হনুমানের গদার খোঁজে পুলিশ

 

অফিস রিপোর্ট

কুমিল্লা নগরীর নানুয়ার দিঘির পাড়ের একটি অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখার অভিযোগে ইকবাল হোসেনসহ চারজনের সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। হিন্দু-মুসলিম উভয় ধর্মের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলায় তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে বেলা ১২টার সময় কুমিল্লা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের তোলা হয়। পুলিশ ১০দিনের রিমান্ড আবেদন করে। বিচারক মিথিলা জাহান নিপা তাদের সাতদিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। এদিকে ভিডিওতে ইকবালকে কাঁধে হনুমানের একটি গদা নিয়ে ঘুরতে দেখা যায়। তবে সে গদাটি একটি পুকুরে ফেলে দেয় বলে পুলিশের একটি সূত্র জানায়। তবে কোন পুকুরে ফেলা হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। অপরদিকে কুমিল্ল¬া নগরীর নানুয়ার দিঘির পাড় পূজামণ্ডপের ঘটনা ফেসবুক লাইভে প্রচারকারী ফয়েজ আহমেদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম তানভীর আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিকভাবে ইকবাল ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। অন্যদের সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ মিলেছে। আমরা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যালোচনা করে দেখছি। ওরা আরও কোনও ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত থাকলে সেখানেও তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। যেহেতু এটা স্পর্শকাতর বিষয়, তাই তদন্তে সময় লাগবে এবং এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু এখন বলা যাবে না।
হনুমানের গদাটি কোথায়-জানতে চাইলে তিনি জানান, সেটি ইকবাল পুকরে ফেলে দিয়েছে। তবে কোন পুকুরে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে ইকবালকে কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার বেলা ১২টার সময় কুমিল্লা পুলিশ লাইনসে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে।
পুলিশ থেকে সংগৃহীত একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ১২অক্টোবর রাত ১০টা ৫৮মিনিটে দারোগা বাড়ি মসজিদে প্রবেশ করে ইকবাল হোসেন। এসময় মাজারের অস্থায়ী খাদেম ফয়সাল ও হুমায়ুন মসজিদে ছিল। ১০টা ৫৯মিনিটের সময় বেরিয়ে যায় ইকবাল। রাত ২টা ১২ মিনিটের সময় পুনরায় মসজিদে প্রবেশ করে দানবাক্সের ওপর থেকে কোরআন শরিফ সংগ্রহ করে সে। ২টা ১৪ মিনিটের সময় সে বেরিয়ে যায়। ২টা ২৭মিনিটে এসে আবার কোরআন শরিফটি হাতে নেয়। সামান্য এদিক-সেদিক পায়চারী করে বেরিয়ে পড়ে সে। এরপর পূজামণ্ডপের দিকে অগ্রসর হয়ে জগন্নাথ মন্দিরের দিকে এগিয়ে যায়। তারপর চকবাজারের স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক শাখা থেকে পূবালী ব্যাংকের দিকে অগ্রসর হয়। তখন রাত ২টা ৪২মিনিট। এরপর সে পূবালী ব্যাংক মোড়ে অবস্থান করে। তখন ভিডিওতে আরও দুইজনকে দেখা যায়। ইকবাল পেছনের দিকে এক হাত রেখে (ওই হাতে কোরআন শরিফ ছিল) তাদের সাথে কথা বলে। তারপর এসআইবিএল ব্যাংকের চকবাজার শাখায় অগ্রসর হয় সে। সেখান থেকে চার্টার্ড ব্যাংক। পুনরায় ডিগাম্বরীতলা গুপ্ত জগন্নাথ মন্দির রোডে যাত্রা করে ইকবাল। মন্দিরের তালা ভাঙার চেষ্টা করে সে। কিন্তু ব্যর্থ হয়। ওই সড়ক দিয়ে দুইজন ব্যক্তি অগ্রসর হয়। তারপর ছয়জন, তারপর আরও একজন। এরপর উল্টো দিকে হাঁটা ধরে সে। তারপর জগন্নাথ মন্দির থেকে নানুয়ার দিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপের দিকে অগ্রসর হয়। তারপর দেখা যায় তার হাতে কোরআন শরিফটি নেই। এরপর হনুমানের গদা নিয়ে হাঁটতে থাকে সে। দুই মিনিট পর ৯৯৯-এ কল করা ইকরামকে দেখা যায়। এবার আবার দারোগা বাড়ি মসজিদে প্রবেশ করে ইকবাল। তখন তার হাতে গদাটিও ছিল না। মসজিদে একজনকে ঘুমাতে দেখা যায়। ১৩ অক্টোবর যখন নানুয়ার দিঘির পাড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, সেখানে উস্কানি দিতে দেখা যায় ইকবালকে।