সড়ক সংস্কারে শালবন বিহারে বাড়বে দর্শনার্থী

 

করোনার ধকল কাটিয়ে উঠছে শালবন বৌদ্ধ বিহার। নতুন বছরে ভিড় বাড়ছে কুমিল্লার এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও ময়নামতি জাদুঘরে। বছরের প্রথম দিনে এখানে দর্শনার্থী এসেছিলো পঁচিশ হাজারের বেশি। ছুটির দিন (শুক্র ও শনিবার) গুলোতে এখানে ভিড় করেন দর্শনার্থীরা। অন্যান্য দিন গুলোতে দশ থেকে বারো হাজার দর্শনার্থীর সমাগম হয় ময়নামতি জাদুঘর ও শালবন বিহারে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, কোটবাড়ি মহাসড়ক হতে কালির বাজার রাস্তাটি বেহাল। রাস্তাটি মেরামত হলে দর্শনার্থী সংখ্যা আরো বাড়তো। গেল বছরের অগাস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দর্শনার্থী এসেছে দুই লাখ আট হাজার দুইশ’ জন। এখান থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে একচল্লিশ লাখ চৌষট্টি হাজার টাকা। এদিকে শালবন বিহারকে নান্দনিক করতে ফুলের বাগান বাড়ানো হয়েছে। নানান রকম বাহারী ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা। এনিয়ে গত সপ্তাহে সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকায় একটি লিড নিউজ প্রকাশ করা হয়।

সংবাদে উল্লেখ করা হয়, পরিবার ও সঙ্গীদের নিয়ে পূরাকীর্তির পাশাপাশি ফুল বাগানে ছবি তুলছেন দর্শনার্থীরা। শালবন বিহারের হাঁটার পথ ও চারপাশ ঘিরে লাগানো হয়েছে- গোলাপ, এনকা, গাঁধা, পিটুনিয়া, জিনিয়া, জারবেরা, ডালিয়া, কচমচ, মন্ডমিক্সসহ বাহারী রকমের ফুলের চারা।
ফেনী থেকে শালবন ও জাদুঘর ঘুরতে এসেছেন সাবিহা সামী। বলেন, আমি প্রথম আসলাম এখানে। অনেক পুরনো কিছু দেখা হলো। ফুল গুলো দেখে আরো ভাল লাগছে। তবে শালবন বিহারে বুট-বাদামের ফেরিওয়ালা বাড়ছে। যাদের জন্য দর্শনার্থীরা অনেক বিড়ম্বনার শিকার হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ ফটোগ্রাফারদের উৎপাত বেড়েছে চরমে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ৭ম থেকে ৮ম শতকে শালবন বিহারটি নির্মিত হয়। দেব বংশের চতুর্থ রাজা ‘ভবদেব’ এটি নির্মাণ করেন। পূর্বে এটি ‘রাজার বাড়ি’ নামে পরিচিত ছিল। এটি শালবন বিহার নামে পরিচিত হলেও, এর আসল নাম ‘ভবদেব মহাবিহার’। এটি বোৗদ্ধ মন্দির হিসেবেও পরিচিত। ৭ম থেকে ৮ম শতকের একটি কূপও রয়েছে এখানে। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে এই বিহারটির সর্বশেষ খনন কাজ সম্পাদন করা হয়। এটি খননে বিভিন্ন ধরনের পোড়া মাটির ফলক, ধাতব মুদ্রা, ব্্েরাঞ্জের মূর্তি, নকশা করা ইটসহ নানান মূলাবান সামগ্্রী উদ্ধার হয়। যা পাশের ময়নামতি জাদুঘর ও ঢাকার জাতীয় জাদুঘরে সংরোক্ষিত আছে।

ময়নামতি জাদুঘর ও শালবন বিহার কস্টোডিয়ান মো. হাসিবুর হাসান সুমি বলেন, ‘২০২০-২০২১ অর্থ বছরের তুলনায় ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে দর্শনার্থী বেড়েছে। তবে করোনা পূর্বের বছর গুলোতে দর্শনার্থী আরো বেশী ছিল। নতুন বছরে দর্শনার্থী বাড়ছে। ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালা ও ফটোগ্রাফারদের বিষয়ে আমরা শীগ্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

শালবন বৌদ্ধ বিহার কুমিল্লাসহ দেশের উল্লেখযোগ্য প্রত্ন স্থাপনা। এটি সুরক্ষিত থাকুক তা আমাদের সবার চাওয়া।

আমরা মনে করি, দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালা ও ফটোগ্রাফারদের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এছাড়া কোটবাড়ি মহাসড়ক হতে কালির বাজার রাস্তাটি বেহাল। রাস্তাটি মেরামত হলে দর্শনার্থী সংখ্যা আরো বাড়তো। সড়ক সংস্কারে যথাযথ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা।