মেঘনা ওসি ও এস আইয়ের বিরুদ্ধে নারীর মামলা
প্রতিনিধি।।
কুমিল্লায় কুপ্রস্তাবের অভিযোগে মেঘনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছমির উদ্দিন(৫০) ও উপপরিদর্শকের (এস আই) মো. মোশাররফ হোসেনের(৪০) বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন এক নারী। রবিবার কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল -৩ এ মামলাটি দায়ের করেন ওই নারী। পরে আদালতের বিচারক মোয়াজ্জেম হোসেন সহকারী পুলিশ সুপার পদ মর্যাদার একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, মেঘনা থানার শিকিরগাঁও এলাকার প্রবাসী মাহমুদুল হাসানের স্ত্রী রুমানা রহমান জয়া (২৬) তাদের পারিবারিক ও আত্মীয়-স্বজনের জমির মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে কয়েকবার থানায় যান। তাই ওসি ছমির ও এস আই মোশাররফ তাকে প্রায়ই ফোন করতো। এক পর্যায়ে ওসি ছমির তাকে মেঘনা রিসোর্টে সময় কাটাতে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। এস আই প্রায়ই ফোন করে তাকে অশোভন প্রস্তাব দিত। তারা রুমানার ফোন নম্বরে এবং হোয়াটস্অ্যাপ নম্বরে ফোন দিত। তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় দুজনে রুমানার ওপর ক্ষুব্ধ হয়।
২৬ আগস্ট রুমানার বোনের জামাইকে গ্রেফতার করতে যায় ওসি ছমির ও এস আই মোশাররফ। সেদিন রুমানা মামলার ওয়ারেন্ট চাওয়াতে এসআই মোশাররফ রুমানাকে টেনে হিচড়ে থানায় নিয়ে আসে। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে এস আই মোশাররফ পুলিশদের সহায়তায় টেনে হেঁচড়ে রুমানাকে ওসির রুমে নিয়ে যায়। রুমের দরজা বন্ধ করে ওসি তার সাথে অশোভন আচরণ করেন। এসময় তিনি রুমানার মুখ চেপে ধরে শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন। তখন ওসিকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তিনি তাকে চড়, থাপ্পড় এবং লাথি মারতে থাকে। সে চিৎকার শুরু করলে এস আই মোশাররফ এসে তার গলা চেপে ধরে যাতে সে চিৎকার করতে না পারে। এসময় মোশাররফ তাকে ধর্ষণ করার হুমকি দেয়। তারা রুমানার হাতের মোবাইল ফোন সেটটির লক খুলে ফ্লাশ মেরে দেয়। যাতে পূর্বে তার সাথে যোগাযোগের কোন প্রমাণ না থাকে। তার বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ তুলে একটি মামলা দায়ের করে কোর্টে চালান করে দেয়। পরে আটদিন জেলে থাকার পর তিনি জামিনে এসে মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে রুমানা বলেন, আমার মানসম্মান সব শেষ করেছে তারা। তারা ভেবেছিল আমি প্রবাসীর স্ত্রী আমি তাদের প্রস্তাবে রাজি হব। কিন্তু আমি রাজি হইনি। ওসি আমাকে রিসোর্টে যেতে বলেছিল। অথচ আমি সেদিনের আগে রিসোর্টই চিনতাম না। পরে আমি বললাম রিসোর্টে কেন যাব আপনি যা বলার আমাকে থানাতেই বলেন। এতে তিনি বলেন, রিসোর্টে আমার সাথে ব্যক্তিগত কথা বলবেন। তিনি আমাকে রাতের বেলায় ফোন দিতেন। অন্য একটি মামলার কারণে আগে থেকে পরিচিত থাকায় তিনি আমার বাড়িতেও আসতে বলতেন কিন্তু আমি রাজি হইনি। এস আই মোশাররফ গায়ে হাত দিয়েছেন। আমি এসবের বিচার চাই। তারা ভেবেছে আমি ভয়ে কথা বলবো না। কিন্তু আমি চাই আমার মত যাতে কোন নারী এমন নির্যাতনের শিকার না হন।
এবিষয়ে ওসি ছমির উদ্দিন বলেন, এই মহিলা ভীষণ উগ্র। আমরা আসামি গ্রেফতার করতে গেলে সে ওয়ারেন্ট চায়। ওয়ারেন্ট দেখালেও তিনি আমাদের আসামিকে আনতে দেননি। পরে আমরা তার বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধায় দেয়ায় বাধ্য হয়ে মামলা দায়ের করি। এরপর তিনি জেল থেকে বের হয়ে এসব করছেন। মামলা করতেই পারেন। এটা বানোয়াট মামলা।
এস আই মোশাররফ বলেন, আমাদের কাছে ভিডিও রেকর্ড আছে তিনি কি করেছেন। আমরা তাকে মহিলা কনস্টেবল দিয়ে ধরিয়ে এনেছি। আমরা তাকে কুপ্রস্তাব দেইনি। সে খুবই উগ্র মহিলা। এগুলা তার বানানো।
কুমিল্লার জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান বলেন, আমি মাত্রই শুনলাম। এখনও কোর্ট থেকে কোন কাগজপত্র পাইনি। কোর্ট ইন্সপেক্টরের সাথে কথা বলে দেখি কি করা যায়।