সাংবাদিকতা পেশায় আসা এবং আমাদের রাব্বী ভাই

 

।। প্রদীপ সিংহ রায় মুকুট ।।
বাস্তব জীবনেতো অনেক ধরণের পেশাই রয়েছে । তবু কেন সাংবাদিকতা পেশায় এলাম বা এ পেশা বেছে নেবার পেছনে কোন ঘটনা বা অণুপ্রেরণা কাজ করেছে ? এমন ধরণের একটা নিবন্ধ লিখবার জন্যে হপ্তা খানেক আগে যখন কুমিল্লা তথা দেশের অন্যতম প্রাচীন সংবাদপত্র সাপ্তাহিক আমোদ-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সহকর্মী-বন্ধু-ছোটভাই মহিউদ্দিন মোল্লা অনুরোধ করলো তখন হতবাক হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিলনা। অন্তত: আমার কাছে। সেইদিনই (এপ্রিল ১৮, ২০২২ খ্রী:) খাতা-কলম নিয়ে বসে পড়লাম। কিছু একটা লিখবার জন্যে। তা বিদগ্ধ পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য হোক কী পরিত্যাজ্যই হোক, বিবেচনায় না নিয়ে।
প্রচ- বুদ্ধি সম্পন্ন ও সাংবাদিকতা পেশার প্রতি নিবেদিতপ্রাণ মোল্লা এত অল্প বয়েসেই পেশার জন্যে অবশ্য প্রযোজ্য যে সিঁড়ি তা লঙ্ঘন করে ফেলেছে। সফলভাবে । তা বিষয়বস্তু নির্ধারণে আমায় লেখার কার্যাদেশ দেয়া থেকেই বোধগম্য হয়েছে। সঙ্গে সে একটা সবল যুক্তিও দাঁড় করিয়েছে। আজকালকার পাঠক মাত্রই গুরুগম্ভীর ও চাঁচাছোলা প্রসঙ্গের লেখনী বেশি পছন্দ করেন না । তার চাইতে স্মৃতিচারণমূলক লেখার প্রতি এদের আগ্রহ বা পছন্দ বেশি। সেদিন মোল্লা বলেছিল। আমার লেখার বিষয়বস্তুটি নির্ধারণ সম্পর্কে ।

( মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী ও তার পরিবার।)

আমাদের অকৃত্রিম সুহৃদ ও আপনজন ন্যাশানাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), কুমিল্লা জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নির্লোভ বাম নেতা সম্প্রতি প্রয়াত জাকির হোসেনের ওপর যে স্মারকগ্রন্থ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে তাতে লিখেছিলাম-কোন লেখা আমি সরাসরি কম্পিউটারেই কম্পোজ করতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করি। বন্ধু জাকিরের ওপর লিখতে গিয়ে এই প্রক্রিয়ার ব্যত্যয় ঘটাতে হয়। শুধুমাত্র জাকিরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও পারস্পরিকভাবে আমরা দুজনা কাছে আসবার কারণে ।
সাপ্তাহিক আমোদ-এর নিরবিচ্ছিন্ন প্রকাশনার ৬৮তম বছওে পদার্পণ উপলক্ষ্যে যে ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে তাতে লিখতে গিয়েও প্যাড-কলম নিয়ে বসতে হলো। এখানেও আমোদ পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘদিনের আমার সখ্য, হৃদ্যতা, মনস্তাত্বিক নৈকট্য বা সাইকোলজিক্যাল এ্যাটাচমেন্ট এবং আন্তরিকতা কাজ করেছে । ফলশ্রুতিতে কম্পিউটারে বসার আগে খেরোখাতা আর কলমের ব্যবহার প্রাধান্য পেয়েছে। কেননা পাছে কোন উপস্থাপিত তথ্য, কথা ও প্রসঙ্গ বাগাড়ম্বর বা অসত্য বলে তিরস্কার পায়। সেই আশঙ্কা থেকে।
কেমন করে সাংবাদিকতা পেশায় এলাম বা কেনইবা এ মহান পেশাকে একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে গণ্য করলাম তা বলতে গেলে অবধারিতভাবেই ঐতিহ্যবাহী আমোদ-এর প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক মরহুম ফজলে রাব্বী তথা আমাদের প্রিয় রাব্বী ভাইয়ের কথা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসবে। তার আগে সাংবাদিকতা পেশার প্রতি আগ্রহ বা অণুপ্রেরণার উৎস সম্পর্কে অল্পবিস্তর আলোকপাত করবার প্রশ্রয় পাচ্ছি।
ষাটের দশকে ইংরেজি দৈনিক তদানীন্তন পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকার কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি প্রয়াত আতিকুর রহমানকে দেখে এবং তার পেশাগত দৈনন্দিন কাজকর্ম প্রত্যক্ষ করে সাংবাদিকতায় আকৃষ্ট হই। আতিক ভাই দেশের স্বাধীনতার কৃতিত্বধারী আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘ একুশ বছর পর ক্ষমতায় এলে নয়া দিল্লিতে বাংলাদেশের প্রেস মিনিস্টার হিসেবে নিয়োগ পান। পরবর্তীকালে আতিক ভাই আমার বড়ভাই সহকর্মী হিসেবে খুব কাছের মানুষ এবং পেশাগত বন্ধু বনে যান । কতদিন যে জাতীয় প্রেস ক্লাবে একই টেবিলে বসে তাঁর সঙ্গে আড্ডা দিয়েছি তা বলে বোঝানো যাবেনা । সময় সময় তিনি আমায় সৎ, গঠনমূলক এবং বাস্তববাদী পরামর্শ ও উপদেশ দিয়েছেন। বিশেষত: যখন বেকার জীবন কাটাচ্ছি। ঢাকায়।
৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে সদ্য অবলুপ্ত দ্য ডেইলি মর্নিং সান বন্ধ হয়ে যাবার পর। তখন আতিক ভাই সাপ্তাহিক ঢাকা ক্যুরিয়ার পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি আমায় বললেন, ঢাকা সিটি করপোরেশনের সামগ্রিক কর্মকা-, এর বিভিন্ন ইনহেরেন্ট (জন্মগত ও পুঞ্জিভূত) সমস্যা, প্রতিকূলতা এবং রাজধানীবাসীকে সেবা প্রদানে সাফল্য ও ব্যর্থতা এবং নতুন নির্বাচিত মেয়র সাহেবের নেতৃত্বের ওপর বিস্তারিত একটা রিপোর্ট তৈরি করবার জন্যে । আমি তার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরেই পালন করেছিলাম । পরবর্তীতে একদিন নতুন সকালে দেখলাম কভার স্টোরি হিসেবে নামসহ রিপোর্টটি ছাপা হয়েছে। আমার দু:সহ বেকারজীবন কালে। নানা মহল থেকে উচ্চকিত প্রশংসাও জুটেছিল সেসময়। পেশাগত জীবনে তাঁর অবদান ও অণুপ্রেরণা চিরদিন আমার হৃদয়ে থাকবে। সেসময় ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রথম সরাসরি ভোটে নির্বাচিত মেয়র ছিলেন তুখোড় বাগ্মী ও বরেণ্য রাজনীতিক মোহাম্মদ হানিফ ।
প্রাথমিকভাবে সেই ষাটের দশকের প্রথম ভাগে একজন লম্বা হালকা-পাতলা সাদা প্যান্ট-শার্ট পরা কাঁধে বক্স ক্যামেরা ঝোলানো এক সাদাসিদা ব্যক্তিত্বকে দেখে এবং তার বিষম ঝঞ্জাশঙ্কুল কর্মকা- প্রত্যক্ষ করে সাংবাদিকতা পেশার প্রতি প্রথম অনুরক্ত হই । না জেনে। কোন প্রাক অভিজ্ঞতার আঁচ পাওয়ার প্রারম্ভেই। তিনি আর কেউ নন আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় ও আপনজন মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী, আমাদের অগ্রজ সবার প্রিয় রাব্বী ভাই।

একদিন বিকেলবেলায় কুমিল্লা শহরের তালপুকুরপাড়ের স্ট্রিট হাইড্রেন্ট বা জলের কল রাব্বী ভাইকে দেখাচ্ছিলেন অ্যাডভেকেট সরোজেন্দু রায়। আমাদের কানুদা । যে জনগণের জন্যে নিত্য ব্যবহার্য বিশুদ্ধ পানির কল তা দিয়ে কখনো কেঁচো কখনো অন্যান্য কীটপতঙ্গ বা পোকা-মাকড়ের মতো আবর্জনা বেরিয়ে আসছে। রাব্বী ভাই বক্স ক্যামেরা (সম্ভবত: ইয়াশিকা) দিয়ে অনেকগুলো ছবি তুলে নিলেন। পাড়ার কিছু পুরুষ-মহিলা ভোক্তার সঙ্গে কথা বললেন। তারপর যথারীতি পরের সপ্তাহে ছবিসহ আমোদে বেশ বড় রিপোর্ট প্রকাশিত হল। তখনকার আমলে ঢাকা থেকে ছবির ব্লক করিয়ে এনে কোন সংবাদ ছাপা হতো। কুমিল্লা থেকে ঢাকা যেতে কমপক্ষে চার চারটা বড় নদী পেরুতে হতো। এত ঝক্কি ঝামেলা সয়েও নাগরিকদের প্রতি খবরের কাগজের দায়বদ্ধতা, দায়িত্ববোধ ও মমত্ববোধ থেকে তিনি এই জনগুরুত্বপূর্ণ সংবাদটি কভার করেন। খবরটি পাঠকপ্রিয় আঞ্চলিক সংবাদপত্র আমোদে ছাপা হওয়ার পর কাজ হয়েছিল অবধারিতভাবে। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ স্বাভাবিকভাবেই বিহীত ব্যবস্থা নেয়। তারপর থেকে পাইপলাইন মেরামত করবার ফলে খাবার জন্যে উপযুক্ত পানি সরবরাহ আবার শুরু হয় । এ ঘটনাটা আমার কৈশোর-যৌবনের প্রান্তসীমায় অবস্থানকালে বেশ নাড়া দেয়। কানুদাকে তখন জিজ্ঞেস করেছিলাম–এই সফেদ প্যান্ট-শার্ট পরা ভদ্রলোকটি কে, কী তার কাজ (পেশা)। কানুদা সবিস্তারে তখন প্র¹লভ হয়ে রাব্বী ভাই সম্পর্কে আমায় অবহিত করেছিলেন । যা আমি উপরের অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছি । তাঁর এহেন জনহিতকর কর্মকা- আমায় অণুপ্রাণিত করেছিল বলাইবাহুল্য । এ ঘটনাটি তখন থেকেই সাংবাদিকতা পেশা হিসেবে বেছে নিতে উসকে দেয় আমায়। এবেলা জানিয়ে রাখি আমোদ সম্পাদক মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী ও পরবর্তীতে সম্পাদনার দায়িত্বপ্রাপ্ত তার স্ত্রী বেগম শামসুন্নাহার রাব্বী আমাদের কাছে প্রকৃতঅর্থেই সৎ, আন্তরিক ও নির্লোভ সাংবাদিকতার এক জ¦লন্ত ও অনুকরণীয় উদাহরণ ।
১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায়  স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করে পৈত্রিক দোকানে পেটেভাতে চাকরি করবো বলে কোন পত্রিকায় যোগদান করিনি। অবশ্য ১৯৮১ সালের অক্টোবরে দৈনিক দ্য নিউ নেশান পত্রিকায় কুমিল্লা প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিলেও ১৯৮৩ সালের আগে আমার কোন লেখা আমোদে ছাপা হয়নি। ১৯৮৩ সালে বিশ^কাপ ক্রিকেট-এর ওপর একটা কার্টেন রেইজার বা পর্দা-উত্তোলনকারী নিবন্ধ-রিপোর্ট লিখেছিলাম। সহকর্মী-বন্ধু আবুল হাসনাত বাবুলের অনুরোধে। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ক্রিকেটিং (খেলুড়ে) দেশগুলোর শক্তি, সামর্থ, কমপোজিশান এবং কাপটি সম্ভাব্য কোন দেশ জিততে পারে তার ওপর নিবন্ধটি লেখা হয়। বেশ গুরুত্ব দিয়ে সে বছরের বিশ^কাপ ক্রিকেট শুরু হবার আগেই ছাপা হয়েছিল ঐতিহ্যবাহী সংবাদপত্র আমোদে। ওইটাই ছিল আমোদে প্রকাশিত আমার প্রথম কোন লেখা । হরষিত ও আন্দোলিত হয়েছিলাম তখন স্বাভাবিকভাবেই ।
অবশ্য ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে (তখনো গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ হিসেবে গড়ে ওঠেনি) লিখিত পরীক্ষা দেবার পর মৌখিক (ভাইবা) পরীক্ষায় আমায় এক্সটারনাল বা বহি:স্থ একজন পরীক্ষক (সম্ভবত: বরেণ্য সাংবাদিক প্রয়াত নির্মল সেন) জিজ্ঞেস করেছিলেন কেন সাংবাদিকতায় আসতে চাই । জবাবে আমি বলেছিলাম, সমগ্র ত্রিপুরা অঞ্চলের (তখন বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা অবিভক্ত ভারতের ত্রিপুরা প্রদেশের অর্ন্তগত ছিল) প্রথম সংবাদপত্র “ত্রিপুরা হিতৈষী” প্রকাশ করেছিলেন আমার প্রপিতামহ গুরুদয়াল সিংহ । কালক্রমে দেশের প্রথম মহিলা সম্পাদক হিসেবে পত্রিকাটির দায়িত্ব নেন আমার পিতামহী ঊর্মিলা সিংহ । অবশ্য কালের প্রবাহে বেশ কিছু বছর চলার পর পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায় ।
আরো যোগ করেছিলাম, সাংবাদিকতা বিভাগে যদি পড়াশুনা করবার সুযোগ পাই তাহলে অধিত বিদ্যা কাজে লাগিয়ে পত্রিকাটি কুমিল্লার প্রথম মুদ্রণযন্ত্র সিংহ প্রেস থেকে পুন:প্রকাশ করবার অভিপ্রায় আছে । বলে রাখা বুঝি অত্যুক্তি হবেনা বরেণ্য শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক-কাম-বাম নেতা নির্মলদা আমাদের পারিবারিক বন্ধু ছিলেন। অনুরূপ প্রশ্ন আমায় করা হয়েছিল এম.এ ফাইনাল পরীক্ষার মৌখিক প্রশ্নোত্তর পর্বে। যদিও মুদ্রণ-প্রক্রিয়ায় “ত্রিপুরা হিতৈষী” দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি তবে এর একটা মুদ্রিত কপি আমায় দেখিয়েছিলেন খ্যাতিমান সাহিত্যিক-গবেষক “কুমিল্লার ইতিহাস” গ্রন্থের সম্পাদক প্রয়াত অধ্যাপক তিতাশ চৌধুরী।
অনুপ্রেরণার উৎসগুলো বললাম। তারপরও পর আছে । ১৯৭৫ সনের শেষভাগে পৈত্রিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শতাব্দী-প্রাচীন সিংহ প্রেস চালাবার দায়িত্ব আমার ওপর বর্তায়। ১৯৯০ পর্যন্ত তা বলতে গেলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সম্পাদন করেছিলাম । সঙ্গে ১৯৮১ সাল থেকে তৃণমূল পর্যায়ে সাংবাদিকতা পেশাও নির্বাহ করেছি। সে কঠিন সময়ে কুমিল্লা প্রেস কøাবের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও কাঁধে তুলে দেয়া হয়েছিল। এক সভায় অগ্রজ সাংবাদিক নেতা আফতাবুর রহমান, গোলাম মোস্তফা চৌধুরী, কাজী মমতাজ উদ্দিন, সহকর্মী-বন্ধু রেজাউল করিম শামীম, আলী হোসেন চৌধুরী, আবুল হাসনাত বাবুল, নূরুর রহমান বাবুল, অশোক বড়–য়া, মাহফুজুর রহমান, মাহবুবুল আলম, তপন সেনগুপ্ত, বাকীন রাব্বী এবং বদিউল আমিন দুলাল প্রমুখ-এর উপস্থিতিতে কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব আমার কাঁধে তুলে দেয়া হয়। তাদের সামগ্রিক সমর্থন ও সহযোগিতায় সে গুরুদায়িত্ব এক অনভিপ্রেত সময়ে এপ্রিল, ১৯৯০ পর্যন্ত নির্বাহ করে দৈনিক দ্য নিউ নেশান পত্রিকায় ঢাকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগ দিই। একটা কথা যোগ না করলেই নয় । আমার পিছনে প্রচ্ছন্নে ছিলেন দৈনিক রূপসী বাংলা সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল ওহাব এবং রাব্বী ভাই-এর মতো অগ্রজ বা সিনিয়ররা ।
এই প্রসঙ্গে মনে পড়ছে, শ্রদ্ধেয় রাব¦ী ভাই কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমার কাছে অনুরোধ করেছিলেন সফররত ফিলিপিন্স-এর স¦নামধন্য একজন সাংবাদিককে, যিনি তাঁর পূর্ব পরিচিত, যেন আমরা সংবর্ধনা প্রদান করি। তিনি আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে গণবিদ্রোহে সে দেশের স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট ফার্র্ডিনান্ড মার্কোসের পতনের পর বাংলাদেশ সফর করেন । আমরা তখন আদ্য-প্রান্ত ঝাড়পোছ করে আমাদের জন্যে (কুমিল্লা প্রেস ক্লাব) বরাদ্দকৃত রাজগঞ্জে রূপকথা সিনেমা হলের দ্বিতীয় তলায় তার সংবর্ধনা সভার আয়োজন করেছিলাম। অগ্রজ সাংবাদিক রাব¦ী ভাই-এর অনুরোধের মর্যাদা দিয়েছিলাম । বিশেষ করে মোস্তফা ভাই (গোলাম মোস্তফা চৌধুরী) ও অন্যান্য সহকর্মী-সদস্যরা তখন যথেষ্ট সহযোগিতা করেছিলেন। যেন প্রকৃতঅর্থে মতবিনিময় সভাটি সফল হয় । আমরা সফররত ফিলিপিনো সাংবাদিকের কাছ থেকে স্বৈরাচারী মার্কোসের দুর্বিসহ দু:শাসনামলের গণ-নিগ্রহের একটা স্বচ্ছ বর্ণনা শুনে ধন্য হয়েছিলাম । প্রশ্নোত্তর পর্বে ।
আমার তৃণমূল পর্যায়ে সাংবাদিকতায় যুক্ত হওয়ার জন্যে বিভিন্ন সময় সহকর্মী-বন্ধু অধ্যাপক আলী হোসেন চৌধুরী, আবুল হাসনাত বাবুল ও ছোটভাই-বন্ধু অধ্যাপক সমীর মজুমদার প্রধান ভূমিকা নিয়েছেন ও প্রচ- জোর এবং অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। বলতে গেলে আমার মতো অলস প্রকৃতির একজনকে, যাকে ইংরেজিতে আনউইলিং হর্স হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। একপ্রকার টেনেহিঁচড়ে সাংবাদিকতার মতো মহান পেশায় নিয়ে এসেছেন । তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং ধন্যবাদ জানাচ্ছি ।
প্রত্যাশা করছি সাপ্তাহিক আমোদ-এর জয়যাত্রা অব্যাহত থাকুক এবং এর পাঠকপ্রিয়তা আগের মতো অবস্থানে যাক। সঙ্গে সঙ্গে ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমোদ-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব্বার শ্রীবৃদ্ধি ও মঙ্গল কামনা করছি।

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক, কুমিল্লা প্রেস ক্লাব।
মোবাইল: ০১৭৩১-৫১২৭২২