রাজনৈতিক দোষারোপ নয়, সমস্ত ঘটনার সুষ্ঠ বিচার হোক

 

সম্প্রতি শারদীয় দর্গোৎসবে কুমিল্লার একটি পূজামন্ডপের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের অন্তত ১৫টি জেলায় শতাধিক সাম্প্রদায়িক
সহিংসতায় অন্তত ছয়জন নিহত এবং কয়েকশ মানুষ আহত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সন্ত্রাসী হামলা, মন্দির-পূজামন্ডপ, বাড়িঘর-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও উদ্বেগজনক। ভুক্তভোগীদের মতে, স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী তড়িৎ পদক্ষেপ নিলে সহিংসতার মাত্রা ও ক্ষয়ক্ষতি অনেকটা এড়ানো যেত। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র অনপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লা উদ্যোগে আজ ২৮ অক্টোবর ২০২১ সকাল ১০ টায় কুমিল্লা প্রেস ক্লাব চত্বরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার এসব ঘটনার সুষ্ঠ বিচারের দাবীতে এক মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির, বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ জীবন-জীবিকার ওপর প্রায় সপ্তাহব্যাপী চলমান সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধে আইন-শঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীসহ মাঠপ্রশাসন যথাযথ সময়ে প্রত্যাশা অনুযায়ী কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর শতাধিক মামলায় কয়েক হাজার আসামি করা হলো; অথচ চিরাচরিত রাজনৈতিক দোষারোপের বাইরে এখন পর্যন্ত অধিকাংশ স্থানেই প্রকত অপরাধীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। এই ঘটনার পূববর্তী সমস্ত সহিংসতাতেও একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি দেখা যায়। এতে প্রকত অপরাধীরা আড়ালে চলে যায় এবং নিয়মিত বিরতিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটতেই থাকে। বিগত এক দশকে তিন হাজারেরও অধিক সহিংস হামলায় ভিন ধর্মাবলম্বীদের দেড় হাজারের বেশি বাড়িঘর, প্রতিমা, পূজামন্ডপ ও মন্দিরে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচরের ঘটনার একটিতেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির নেই। সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রতি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি বিচারহীনতার এই সংস্কৃতিই হামলাকারীদের আরও উস্কে দিচ্ছে এবং সাম্পদায়িকতার বীজ জিইয়ে রেখেছে। রাজনৈতিক দোষারোপের ঘেরাটোপে আটকে এসব ঘটনার বিচার না হওয়ায় নিয়মিত বিরতিতে এ ধরনের সহিংসতা ঘটছে, তাই এই ধারাবাহিক সহিংসতাকে আর বিচ্ছিন ঘটনা বলার সুযোগ নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্পদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে অবিলম্বে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সমস্ত ঘটনার সুষ্ঠ বিচার নিশ্চিত করা জরুরি।