৮ভাইয়ের যৌথ পরিবারের গল্প

৫০জনের রান্না এক পাতিলে
উৎসবে বাড়ি পিকনিক স্পট
মহিউদ্দিন মোল্লা।।
আট ভাই এক বোনের পরিবারের। সম্পত্তি ভাগ হয়নি। সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫০জন। সবার রান্না হয় একই পাতিলে। বড় বোন আর বড় তিন ভাই মারা গেছেন। ৮ভাই গ্র্যাজুয়েশন করা। তাদের ছেলে মেয়ে ও নাতি-নাতনিরা মিলে এখনও যৌথভাবে থাকেন। এই যৌথ পরিবারের গল্প আশ-পাশের গ্রামের মানুষের মুখে মুখে। ঈদে-বিয়েসহ নানা উৎসবে তাদের বাড়িতে আনন্দের হাট বসে। সচেতনদের মতে,এই বাড়িটি এলাকার যৌথ পরিবারের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যৌথ পরিবারটির বসবাস কৃষ্ণপুর মজুমদার বাড়িতে। এটি কুমিল্লা- নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে লাকসাম উপজেলার আজগরা ইউনিয়নে অবস্থিত।

inside post


বাড়ির বাসিন্দারা জানান,এই বাড়ির মুরব্বি আলী আশ্রাফ মজুমদার। তারা দুই ভাই ছিলেন। আরেক ভাই আলী আক্কাস মজুমদার। তারা একসাথে গ্রামের পুরাতন মজুমদার বাড়িতে বসবাস করতেন। আলী আশ্রাফ ও আলী আক্কাস মারা গেলেও তাদের পরিবার যৌথপরিবার রয়ে গেছেন। ১৯৮০সালের দিকে নতুন বাড়িতে আসেন আলী আশ্রাফ। আলী আশ্রাফ মজুমদার ডিলারশিপের ব্যবসা করতেন। তার স্ত্রী গৃহিণী আয়েশা খাতুন। তার এক মেয়ে আট ছেলে। মেয়ে খুরশিদা বেগমকে পাশের বাড়িতে বিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি এখন মৃত। তার পরিবারও ভাইদের পরিবারের সাথে মিলেমিশে থাকতেন। ভাইদের কেউ সরকারি কেউ বেসরকারি চাকরিজীবী। কেউ গ্রামে কেউ শহরে থাকেন। ভাইদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। তারা হলেন,প্রবাসী হুমায়ুন কবির,সাবেক পরিসংখ্যান কর্মকর্তা জাকির আহমেদ মজুমদার,মনির আহমেদ মজুমদার একটি কোম্পনিতে চাকরি করতেন। ৪র্থজন মঞ্জুর আহমেদ মজুমদার, সম্প্রতি অবসরে যাওয়া ব্যাংক কর্মকর্তা, তিনি এখন পরিবারের মুরব্বি। ৫ম জন সফিকুল ইসলাম মজুমদার বাহার। তিনি গ্রামের মাছের খামার ফসলের জমি দেখাশোনা করেন। ৬ষ্ঠ অহিদুর রহমান মজুমদার শিক্ষক। ৭ম সামছুদ্দিন মজুমদার, তিনি সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা। ৮ম কামরুজ্জামান মজুমদার,তিনি শিক্ষক।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লা- নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে লাকসাম উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রাম। মহাসড়কের বাস স্টপেজ ব্রিজ থেকে মূল গ্রামে পূর্ব দিকে একটি সড়ক প্রবেশ করেছে। ঢুকতে সড়কের বাম পাশে আলী আশ্রাফ মজুমদার বাড়ি। বাড়ির সামনের সড়কে সারি সারি তাল গাছ। সামনে ধানের বিস্তীর্ণ মাঠ। বাড়ির সামনে সুন্দর গেট দেয়া। বাড়ির দুইপাশে একাধিক পুকুর। গাছে ঠাসা বাড়ি যেন ছোট্ট বন। ঈদ উপলক্ষে বাড়িতে এসেছেন শহরে থাকা সদস্যরা। বাড়িতে এখন উৎসবের আমেজ। রাতে দিনে উঠানে বসে ক্রিকেট খেলার আসর। নারী নেমে পড়েন চেয়ার খেলায়। ছেলেরা হৈ-হুল্লোড় করে গোসল করতে নামেন দল বেঁধে।
মঞ্জুর আহমেদ মজুমদার ও সামছুদ্দিন মজুমদার বলেন,আমাদের বাবা চাইতেন সবাই যেন একসাথে থাকি। আমাদের তিন বড় ভাই সেটা চেষ্টা করেছেন। তাদের অবর্তমানে এখন আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ভাবীরা ও ভাতিজারাও চান যেন আমরা একসাথে থাকি। একসাথে থাকলে কষ্টের দিনগুলো তেমন গায়ে লাগে না।
সাবেক পরিসংখ্যান কর্মকর্তা জাকির আহমেদ মজুমদারের স্ত্রী সাফিয়া চৌধুরী। তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তিনি বলেন.এই বাড়িতে এসেছি ৪০ বছর আগে। অল্প বয়সে স্বামী মারা গেছেন। এই পরিবারের লোকজন তা বুঝতে দেননি। আমরা একসাথে থাকতে আনন্দ পাই। আজীবন একসাথে থাকতে চাই।
প্রয়াত প্রবাসী হুমায়ুন কবির মজুমদারের ছেলে সাইফুল ইসলাম তাপস ও সাবেক পরিসংখ্যান কর্মকর্তা জাকির আহমেদ মজুমদারের ছেলে তৌফিক আহমেদ মজুমদার বলেন, সম্পত্তি ভাগ হয়নি। রান্না এখনও একসাথে হয়। বাড়িতে ঘরের ভাগ নেই, যে যেখানে পারে শুয়ে পড়েন। বাড়ি মাঝে মাঝে আনন্দের পিকনিক স্পট হয়ে উঠে। এদিকে পরিবারের একজনের সংকটে আরেকজনের পাশে এসে দাঁড়ান।

আরো পড়ুন