সীনাই খাল পুনঃখননে হাসি ফুটবে সাত হাজারের বেশি কৃষকের মুখে

আমোদ প্রতিনিধি।।
 
বিএডিসি,র ‘কুমিল্লা-চাঁদপুর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সেচ এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় অবস্থিত পুন:খননকৃত সীনাই খালের শুক্রবার উদ্বোধন করা হয়। খালটি পুনঃখননে হাসি ফুটবে সাত হাজারের বেশি কৃষকের মুখে। 
  সীনাই খাল পুন:খনন উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ সায়েদুল ইসলাম, বিএডিসি চেয়ারম্যান এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।
সভাপতিত্ব করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলম। 
স্বাগত বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা-চাঁদপুর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সেচ এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
 
বিএডিসি’র স্থানীয় কর্মকর্তা ও প্রকল্প দপ্তরের তথ্যমতে, কুমিল্লা-চাঁদপুর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সেচ এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চলতি অর্থ বছরে সীনাই খালটি প্রায় ৩ কোটি  ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১৪.৫০ কিলোমিটার খাল পুন:খনন করা হয়েছে। সীনাই খালটি মূলত ভারতের আগরতলা জেলার আমতলী সীমান্ত হতে শুরু হয়ে কসবা উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের কাজিয়াতলি, সুতারমুরা, রামপুর, গোসাইস্থল, বাড়াই, চন্ডিদ্বার মৌজা হয়ে এবং বিনাউটি ইউনিয়নের ব্রাক্ষণগ্রাম, নেমতাবাদ মৌজা হয়ে মজলিশপুর বিজনা নদীতে মিলিত হয়েছে। এই খালটি একইসাথে সেচ ও নিস্কাশন খাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পাহাড়ি ঢলের সাথে নেমে আসা পলি জমে খালটি ভরাট হয়ে মৃতপ্রায় হয়েছিল। ফলে উজান থেকে নেমে আসা ভারতীয় পানির ঢলে খালটির আশেপাশের এলাকা বছরে ২/৩ দফায় হঠাৎ বন্যায় প্লাবিত হতো। বন্যার পানি তিন  থেকে সাতদিন স্থায়ী হয়ে সীনাই খালের দুই পাড়ের সোনালী ফসল নষ্ট করে দিত। অপরদিকে শুস্ক ও সেচ মৌসুমে খালে পানি না থাকায় সেচের পানির পর্যাপ্ততার অভাবে কৃষকগণ ভূ-পরিস্থ পানি ব্যবহার করে সেচ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারত না। বিএডিসি’র মাধ্যমে খালটি পুন:খননের ফলে খালের দুই পাড়ে ছোট-বড় প্রায় ৯০-৯৫ টি বিভিন্ন ক্ষমতাসম্পন্ন সেচযন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকগণ তাদের জমিতে নিয়মিতভাবে সেচ প্রদান করতে সক্ষম হবে। খালটি পুন:খননের ফলে শুষ্ক মৌসুমে একদিকে যেমন ভূ-পরিস্থ সেচের পানির প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পাবে অপরদিকে বর্ষাকালে খালের দুই পাড়ের আবাদী জমির পানি পুন:খননকৃত খাল হয়ে বিজনা নদীতে পতিত হবে। পাশাপাশি উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কবল থেকে দুই পাড়ের ফসল রক্ষা পাবে। এই সীনাই খাল পুন:খননের ফলে খালের দুই পাড়ের প্রায় ৬২৫০ একর জমি এক/দুই ফসলি জমি হতে তিন ফসলি
 জমিতে পরিণত হবে। পূর্বে যেখানে বছরে ১৫০০০ মেট্টিক টন খাদ্যশস্য উৎপন্ন হতো খাল পুনঃননের ফলে সেখানে প্রায় ৩০০০০ মেট্টিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন সম্ভব হবে।  প্রায় ৭১১০টি  কৃষক পরিবার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপকৃত হবে।
 প্রধান অতিথি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এমপি  বলেন,এই খালটা এই এলাকার মানুষের অনেক সময় দুর্দশার কারণ হতো। উপরে যখন বেশি বর্ষা হতো তখন পানির ঢল নামতো এবং এই এলাকার সব ধান নষ্ট হয়ে যেত। আবার অনেক সময় পানি না পাওয়ার কারণে ফসল করা যেত না। এখন এই খালটা খননের ফলে শুষ্ক মৌসুমেও পানি প্রবাহ থাকবে এবং সেচ ব্যবস্থা করা যাবে। তিনি বলেন,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার  পিতা বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্ন ছিল, সে স্বপ্ন পূরণে তিনি কাজ করছেন।  ফসল ফলানোর জন্য যে সংস্থাগুলো রয়েছে। সে গুলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই ব্যবস্থা করে দিয়ে গিয়েছিলেন। তার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা এই খাল খননের মাধ্যমে কসবার মানুষের উপকার করেছেন। এ বাংলাদেশের মানুষ যাতে খাদ্যে কষ্ট না পায় সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।
 
কৃষি সচিব  মো: সায়েদুল ইসলাম  বলেন, বঙ্গবন্ধুর সারাজীবনের স্বপ্ন ছিল এদেশের কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের অবস্থার উন্নয়ন। তিনি মনে করতেন যদি এ দেশের কৃষির উন্নয়ন করা যায় তাহলেই এদেশের উন্নয়ন করা সম্ভব। সেই কারণে তিনি যখন ক্ষমতায় আসেন তখন তিনি আধুনিক কৃষির সূচনা করেছিলেন। সবুজ বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন।  কৃষিতে এক পঞ্চমাংশ বাজেট দিয়েছিলেন। তিনি তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে যেতে পারেন নাই। সেজন্য তার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কোন আলোচনা ছাড়াই কৃষি প্রকল্প গুলো পাশ করে যান। বঙ্গবন্ধু যেমনটি মনে করতেন কৃষি এবং কৃষকের উন্নতি হলে এদেশের উন্নতি হবে তার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও সেটাই মনে করেন।
বিএডিসি’র চেয়ারম্যান  এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বলেন, কৃষিকাজ করে খেটে খাওয়া লজ্জার বিষয় না বরং গৌরবের। আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য আমরা শিক্ষায় অনেক অনগ্রসর বলে আমরা পেশার দ্বারা মানুষকে পরিচিত করি। এটাই আমাদেরকে পিছিয়ে রেখেছে। বর্তমান সরকার সেচের ক্ষেত্রে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারে গুরুত্ব দিয়েছে। সেচ কাজে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার করলে সেচ খরচ কম হবে এবং ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। ভূপরিস্থ সেচের পানির প্রাপ্যতা বৃদ্ধিতে ভরাট হয়ে যাওয়া খালসমুহ পুন:খননের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

কুমিল্লা (ক্ষুদ্রসেচ) সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বিএডিসি একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের যোগান এবং কৃষি খাতকে আধুনিকায়ন ও অধিক উৎপাদনমুখী করতে বিএডিসি’র ভূমিকা অনস্বীকার্য। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৯
 হতে জুন ২০২৪ পর্যন্ত ৫ বছর মেয়াদে চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ‘কুমিল্লা-চাঁদপুর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সেচ এলাকা উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
ভরাট হয়ে যাওয়া খাল নালা পুন:খননের মাধ্যমে কৃষি জমির জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও ভূ-উপরিস্থ সেচের পানির প্রাপ্যতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, তারই সুযোগ্যকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলার কৃষিখাতকে আধুনিক করতে কাজ করে যাচ্ছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে অনুশাসন রয়েছে দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে সে নির্দেশনায় কাজ করে যাচ্ছে বিএডিসি।