২৯ বছর শেষে গরিবের ডাক্তারের বাড়ি ফেরা

 

 শেষবেলায়  এক যুদ্ধাহত বীর প্রতীককে দেন চিকিৎসা সেবা

তৈয়বুর রহমান সোহেল।।
ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী। কুমিল্লার মানুষ তাকে চিনেন আজিজ ভাই নামে। বুধবার (৩১ জানুয়ারি) কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের পদ থেকে অবসর নেন। চাকরিজীবনের ইতি টেনেছেন গরিবের ডাক্তার খ্যাত চিরকুমার আজিজুর রহমান সিদ্দিকী। চাকরির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। রোগীদের সেবায় নিবেদিত প্রাণ এ চিকিৎসক কর্মকর্তা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় ইতিবাচক পরিবর্তনের চেষ্টা করেছেন। সময়ে সময়ে নিজেও রোগী দেখেছেন। বুধবার চাকরিজীবনের শেষদিনের শেষবেলায় তার কক্ষে প্রবেশের পর এক যুদ্ধাহত বীর প্রতীক মোহাম্মদ শাহ্জাহানকে সেবা দিতে দেখা যায়। পেছনে চোখে পড়ে বিদায়ী সংবর্ধনার ফুল। সেখানে কথা হয় তার সাথে। অতীত স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে ডাক্তার আজিজুর রহমান সিদ্দিকীর চোখের কোণে আনন্দ অশ্রু জমে। সাথে মায়ের আদেশ পালন করতে পারায় স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।


ডাক্তার আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করার পর ১৯৯৫ সালের ১৫ নভেম্বর ১৫ তম বিসিএসের মাধ্যমে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করি। বিসিএস পাস করে পাড়াগাঁয়ে আসায় প্রথমে খারাপ লাগলো। বন্ধুরা অনেক উঁচু জায়গায়, বিদেশে পড়াশোনা করছে। আর আমি পাড়াগাঁয়ে! সেই দুঃখ বেশিদিন থাকেনি। হাসপাতালে শিশু, গরিব মানুষদের দেখি। তাদের সেবা দেবার পর অন্য রকম তৃপ্তি পাই। আম্মা আমাদের গরিবের ডাক্তার বানানোর নিয়ত করেছিলেন। আমাদের ১১ভাই বোনের মধ্যে পাঁচজনকে ডাক্তার বানিয়েছেন আমার বাবা আনোয়ারুল আজিম সিদ্দিকী ও মা খাদিজা বেগম। অন্যরাও প্রকৌশলী এবং উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। কুমিল্লার ডেপুটি সিভিল সার্জন, মেহেরপুরের সিভিল সার্জন ও চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন হই। ২০২৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা মেডিকেলে যোগ দিই। ৯৬জন দালালকে পুলিশে দিই। যদিও পুরোপুরি নির্মূল করতে পারিনি। হাসপাতালকে নতুন করে সাজানো, সার্জারি বিভাগে এন্ডোস্কপি, ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি চালু করি। হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতা, খাবারের মানোন্নয়ন করি। শিশুদের জন্য এনআইসিইউ চালু করি।
তিনি বলেন, আমার একার জন্য বেতনের বাইরে টাকার দরকার নেই। আমি মনে করেছি গরিবের সেবা করা দরকার। হাসপাতালে রোগীরা সিরিয়াল ধরে লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। এটা আমার কাছে খারাপ লাগে। হাসপাতালে ইটিকিটিং চালু হলে ভালো হবে। পাশাপাশি সেবার মান বাড়াতে প্রচুর ম্যান পাওয়ার দরকার। বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এটি। এখানে চাপ বাড়লে রোগীরা মেঝেতে থাকে। হাসপাতালকে ওপরের দিকে সম্প্রসারিত করা গেলে রোগীদের কষ্ট কমবে। শেষবেলায় বলি, আমার মায়ের মতো কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পবিত্র। মানুষকে ভালোবাসা সবচেয়ে বড় আনন্দ। ২৯ বছরের চাকরিজীবন শেষে আমি সেই আনন্দ নিয়ে বাড়ি ফিরছি।