সারিবদ্ধভাবে শায়িত হলেন স্ত্রী-সন্তানসহ পাঁচজন

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।
সবকিছুই ছিলো ঠিকঠাক। আর মাত্র ৮ দিন পরই পরিবারের সবাইকে নিয়ে ইটালি যাওয়ার কথা কাউসারের। কিন্তু নিয়তি অন্যরকম। ইটালির বদলে পারিবারিক কবরস্থানে সারিবদ্ধভাবে ঠাই নিলেন স্ত্রী-সন্তানসহ পাঁচজন। শুক্রবার (০১ মার্চ) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুরস্থ গ্রামের বাড়ি সংলগ্ন মসজিদের মাঠে নামাজে জানাজার পর চিরনিদ্রায় শায়িত হন কাউসার, স্বপ্না, কন্যা শফিয়া, নূর ও আবদুল্লাহ্ নামের একই পরিবারের পাঁচজন। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানী ঢাকার বেইলী রোডের ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্টে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ৪৬ জনের মধ্যে ওরা পাঁচজন।
টানা ১৫ বছর ধরে ইটালি প্রবাসী সৈয়দ কাউসার। চার বছর পর দেশে আসেন মাস খানেক আগে। শুক্রবার গ্রামের বাড়িতে আসার কথা। ছেলের অপেক্ষায় ছিলেন মা হেলেনা বেগম। করা হয়েছিল বাজার-সদাইও। কাউসার বাড়ি ফিরছেন ঠিকই, তবে নিথর দেহে। স্ত্রী, তিন সন্তানও একই দশায়। শুক্রবার দুপুরে স্বজনরা পাঁচ মরদেহ নিয়ে রওনা হন। বাড়িতে তখন চলছিলো দাফনের প্রস্তুতি। বাড়ির সামনে সারি করে রাখা হয় পাঁচটি খাটিয়া। পারিবারিক গোরস্থানেও সারিবদ্ধভাবেই খোঁড়া হয় পাঁচটি কবর। বিকেল তিনটায় চারটি ফ্রিজিং গাড়িতে করে তাদের মরদেহ পৌঁছায়। মরদেহ বাড়িতে পৌঁছার পর স্বজন ছাড়াও গ্রামের শতশত মানুষ ভীড় জমান। বাদ আছর নামাজে জানাযা হয় বাড়ি সংলগ্ন মসজিদের পাশের মাঠে। পারিবারিক কবরস্থানে একই সারিতে দাফন করা হয় তাদের পাঁচজনকে। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার বেইলী রোডের ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্টে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে মারা যাওয়া সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউসার (৫০), তার স্ত্রী স্বপ্না (৩৫), মেয়ে সৈয়দ কাশফিয়া (১৭) ও সৈয়দা নূর (১৩) এবং একমাত্র ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহর (৭) মরদেহ দাফন করা হয় তাদের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুরে।
রাজধানী ঢাকার মধুবাগ এলাকায় নিজস্ব ফ্ল্যাটেই বসবাস করতেন কাউসারের পরিবার। তবে এবার সবাইকে ইটালি নিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো। আগামী ১০ মার্চ তারা ইটালি চলে যেতেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, এর আগে গত সপ্তাহে কাউসার একবার বাড়িতে এসেছিলেন। শুক্রবার এসে সোমবার পর্যন্ত থেকে একেবারে বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো। তিন ভাইয়ের মধ্যে কাউসার ছিলেন মেঝে। তার বড় ভাই সৈয়দ সোহেবও ইটালি থাকেন। আরেক ভাই সৈয়দ আল আমিন দেশে ব্যাংকে চাকরি করেন। তার পিতা মৃত আবুল কাশেম।
কাউসারের মা হেলেনা বেগম বলেন, ‘চার বছর ধরে পুত আইয়েনা, কতো ফোন দিছি পুতরে আইতো। বাজার-সাজার কইরা সাজাইয়া থুইছি, পুত আইতাছে। পুততো আইছে ঠিকই, তয় শেষ বিদায় লইয়া।’
সৈয়দ কাউসারের চাচাতো ভাই সৈয়দ আবুল ফারাহ তুহিন জানান, আজ (শুক্রবার) বাড়িতে এসে সোমবার পর্যন্ত থাকার কথা ছিলো। সন্তানদের জাতীয় পরিচয়পত্রের বিষয়ে উপজেলায় যাওয়ার কথা ছিলো আগামী রোববার। এর আগেই বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে কাউসার ও তার পরিবারের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হন তারা। এমন মৃত্যুর খবর বিশ্বাস হতে চাইছিলোনা কারোরই। মর্মান্তিক এই মৃত্যুতে শুধু কাউসারের পরিবার বা স্বজনরাই নয়, গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে মাতম। পরিবার নিয়ে ইটালি যাওয়া হলো না কাউসারের, পারিবারিক গোরস্থানে ঠাই নিলেন সারিবদ্ধভাবে। মাত্র এক মাস আগে ইতালি থেকে দেশে ফেরেন শাহবাজপুর গ্রামের আবুল কাসেমের ছেলে সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউসার। বৃহস্পতিবার রাতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে যান। সেখানে অগ্নিদগ্ধ হয়ে সৈয়দ কাউসার, তার স্ত্রী এবং তিন সন্তান অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান।