হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে লাশ নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ


প্রতিনিধি।।
বিয়ের ১৩ দিনের মাথায় স্ত্রীর সাবেক প্রেমিকের ছুরিকাঘাতে আবু বক্কর প্রকাশ আসিফ(২৬) নামে এক যুবক নিহতের ঘটনায় শনিবার সকালে লাশ নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেছে স্বজন ও এলাকাবাসী। আসিফ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ঘোলপাশা ইউনিয়নের কেন্ডা গ্রামের ফটিক মিয়ার ছেলে। এর আগে গত ৮ নভেম্বর আসিফ সদর দক্ষিণ উপজেলার আবদুল্লাহপুর গ্রামের শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে গেলে দুই ব্যক্তি তাকে ছুরিকাঘাত করে। শুক্রবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার পিজি হাসপাতালে তিনি মারা যান।


নিহত আসিফের পরিবারের দাবি, স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার সুইটির(১৯) সাবেক প্রেমিক রাব্বি প্রকাশ বাপ্পি নামে এক যুবক তার শরীরের বিভিন্নস্থানে ছুরিকাঘাতে আহত করে। শুক্রবার রাতে আসিফের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে গ্রামবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।
নিহত আবু বক্কর প্রকাশ আসিফের ছোট ভাই আরাফাত হোসেন জানান, তার ভাই আবু বক্কর দীর্ঘ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। গত দুই মাস আগে সে ছুটিতে দেশে আসেন। তিনি গত ২৭ অক্টোবর জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার আবদুল্লাহপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার সুইটিকে বিয়ে করেন। গত ৮ নভেম্বর দুপুরে তিনি নববিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে যান। একই দিন সন্ধ্যায় শ্যালক শান্তসহ আসিফ অলির বাজারে ঘুরতে যান। কিছুক্ষণ পর পায়ে হেঁটে তারা আবদুল্লাহপুরে শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। আবদুল্লাহপুর এলাকায় সাদিয়া দারুল উলুম মাদরাসার সামনে পৌঁছালে বাপ্পি ও পারভেজ নামে দুই যুবক আমার ভাইকে উপুর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে সদর দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার পিজি হাসপাতালে নেয়া হলে শুক্রবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। আমরা পরে জানতে পারি, বাপ্পি নামের এক যুবকের সাথে আসিফের স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার সুইটির বিয়ের আগে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এ হত্যাকান্ডের সাথে স্ত্রীও জড়িত রয়েছে।
আরাফাত আরও অভিযোগ করেন, ঘটনাটি ভিন্নখাতে নিতে ভাবী সুমাইয়া আক্তার সুইটি সদর দক্ষিণ থানায় ছুরিকাঘাতের একটি মামলা দায়ের করে। আমি ভাই হত্যার বিচার চাই। এ ঘটনায় আমরা আদালতে ভাবীকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করবো।
এদিকে হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শনিবার সকাল দশটা থেকে এগারটা পর্যন্ত নিহত আসিফের পরিবার ও এলাকাবাসী লাশ নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সৈয়দপুর এলাকায় অবরোধ করে। এ সময় বিক্ষোভ মিছিল করে তারা। এলাকাবাসী দাবি করছে, স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার সুইটির প্ররোচনায় তার সাবেক প্রেমিক ও তার সহযোগি স্বামী আসিফকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যা করেছে। ঘটনাটির ভিন্নখাতে প্রবাহিত এবং নিজেকে রক্ষা করার জন্য সুইটি বাদী হয়ে ২৬ ধারায় একটি মামলা দায়ের করে। এ সময় মহাসড়কের দুই দিকে প্রায় চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। চৌদ্দগ্রাম মডেল থানা ও মিয়াবাজার হাইওয়ে পুলিশ গিয়ে আসামিদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে বিক্ষুব্ধ জনতা অবরোধ তুলে নেয়।
মানববন্ধনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বক্তব্য দেন, নিহত আবু বক্কর আসিফের মা আলেয়া বেগম, নানি রুপিয়া বেগম, স্থানীয় তোফায়েল আহমেদ জুয়েল, এডভোকেট জাহিদুল ইসলাম সুমন, মোজাম্মেল হক অপু, শহীদ মিয়া, আনোয়ার হোসেন, এয়াছিন মিয়া, মফিজ মেম্বার, রফিকুল ইসলাম, রাশেদ মিয়া প্রমুখ। এ সময় এলাকার বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ ও তরুণরা উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগ সম্পর্কে সুমাইয়া আক্তার সুইটির বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ হত্যাকান্ডের সাথে আমার মেয়ে কোনভাবেই জড়িত নয়। বিয়ের আগে আমার মেয়ের সাথে কারো প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। আমার মেয়ে মোবাইলও ব্যবহার করতো না। আমি হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
চৌদ্দগ্রাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মহাসড়ক অবরোধের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছায়। আসিফের মৃত্যুর ঘটনাটি সদর দক্ষিণ থানার। তাঁর স্বজনরা দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে চৌদ্দগ্রামের সৈয়দপুর এলাকায় অবরোধ করে। বিষয়টি পুলিশের মহাপরিদর্শক ও কুমিল্লা পুলিশ সুপার জেনেছে। আমরা দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দিলে বিক্ষুদ্ধ জনতা মহাসড়ক অবরোধ তুলে নেয়।
সদর দক্ষিণ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘ঘটনার পর পরই অভিযুক্তরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। আমরা তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযুক্তদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।’