কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নতুন যাত্রা
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতকে। তিনি টানা দুইবারের মেয়র টেবিলঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুকে ৩৪৩ ভোটে পরাজিত করেছেন। এ সিটি ভোটে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন সে¦চ্ছাসেবক দলের সাবেক নেতা ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার। ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন মনিরুল হক সাক্কু। তিনি আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বলেছেন, অজ্ঞাত ফোন পেয়ে রিটার্নিং অফিসার ফলাফল পাল্টে দিয়েছেন। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে ফলাফল নিয়ে শেষ মুহূর্তে নাটকীয়তা হয়েছে। একপর্যায়ে রাত ৯টার দিকে ারফাত সাক্কুর দুই পক্ষের সমর্থকরাই নিজেদের জয়ী বলে দাবি করেন। এ সময় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এতে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ফলাফল ঘোষণা সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। বাড়ানো হয় নিরাপত্তা। মিছিলে মিছিলে উত্তেজনা দেখা দেয়। এতে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে সাক্কুর ওপর হামলার চেষ্টা করেন রিফাতের সমর্থকরা। মিডিয়াকর্মীরা মঞ্চে গিয়ে অবস্থান নেন। অশান্ত পরিস্থিতির মধ্যে রাত সাড়ে ৯টার দিকে রিফাতকে বিজয়ী ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার শাহেদুন্নবী চৌধুরী। বিজয় আর উত্তেজনার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৬০ শতাংশের কমবেশি ভোট পড়েছে। কয়েকটি কেন্দ্রে নির্ধারিত সময়ের পর পর্যন্তও ভোট চলছিল। কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা থেকে মনিটরিং করেন নির্বাচন কমিশনাররা। এ নগরীর ২৭ ওয়ার্ডে মোট ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। নারী ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ ও পুরুষ ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার দুজন। ১০৮ জন সাধারণ ও ৩৮ জন সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন। ১০৫ কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন ভোটাররা। বুথ ছিল ৬৪০টি।
রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতর সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে মোট ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ ভোটার ছিলেন। এর মধ্যে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬৪টি ভোট পড়ে। তবে বাতিল হয় ৩১৯ ভোট। ভোট পড়েছে ৫৮.৭৪ শতাংশ। নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১০৮ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
সংবাদে বলা হয়,বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হওয়ার পর এক সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় আরফানুল হক রিফাত বলেন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নগরীর উন্নয়ন করব। আমার জীবন দিয়ে চেষ্টা করব। কুমিল্লার মানুষের কাছে যে কমিটমেন্ট করেছি তা রাখার চেষ্টা করব। কুমিল্লার মানুষের কষ্ট লাঘব করার চেষ্টা করব। এ সময় তিনি সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। তিনি বলেন, শিগগিরই সিটি করপোরেশনের গত ১০ বছরের দুর্নীতি উদঘাটন করা হবে।
কুমিল্লার সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেছেন, জনতার ভোটে নৌকা জয়ী হয়েছে। ফল কে মানল কে মানল না তাতে কিছু যায়-আসে না। ফল যা হয়েছে তা-ই সঠিক। কুমিল্লার মানুষ এমন ফলের অপেক্ষায় ছিলেন। এই ফলে জনতার জয় হয়েছে।
আমরা মনে করি,পক্ষে বিপক্ষে অনেক কথা থাকবে। সবার উপরের কথা হচ্ছে কুমিল্লা নগরীর মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন। সাবেক মেয়র বিভিন্ন সময় বলেছেন,তিনি বিরোধী দলের মেয়র তাই তেমন সাপোর্ট পাননি। এবার নতুন মেয়র সরকারি দলের। তিনি নগরীর যানজট, জলাবদ্ধতা, অপরিকল্পিত নগরায়ন,নিম্নমানের কাজ নিয়ে কাজ করবেন। নতুন মেয়রের প্রতিশ্রুতি মতে,তিনি নগর ভবনকে দলীয় কার্যালয় বানাবেন না। আমরাও চাই সকল দল মতের মানুষের নিকটজন হয়ে উঠবেন নতুন মেয়র। নতুন যাত্রা নগরবাসীর জন্য সুখকর হোক।