স্বাধীনতার ছায়া-প্রশ্ন: আমাদের সিদ্ধান্ত কি আমাদেরই?


“RAW যদি সিদ্ধান্তের ছায়া-নির্ধারক হয়, তবে আমাদের স্বাধীনতা কতটা স্বাধীন?”
মনোয়ার হোসেন রতন ।।
স্বাধীনতা—এ শুধু একটি পতাকার রঙ নয়, এটি একটি জাতির আত্মার ভাষা। একটি জাতির বুক ফাটা যন্ত্রণার প্রতীক, তার অধিকার ছিনিয়ে আনার ঘোষণা। কিন্তু প্রশ্ন যখন ওঠে—“RAW যদি সিদ্ধান্তের ছায়া-নির্ধারক হয়, তবে আমাদের স্বাধীনতা কতটা স্বাধীন?”, তখন রক্তে রাঙানো সেই সবুজ-লাল পতাকাও যেন প্রশ্নের মুখে দাঁড়ায়!
ইতিহাসের ধারায় আমরা কোথায়?
১৯৭১—একটি জাতির পুনর্জন্ম।
রক্তের অক্ষরে লেখা হয়েছিল বাংলাদেশের নাম। ভারতের সমর্থন ছিল, ছিল আন্তর্জাতিক চক্রান্তও। কিন্তু মূল চালিকাশক্তি ছিল বাঙালির অদম্য স্বাধীনচেতা মন। সে স্বাধীনতা ছিল আত্মত্যাগের, প্রতিজ্ঞার, এবং নিজের ভাগ্য নিজে নির্ধারণের ঘোষণাপত্র।
কিন্তু স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরিয়ে এসে আজ, যখন রাজনৈতিক পরিসরে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার ‘ছায়া’ দেখা যায়, তখন কি আমরা সত্যিই নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেদের মতো নিতে পারি?
ছায়া-নির্ভর সিদ্ধান্ত: এক বিপজ্জনক প্রবণতা
বিশ্ব রাজনীতিতে গোয়েন্দা সংস্থার প্রভাব নতুন কিছু নয়। কিন্তু যদি কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি—নির্বাচন, প্রশাসনিক পদবিন্যাস, কৌশলগত চুক্তি—সবকিছুতেই পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে বিদেশি সংস্থার ভূমিকা থাকে, তবে সেটি স্বাধীনতা নয়, বরং এক প্রকার ‘নিয়ন্ত্রিত সার্বভৌমত্ব’।
RAW-এর নাম আজ শুধু ভারতের স্বার্থে নয়, দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক বিন্যাসে এক ছায়া-নির্ধারক শক্তি হিসেবে উচ্চারিত হয়।
বাংলাদেশে নানা সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এর যোগাযোগ, হস্তক্ষেপ, এমনকি সরকার গঠনের সমীকরণেও ভূমিকার অভিযোগ উঠেছে—যা স্বাধীনতা-সচেতন যে কোনো নাগরিকের কাছে শঙ্কার ও লজ্জার।
কাব্যিক প্রশ্ন, কঠিন উত্তর
স্বাধীনতা যদি হয় নিঃশর্ত,
তবে সিদ্ধান্তে কেন ছায়া পড়ে?
স্বাধীনতা যদি হয় গর্ব, তবে রাজনীতিতে কেন পরনির্ভরতা?
এই প্রশ্ন কেবল কবিতার পঙ্ক্তিতে নয়, রাষ্ট্রচিন্তার কেন্দ্রে থাকা উচিত। একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্মিত হয় তার সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতায়—যেখানে কোনো ছায়া নয়, স্বচ্ছতা, সাহস ও স্বকীয়তা জরুরি।
রাষ্ট্র ও নাগরিকের দায়
একটি রাষ্ট্র তার ভবিষ্যতের রূপকার, আর জনগণ সেই ভবিষ্যতের কারিগর। রাষ্ট্র যদি পরনির্ভরতায় অভ্যস্ত হয়, নাগরিকদের উচিত সেই নির্ভরতাকে প্রশ্ন করা।
কিন্তু আজ আমরা প্রশ্ন করতেও ভয় পাই। গণমাধ্যম নীরব, বুদ্ধিজীবীরা দ্বিধান্বিত,আর সামাজিক মিডিয়ার ট্রেন্ড ঢেকে দেয় সত্যের আলো। এই পরিস্থিতিতে ‘স্বাধীনতা’ যেন একটি ব্র্যান্ড, যার ভেতর ফাঁপা গর্জন ছাড়া কিছু নেই।
উপসংহার: নিজের ছায়ায় ফিরে আসা জরুরি
স্বাধীনতা মানে শুধু গান, মিছিল, বা জাতীয় দিবস নয়—এটি এক জীবন্ত চেতনা, যেখানে প্রতিটি সিদ্ধান্ত হবে অন্তরের থেকে, আত্মবিশ্বাসে পূর্ণ।
RAW যদি আমাদের ভবিষ্যতের স্রোত নির্ধারণ করে দেয়, তবে আমাদের পতাকা ওড়ালেও, মানচিত্র আঁকলেও, আমরা পরাধীনই থেকে যাবো। আজ আমাদের প্রয়োজন সাহস
নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেবার,
নিজের ভবিষ্যৎ নিজে গড়ার।
এই সাহসই হবে প্রকৃত স্বাধীনতার প্রমাণ। সেই সাহসেই ফিরবে আমাদের আত্মমর্যাদা, আর ইতিহাসে লেখা হবে এক নতুন অধ্যায়— স্বাধীনতার, সাহসের, এবং সত্যিকার ‘স্বাধীন সিদ্ধান্তের’।