লালমাই পাহাড়ের চূড়ায় সবুজের মেলা

মহিউদ্দিন মোল্লা।।

কুমিল্লার লালমাই পাহাড়। পাহাড়ের চূড়ায় সংরক্ষণ করা হয়েছে শতাধিক প্রজাতির বিরল উদ্ভিদ। এ উদ্যানে রোপণ করা হয়েছে বিরল উদ্ভিদের ১০ লক্ষাধিক চারা। এটি বাংলাদেশের তৃতীয় বিরল উদ্ভিদ উদ্যান। বর্তমান প্রজন্মকে উদ্ভিদ সম্পর্কে ধারণা দিতে নগরীর লাগোয়া সালমানপুর এলাকায় এই উদ্যোগ নেয়া হয়।

উদ্যানটিতে রয়েছে বৈলাম, চম্পা, লোহাকাঠ, স্বর্ণকমুদ, সিভিট, অশোক, চাপালিশ, বহেরা, হরিতকি, তেলশুর, আগর, নাগলিঙ্গম, নাগেশ্বর, শাল, মহুয়া, ধূপ, উড়ি আম, বন পেয়ারা, বাঁশপাতা, সাকড়া, চালমুগরা, কাঞ্চন, পিতরাজ, জারুল, কনক, তমাল, রাধাচূড়া, করমচা, অড়বরই, হারগোজা, ডেফল, সুরুজ ,ধারমারা, এলামেন্ডা, জুমু জবা, কার্নিভাল কর্ডিলাইন, ডুরান্ডু, কুপিয়া ও কাটামেহেদিসহ শতাধিক প্রজাতির বিরল উদ্ভিদ। এছাড়া রয়েছে অর্কিড ও ক্যাকটাস হাউজ। আছে পরিচিত অপরিচিত ফুল, ফল, পাতাবাহার ও ভেষজ উদ্ভিদও।

সরেজমিন দেখা যায়, পাহাড়ের মাথায় বিরল উদ্ভিদ উদ্যান। পাহাড়ের গায়ে পাকা সিঁড়ি। উপরে উঠতে দুই পাশে অভ্যর্থনা জানাবে পাতা বাহার, মুসুন্ডা ও জবা। সবুজ ঘাসের ওপরে হাঁটতে গিয়ে মনে হবে সংবর্ধনার কার্পেটে হাঁটছেন। চারদিকে সবুজের মেলা। মাঝে বর্ণিল ফুলের উঁকিঝুঁকি। সবুজ দেখতে দেখতে চোখে মনে নেমে আসবে অপার্থিব প্রশান্তি। প্রাণভরে নেয়া যাবে নির্মল বাতাস। সেখানে হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে দেহ মনের যতো ক্লান্তি। এক ডাল থেকে আরেক ডালে উড়ে বেড়াচ্ছে নানা প্রজাতির পাখি। প্রজাপতি ও মৌমাছিরা খেলা করছে ফুলে ফুলে। বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে ফুলের ঘ্রাণ। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথের নির্জনতায় একইসাথে এত প্রজাতির বিরল উদ্ভিদ ও ফুলের সুবাস বিমোহিত করবে যেকোনো দর্শনার্থীকে।
সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে ১৭ একর ভূমির ওপরে শুরু হয় বিরল উদ্ভিদ উদ্যানটির কাজ। ২০২০ সালে শুরুর দিকে উদ্যানটির এ অংশের কাজ সমাপ্ত হয়। ২০২০ সালের ৭ নভেম্বর এ উদ্যানটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের প্রধান বন রক্ষক মোঃ আমির হোসেন। এতে প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও ছাত্রদের জন্য প্রবেশমূল্য পাঁচ টাকা এবং বিদেশি পর্যটকদের জন্য প্রবেশমূল্য ৪০০ টাকা। উদ্যানটির ভেতরে আছে পার্ক অফিস। নারী ও পুরুষ পর্যটকদের জন্য রয়েছে আলাদা শৌচাগার।

কুমিল্লা বনবিভাগ কার্যালয় থেকে জানা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় লাগোয়া লালমাই পাহাড়ের চূড়ায় স্থাপিত এ উদ্যানের আশেপাশে তিনভাগে বনবিভাগের আরও ৩৩ একর জায়গা রয়েছে। এটিকে আরও সম্প্রসারিত, পর্যটনমুখী ও বন্য প্রাণীর অভায়রণ্য করে তুলতে দরকার আরও ৩০ একর জায়গা। মোট ৮০ একর জায়গা হলে একটি পরিকল্পিত দৃষ্টিনন্দন বিরল উদ্ভিদকেন্দ্র ও বন্যপ্রাণীর অভায়ারণ্য হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করেন বন কর্মকর্তারা।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কাউসার হামিদ জানান, ‘উদ্যানটিতে একাধিকবার গিয়েছি। চমৎকার জায়গা, যাতায়াত ব্যবস্থাও ভালো। আশেপাশে শালবন বৌদ্ধবিহারসহ অনেকগুলো ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা রয়েছে। কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনামাফিক কাজ করলে অনায়াসেই পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারবে।’

কুমিল্লার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নুরুল করিম জানান,‘ উদ্ভিদ উদ্যান কেন্দ্রটি করা হয়েছে এ প্রজন্মকে শেখানোর জন্য। শিক্ষার্থীরা বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদগুলো দেখে জ্ঞানার্জন করবে। তাই তাদের জন্য সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক নামমাত্র মূল্যে টিকিট নির্ধারণ করা হয়েছে।’

এ কর্মকর্তা আরও জানান, ‘আমাদের ৫০ একর জায়গা আছে। আরও ৩০ একর জায়গা হলে একটি পরিকল্পিত উদ্ভিদ উদ্যান কেন্দ্র ও বন্যপ্রাণীর অভায়রণ্য গড়ে তোলা সম্ভব।’

বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের প্রধান বন রক্ষক মোঃ আমির হোসেন বলেন, ‘কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের কাছাকাছি লালমাই পাহাড়ের গড়ে তোলা হয়েছে উদ্যানটি। কুমিল্লাবাসীর ফুসফুস হিসেবে কাজ করবে উদ্যানটি। বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ থাকায় শিক্ষার্থী ও শিশুরা উদ্ভিদ সম্পর্কে ধারণা পাবে। বর্তমানে ১৭ একর জায়গাজুড়ে রয়েছে উদ্যানটি। সব মিলিয়ে ৫০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হবে। একটি উদ্ভিদ জাদুঘর তৈরিই আমাদের লক্ষ্য।’