সদর দক্ষিণে মেশিনে ধান লাগানোর উৎসব

ধান লাগালেন ডিসি ও ডিডি
মহিউদ্দিন মোল্লা।।
কুমিল্লার তিন উপজেলার প্রায় ৮০০ একর জমিতে এবার ট্রান্সপ্লান্ট রাইস মেশিনের সাহায্যে বোরো ধান রোপণ হচ্ছে। সোমবার কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলায় এই পদ্ধতিতে ধান লাগানোর উদ্বোধন করা হয়। উপজেলার চৌয়ারা ইউনিয়নের বিবাড়িয়া গ্রামে কৃষক মোস্তফা মজুমদারের জমিতে মেশিনের মাধ্যমে ধান লাগানো উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক(ডিসি) মোহাম্মদ শামীম আলম ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক(ডিডি) মো. মিজানুর রহমান । এই নিয়ে এলাকায় উৎসবের আমেজ দেখা যায়। ধান লাগানোর মাঠে ডিসি ও জেলা কৃষির প্রধান কর্মকর্তাকে দেখে কৃষকদের উচ্ছ্বসিত হতে দেখা গেছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ২০ মিনিটে ৩০ শতাংশ জমির ধান রোপণ করা হয়েছে। এসময় নতুন পদ্ধতির চাষ দেখতে গ্রামের ৫শতাধিক কৃষক ভিড় করেন। এতে চাষাবাদে খরচ কমবে। বাড়বে ফসল উৎপাদন। এর আগে চৌয়ারা ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে রবি মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বোরো ধানের সমলয়ে চাষাবাদের উদ্বোধন ও কৃষক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম। বিশেষ অতিথি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাবলু,উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা আক্তার পুতুল ও চৌয়ারা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুল বাশার চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুভাশিস ঘোষ। উপস্থাপনা করেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা গাজী মোঃ আবুল হাসনাত।

বক্তারা বলেন, রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের সাহায্যে মাত্র ২৫-৩০ দিনের সঠিক বয়সের চারা রোপণ সম্ভব হয়। এতে ধানের জীবনকাল ১০-১৫ দিন কমে আসে। তাছাড়া মেশিনের সাহায্যে রোপণে সঠিক গভীরতায় চারা রোপণ সম্ভব হয়। যার কারণে প্রতি গুছিতে কুশির সংখ্যা বেশি হয়। এতে ফলন ১০-১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
বি-বাড়িয়া গ্রামের কৃষক আবদুল লতিফ বলেন, আইছে ধান লাগানোর মিশিন। আর শ্রমিক নিয়া নাই কোন টেনশান! দুই বিঘা জমিতে ধান লাগাইতে কমপক্ষে আট হাজার টাকা লাগতো। এখন মাত্র দুই হাজার ৪০০ টাকা লাগবে।


উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুল বাশার চৌধুরী বলেন, লেবারের মাধ্যমে ধান লাগালে প্রতি কানিতে ২৪০০ টাকা খরচ হতো। সেখানে মেশিনে লাগালে ১৪০০টাকা লাগবে। বেঁচে যাবে সময়। এছাড়া ৫০ একর জমির বীজতলা করতে ৪০শতক জমি লেগেছে। সেখানে অন্য সময় কয়েক গুণ বেশি জমি লাগতো। রাইস ট্রান্সপ্লান্ট মেশিনের মাধ্যমে ধান লাগানো দেখতে মানুষের ভিড় লেগেছে। ফসল উৎপাদন বেড়ে বেড়ে গেলে মানুষের আগ্রহ আরো বেশি বাড়বে।


কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, এবার সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ হচ্ছে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ, বুড়িচং ও লাকসামে। জেলার মোট ৮০০একর জমিতে এবার সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ হবে। কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। কৃষকদের মধ্যে সাড়া পড়েছে। আগামীতে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ বাড়বে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব। সরকার সার,বীজ ও যন্ত্রপাতিতে ভুর্তুকি দিচ্ছে। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিন ক্রয়ে সরকার ৫০ভাগ ভর্তুকি দিচ্ছে। কোথাও ৭০ভাগ ভর্তুকিও দিচ্ছে। চাষাবাদে প্রযুক্তির ব্যবহারে উৎপাদন বাড়বে। এই পদ্ধতি আমাদের খাদ্য নিরাপত্তায় ভালো ভূমিকা রাখবে।