স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার পর বেপাত্তা স্বামী
এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
কোহিনূর খানম নিতু ও মো. জুয়েল মিয়া। একই এলাকার বাসিন্দা এবং বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও দু’জনার মধ্যে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে হন স্বামী-স্ত্রী। মাত্র ছ’মাসের মাথায় যৌতুক না পেয়ে বটি দা দিয়ে কুপিয়ে কোহিনূরকে হত্যা করে বেপাত্তা হন জুয়েল। পুলিশ নিহতের মরদেেহ মর্গে পাঠানোসহ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেন জুয়েলের বাবা-মাসহ পাঁচজনকে। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা এলাকার।
বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) ভোরে নারকীয় এই ঘটনার পর আশুগঞ্জ থানা পুলিশ উপজেলার চরচারতলা গ্রামের আনু সর্দারের বাড়ির পাশের আলগাবাড়ির আবু চান মিয়ার ঘর থেকে গৃহবধূ কোহিনুর খানম নিতুর (৩০) লাশ উদ্ধার করে। নিহত কোহিনুর একই এলাকার আবুল হোসেন মিয়ার মেয়ে। ঘটনার পর থেকেই নিহতের ঘাতক স্বামী মো. জুয়েল মিয়া (৩২) হন বেপাত্তা। পুলিশ হত্যাকাজে ব্যবহৃত বটি দা উদ্ধারসহ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জুয়েলের বাবা আবু চান মিয়া (৬৮), মা রহিমা বেগম (৫৫), বড় ভাইয়ের স্ত্রী তানিয়া বেগম (২৯), ছোটভাই কামরুল ইসলাম (২৮) ও কামরুলের স্ত্রী আর্জিনা বেগমকে (২৪) আটক করেছে।
নিহতের পরিবার, এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রায় ছ’মাস আগে প্রেমের সম্পর্কের জেরে আদালতে গিয়ে বিয়ে করেন কোহিণূর এবং জুয়েল। দু’জনেরই এটি দ্বিতীয় বিয়ে। দু’জনেরই পছন্দের বিয়ে হওয়ায় উভয়ের পরিবার তাদের বিয়ে মেনে নেয়। তবে জুয়েল ইয়াবা সেবন করতেন। এরই মধ্যে জুয়েল একটি ওয়ার্কসপ খুলে ব্যবসা শুরু করেন। ওয়ার্কসপে নতুন করে বিনিয়োগের জন্য দু’মাস আগে কোহিনূরের কাছে দুুই লাখ টাকা যৌতুক দাবী করে জুয়েল। কোহিনূর টাকা দিতে অপারগতা জানালে এ নিয়ে তাদের মধ্যে আর তেমন কোন সমস্যা হয়নি। বুধবার সন্ধ্যায় কোহিনূর পাশেই বাবার বাড়িয়ে গিয়ে নিজ পরিবারের সাথে দেখা করে আসেন। তখনও তাদের কোনো সমস্যার কথা পিত্রালয়ের কাউকে জানাননি কোহিনূর। এরই মধ্যে বুধবার দিবাগত গভীর রাতে জুয়েল বটি দা দিয়ে কোহিনূরকে এলোপাথারি কুপিয়ে হত্যা করে কম্বল দিয়ে লাশ ঢেকে রেখে পালিয়ে যায়। পরে রাতেই পরিবারের লোকজন দেখতে পেয়ে পুলিশকে জানায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে হত্যায় ব্যবহৃত বটি দা ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জুয়েলের পরিবারের পাঁচজনকে আটক করেন। নিহত কোহিনূরের বাবা মো. আবুল হোসেন জানান, বুধবার রাতেও তার সাথে কোহিনূরের দেখা হয়। তখনও সে তাকে কোন সমস্যার কথা জানাননি। তিনি তার মেয়ের হত্যাকারীর বিচার দাবী করেন।
আশুগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শ্রীবাস চন্দ্র বিশ্বাস জানান, ‘হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে রক্তাক্ত মরদেহের পাশ থেকে একটি রক্তমাখা বটি দা উদ্ধার করা হয়। ময়না তদন্তের জন্য লাশ পাঠানো হয়েছে জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে।জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে পরিবারের পাঁচজনকে। ঘাতক স্বামী জুয়েলকে আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে। পরিবারের অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে