সরকার ভগবান নয়— মমতা

 

আগামী দু’মাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে করোনার সংক্রমণ, এমনটাই আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। এই বাস্তবতা সরাসরি মেনে নিয়েও বাংলার মানুষকে অহেতুক আতঙ্কে না-ভোগার পরামর্শ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে প্রশাসনকেও নির্দেশ দিয়েছেন, মানুষকে আরও সচেতন করুন। তাদের ভয় ভাঙান। কিন্তু তাতেই চারিদিকে সরকারের সমালোচনা প্রসঙ্গে তিনি বৃহস্পতিবার ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘সরকার ভগবান বা ম্যাজিশিয়ান তো নয়। এটা বিরাট বড় সমস্যা, আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। কিন্তু সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে।’

দিকে-দিকে কোয়ারানটিন সেন্টারে পরিষেবা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। সেই প্রসঙ্গেও মুখ্যমন্ত্রী এদিন ক্ষোভের সঙ্গে বলেন,‘কেন ক্রমাগত এ রাজ্যকে গালাগালি করা হচ্ছে! সামনের বছর ভোট বলে? কেন্দ্র কী সাহায্য দিয়েছে আমাদের? তারপর বাংলা যেভাবে কাজ করছে, আর কেউ করছে না।’ সাধারণ মানুষের উদ্দেশেও তিনি বলেন, ‘সরকার একা কত করবে বলুন তো! আমাদেরও তো একটা লিমিটেশন আছে। বিনামূল্যে চিকিৎসা, রেশন, বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা, উম্পুনের ত্রাণ! একসঙ্গে সব করা সম্ভব বলুন তো?’

বিজ্ঞাপন

এদিন তিনি ফের দাবি করেন, ‘একমাত্র বাংলাতেই কেন্দ্রের সহযোগিতা ছাড়াও কারও টাকা আটকানো হয়নি। সমস্ত কর্মীরা মাইনে পেয়েছেন। তা সত্বেও অনেকে নিন্দা করে চলেছেন।’ রাজ্যজুড়ে করোনা চিকিৎসার জন্যে আরও ৪ হাজার বেড বাড়ানো হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমের একাংশ যে ভাবে ওষুধ না-পাওয়া বা বেড না-থাকার বিক্ষিপ্ত ঘটনা নিয়ে যে ভাবে প্রচার করছে, মুখ্যমন্ত্রী তারও সমালোচনা করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘মানুষ এমনিতেই চিন্তায় রয়েছে, তাঁদের অযথা আরও আতঙ্কিত করবেন না, আর্টিফিসিয়াল ক্রাইসিস তৈরি করবেন না। আমাদের রাজ্যে গণতন্ত্র বেশি বলে এটা করা তো ঠিক নয়। আমরা বিজেপির মতো অ্যাডভাইসারি দিই না, গেটে তালা লাগাই না।’

বস্তুত কেন আগামী দু’মাসে ব্যাপক হারে সংক্রমণ বাড়বে? মুখ্যমন্ত্রী বুধবারই জানিয়েছিলেন, ‘এই ক’দিন আক্রান্তের সংখ্যাটা বাড়বে। কারণ, আমরা টেস্টিং, ট্রেসিং এবং ট্র্যাকিং আরও বাড়াব। স্বাভাবিক ভাবেই সংখ্যা বাড়বে। এই দুটো মাস এক্সপার্টরা বলছেন সংক্রমণ পিকে উঠবে। সারা পৃথিবীতেই এটা বাড়ছে।’ একই কথা তিনি এদিনও উল্লেখ করেছেন।

তবে, কলকাতার সংখ্যাটা এত বেশি হওয়ার কারণ শুধুমাত্র কলকাতার বাসিন্দারা নন, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাঁরা করোনা চিকিৎসার জন্যে কলকাতায় আসছেন, তাঁদের সংখ্যাটাও কলকাতার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়, তাই তা অনেকটা বেশি লাগছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

যদিও রাজ্যের নানা হাসপাতালে বেড অমিল, এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে কিছু মানুষের। এই ধারণাও ভালো রকম ছড়িয়েছে মানুষের মধ্যে, যেখান থেকে ভীতির সঞ্চার হচ্ছে। কোভিড আক্রান্তের মৃতদেহ দীর্ঘ সময় পড়ে থাকার মতো বিক্ষিপ্ত অভিযোগও আসছে কিছু কিছু জায়গা থেকে।

এগুলো যাতে না-হয়, সে জন্যই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা তো কোনও ম্যাজিকবলে মহামারীকে আটকে দিতে পারব না। সচেতনতাই সবচেয়ে বড় ম্যাজিক।’ এদিন তিনি ফের বলেন, ‘দোকান-বাজার বা বাইরে যেখানেই যান, সচেতন থাকুন। ম্যাক্সিমাম সতর্কতা নিলেও ওখান থেকেই আমাদের ভুলবশত রোগটা ছড়ায়। তাই সচেতনতা দরকার। যাঁদের শরীরে অল্প মাত্রায় সংক্রমণ রয়েছে, তাঁরা অনায়াসে বাড়িতে থাকতে পারেন। ভয় পেয়ে হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।’