পরিচয় মিললেও ‘বেওয়ারিশ’ হিসেবেই সোমার দাফন!

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
inside post
‘এ সংসারে কেউ নয় আপনজনা’। জনপ্রিয় এই লোক সঙ্গীতটি কঠিনতর সত্য হলো গৃহবধূ সোমা আক্তারের বেলায়। ট্রেনের কাঁটায় মারা যাবার পর ‘অজ্ঞাতনামা’ হিসেবে মর্গে তিন দিন পরে থাকে সোমার মরদেহ। খবর পেয়ে স্বামী-ভাসুর-শাশুড়ি এসে মরদেহ শনাক্তের পরও সোমা থেকে গেলো বেওয়ারিশ! শেষতক একটি মানবিক সংগঠনের বদান্যতায় বেওয়ারিশ কবরস্থানেই চির শায়িত হলেন অভাগিনী সোমা। এমনটি ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরে।
রোববার (২৭ জুলাই) বিকেলে মানবিক সংগঠন ‘বাতিঘর’র সদস্যরা জেলা শহরের পূর্বমেড্ডাস্থ তিতাসপাড়ার বেওয়ারিশ কবরস্থানে রাজধানী ঢাকা’র গৃহবধূ সোমা আক্তারের দাফন সম্পন্ন করেন। তিনি ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার আগলা ইউনিয়নের খানখাটি গ্রামের সোহাগ মিয়ার স্ত্রী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ জুলাই বৃহস্পতিবার ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথের  ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের জারুইলতলা নামক স্থানে গ্রামে ‘বিজয় এক্সপ্রেস’ ট্রেনের কাঁটায় পড়ে মৃত্যুবরণ করেন সোমা আক্তার নামের ওই গৃহবধূ। ঘটনার পর রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) মরদেহ উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। টানা তিন দিন ‘অজ্ঞাতনামা’ হিসেবেই মর্গে পরেছিলো মরদেহটি। পরে খবর পেয়ে তার স্বামী সোহাগ মিয়া, ভাসুর হাসান মিয়া এবং শাশুড়ি হাসেনা বেগমসহ স্বজনরা হাসপাতালে এসে মরদেহটি সোহাগের স্ত্রী সোমা আক্তারের বলে শনাক্ত করেন। তার স্বামী সোহাগ মিয়া ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার আগলা ইউনিয়নের খানখাটি গ্রামের বাসিন্দা। পরিচয় পাবার পরও ‘অর্থনৈতিক সামর্থ্য’ না থাকায় মরদেহটি হাসপাতাল মর্গে ফেলে চলে যান সোমার স্বজনরা। যাবার আগে তারা হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের জানান, মরদেহ পরিবহন ও দাফন-কাফনের ব্যয় মেটানোর সামর্থ্য তাদের নেই। তাই বাধ্য হয়েই মরদেহটি ফেলেই তারা চলে যেতে বাধ্য হন। অবশেষে মানবিক সংগঠন ‘বাতিঘর’র সদস্যরা রোববার বিকেলে ধর্মীয় আচার পালনের মাধ্যমেই জেলা শহরের তিতাসপাড়াস্থ ‘বেওয়ারিশ গোরস্থানে’ সোমা আক্তারের মরদেহের দাফন কার্যক্রম সম্পন্ন করেন।
‘বাতিঘর’ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আজহার উদ্দিন জানান, পরিচয় পাবার পরও মরদেহ পরিবহন ও দাফন-কাফনের ব্যয় মেটানোর সামর্থ্য না থাকায় স্বজনরা মরদেহ ফেলে চলে যাবার পর মানবিকতার দায় থেকে আমরা জানাযা শেষে বেওয়ারিশ হিসেবেই মরদেহটি মেড্ডা শ্মশানঘাট এলাকায় দাফন কার্য সম্পন্ন করি।
আরো পড়ুন