য বৃদ্ধি করেছিলো গেইটফুল গাছটি। বিকেল হলে আশেপাশের বয়স্ক মানুষরা বাড়িটির সামরে অংশে আড্ডা দিতেন। তবে সকাল থেকে দুপুরে এই জায়গা তরুণ-তরুণীদের দখলে থাকতো। এই বাড়ির সাথে জড়িয়ে আছে শতসহস্র কিশোর যুবকদের ছেলেবেলা। কারো প্রেম-কারো বা আড্ডার জায়গা। দিন রাত কেউ না কেউ বসে থাকতো। হয় একলা না হয় কয়েকজন মিলে। এই বাড়ির সামনে বসে পুরো নানুয়ার দিঘি দেখা যায়। দখিনা বাতাসে দেহমন জুড়িয়ে যায়। সাইফ বাবু নামে একজন বাড়িটি ভাঙ্গার ছবি শেয়ার দিয়ে ক্যাপশন লিখেন হাজারো আবেগের সমাপ্তি। বাড়িটির আগের ও বর্তমানে ভাঙ্গার একটি ছবিটি শেয়ার করে কুমিল্লা গার্ডেনার্স সোসাইটির পেজে এডমিন ক্যাপশনজুড়ে দেন বিল্ডার্সদের হাতে কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্রে নানুয়ারদিঘির পাড়ের অন্যতম একটি সৌন্দর্যের সমাপ্তি।
আজ থেকে ৮০% মানুষের নানুয়ারদিঘিরপাড় যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে শিওর। এখানে একটা লেকভিউ প্রজেক্ট হবে, স্বর্ণকুটির ডেভেলপার্স এই প্রজেক্টেটা করবে। লাভ অব কুমিল্লা গ্রুপে ছবিটি শেয়ার করে ক্যাপশন লিখেন কুমিল্লা নানুয়ারদিঘিরপাড়ের সেই সৌন্দর্যটির পরিসমাপ্তি। সোয়োইব নামে একজন লিখেন, নানুয়ারদিঘির পাড়ের এই জায়গাটি হাজারো মেয়েদের ফটোশেসনে জায়গা হিসেবে এতোদিন দখলে ছিলো। আজ তা ভেঙে খানখান করে ফেলেছে বিল্ডার্সরা। তৌহিদ খন্দকার তপু বাড়িটি ভাঙ্গার একটি ছবি দিয়ে ক্যাপশনে লিখেন প্রিয় আড্ডার জায়গাটা শেষ, নানুয়ারদিঘির পাড় আর যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করছি না। হোসেন জালাল নামে একজন লিখেন বিল্ডার্সদের হাতে কুমিল্লার অন্যতম একটি সৌন্দর্যের সমাপ্তি।
লেখক ও গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, এই বাড়িটি কবে তৈরি করা হয়েছিলো তার সুনির্দিষ্ট তারিখ জানা নেই। তবে বাড়ির নকশা স্থাপত্য কৌশল শতবর্ষের আগের। আমরা ছোট থাকতে দেখেছি এই বাড়ির সামনে বাঘের বড় মূর্তি। তখন আমরা বাড়িটিকে বাঘবাড়ি নামে সম্বোধন করতাম। এই বাড়ির পাশের বাড়িটি ছিলো জমিদার অনঙ্গ নাহার বাড়ি। ওই বাড়ির মেয়ে গীতা নাহা শচীন দেব বর্মণের কাছে গান চর্চা করতেন। এত সুন্দর সুষমামন্ডিত বাড়ি কুমিল্লায় আর নেই। এটি এখন ভেঙ্গে বির্ল্ডাস নতুন আবাসিক ভবন তৈরি করবে।
এই বাড়িটি ভেঙ্গে নতুন ভবন তৈরির চুক্তি করেছে স্বর্ণকুটির প্রোপার্টিজ। স্বর্ণকুটির প্রোপার্টিজের কর্মকর্তা রায়হান আহমেদ বলেন, আমরা ছয় বছর ধরে আমরা বাড়িটির বৈধ মালিকানায় কারা রয়েছে সে বিষয়টি জেনেছি। বাড়ির মালিক ঢাকায় থাকেন। রোববার থেকে বাড়িটি ভাঙ্গার কাজ শুরু করেছি। খুব শীঘ্রই নতুন ভবনের কাজ শুরু করবো।