সড়ক নয় যেন ধানের বীজতলা!

 

আবদুল্লাহ আল মারুফ।।
এক হাতে জুতা। আরেক হাতে বোঝা। পিচ্ছিল সড়কে পড়ে যাওয়ার আশংকা। তাই সঙ্গে এনেছেন ১২ বছরের নাতিকে। মাঝপথে দেখা হয় প্রতিবেশী রাহেলার সঙ্গে। রাস্তার এমন দশা কবে থেকে প্রশ্ন করতেই শুরু হয় রাহেলার কান্না। তার প্রশ্ন ‘ভাঙা সড়কে আর কয় কাল?’
রাহেলার মতো সড়কে চলা ৫ হাজারের বেশি বাসিন্দার অবস্থাও একই। বর্ষা এলে এই দুর্ভোগে পড়েন তারা। রাহেলার অভিযোগ চেয়ারম্যান যায় চেয়ারম্যান আসে। কিন্তু বছরের পর বছর এই সড়কের আশপাশের বাসিন্দাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। অথচ আশপাশের কোন সড়কেরই এমন বেহালদশা নেই। সড়ক নয় যেন ধানের বীজতলা। কাদায় একাকার।
বলছি কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার গালিমপুর ও দক্ষিণ শিলমুড়ি ইউনিয়নের মধ্যবর্তী একটি সড়কের কথা। সরেজমিনে স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, এই সড়কটি বরুড়া উপজেলার গালিমপুর ও দক্ষিণ শিলমুড়ি ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থানে পড়েছে। যেকারণে এক ইউনিয়ন বলছে এটা অন্য ইউনিয়নের সড়ক। তাই কোন সময় এই সড়কটি পাকা করা হয়নি। এর আগের স্থানীয় সংসদ সদস্যরা এসে আশ্বাস দিয়ে গেলেও কেউ মাটিও ফেলেনি। সড়কটি উপজেলার গালিমপুর ইউনিয়নের ঘোষ্পা গ্রাম থেকে দক্ষিণ শিলমুড়ি ইউনিয়নের শিয়ালোড়া, জয়াগ হয়ে পাশের উত্তর শিলমুড়ি ইউনিয়ন ও একই ইউনিয়নের আলোকদিয়াগ্রাম, গোবিন্দপুর, সুলতানপুরে মিলেছে।
রাহেলা বেগম নামের স্থানীয় ওই বাসিন্দা জানান, স্বামীর বাড়ি এটি। বিয়ের পর থেকে আজ অবধি এই সড়কের অবস্থা এমনই দেখে আসছেন। শুকনো মৌসুমে রাস্তা ভালই থাকে। কিন্তু বর্ষা এলেই সামান্য বৃষ্টিতে কাদামাটিতে রাস্তা আর জমি চেনার উপায় থাকেনা। কেউই জুতা পরে এই সড়কে নামার সাহস করেন না। খারাপ সড়কের কারণে কেউ এই এলাকার মানুষের সাথে আত্মীয়তা করতে চান না।


তিনি আরও জানান, আমাদের এই সড়ক আসলে কোন ইউনিয়েনের সেটা নিয়েই যত ঝামেলা। একজন আরেকজনকে দেখিয়ে দেখিয়ে সময় পার করে দেন। কাজ আর হয়না। তাই এই এলাকার মানুষের দিকে তাকিয়ে সড়কটি পাকাকরণের দাবি তার।
মো. জিসান নামের এক স্কুল ছাত্র বলেন, এই সড়কের কোন বিকল্প আমাদের নেই। স্কুলে যাওয়ার সময় এই সড়ক ব্যবহার করলে আমাদের ইউনিফর্ম ময়লা হয়ে যায়। পরে আমাদের বন্ধুরা আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করেন। আমরা ছোটবেলা থেকে এই সড়কের একই অবস্থা দেখে আসছি।
শিয়ালোড়া গ্রামের বৃদ্ধ আবদুল মালেক বলেন, শুধু শুনি কাজ হবে। কবে হবে সেটাই আমরা জানিনা। আমার মেয়ের বিয়ে দিতেও যা প্রশ্নের সম্মুখিন হয়েছি। আমরা একবারে ২৬ হাজার টাকা দিয়ে ইটের সুড়কি এনে রাস্তায় ফেলেছি। কি করবো? আর সহ্য হয়না। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
গালিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাচ্চু মিয়া বলেন, আমি চেয়ারম্যান হয়েছি মাত্র ২ মাস। এই রাস্তা গুলো অনেকদিন ধরেই কাঁচা। আমি আসার পরই বিভিন্ন স্থানে ইটের আদলা ফেলেছি এবং মেরামত করেছি। এই সড়কটিরও করবো। এখন কাঁদামাটিতে ইট ফেললে উপকারের বদলে মানুষের আরও ক্ষতি হবে। তাই শুকালে করবো। তবে এখানে আমার ইউনিয়নে পড়েছে মাত্র ১০০ ফিটের মতো রাস্তা। বাকিটা দক্ষিণ শিলমুড়ি ইউনিয়নে পড়েছে।
দক্ষিণ শিলমুড়ি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন ভূইয়া বলেন, এই রাস্তার কিছু অংশ আমার ইউনিয়নে পড়েছে। সম্প্রতি এই এলাকায় ৪টি রাস্তার কাজ করেছি। এটার কাজ সামনে করবো। আমাদের মাথায় আছে।