৪১বছর ইমামতি শেষে বাড়ি ফিরলেন ফুলের গাড়িতে

 

inside post

মহিউদ্দিন মোল্লা।।
খয়রাবাদ। কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। গ্রামে সাজ সাজ রব। টানানো হয়েছে সামিয়ানা। সামিয়ানার নিচে কয়েক শত মানুষ। ঝুলছে বেলুন। পাশের রাখা হয়েছে ফুল দিয়ে সাজানো গাড়ি। গাড়িতে উঠছেন একজন। গলায় তার ফুলের মালা। দুই পাশে দাঁড়িয়ে তরুণরা ফুল ছিটিয়ে দিচ্ছেন। এতো আনন্দ আয়োজনের মাঝেও সবার চোখে অশ্রু ছলছল করছে। প্রথম দেখায় যে কারো মনে হবে বিয়ে বাড়ি। তবে এটি ৪১ বছর ইমামতি শেষে এক ইমামকে বিদায় দেয়ার দৃশ্য।


শুক্রবার (০২ আগস্ট) বিকেলে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার খয়রাবাদ বায়তুল নুর জামে মসজিদে ইমামতি করা ইমাম মাওলানা আবুল হোসেনকে এভাবেই বিদায় জানান তার ছাত্রসহ এলাকাবাসী। মসজিদ প্রাঙ্গণে সংবর্ধনার আয়োজন করে গ্রামের তরুণদের যুবশক্তি ফাউন্ডেশন নামের একটি সামাজিক সংগঠন। এতে সভাপতিত্ব করেন মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি ফরিদ উদ্দিন। বক্তব্য রাখেন স্থানীয় খাড়াতাইয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মিজানুর রহমান, গ্রামের বাসিন্দা মহিবুর রহমান শাহীন, এনামুল হক মামুন ও মো. শাহ আলম প্রমুখ। এসময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, মসজিদের ইমামসহ বিভিন্ন শ্রেণির পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।


গ্রামের বাসিন্দা মহিবুর রহমান শাহীন বলেন, তিনি বিভিন্ন মসজিদে ৪১বছর ইমামতি করেছেন। সর্বশেষ খয়রাবাদ মসজিদে ২৫ বছর ইমামতি করেন। তিনি একই গ্রামের বাসিন্দা। কারো সাথে তার কখনও তর্ক হয়নি। সবাই সম্মান করতেন। কারণ এই গ্রামের যারা এখন যুবক ও তরুণ প্রায় সবাই তার ছাত্র। তার কাছে ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করেছেন।
মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি ফরিদ উদ্দিন জানান, তিনি সঠিকভাবে তার দায়িত্ব পালন করেছেন। আমাদের সন্তানদের মক্তবে ধর্মীয় শিক্ষা দিয়েছেন। তাকে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংবর্ধনা দেয়া হয়। মুসল্লিরা বিভিন্ন উপহার দেন। ফুল দিয়ে সাজানো গাড়ি যোগে মোটরসাইকেল বহর নিয়ে তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। আমরা তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।


মাওলানা আবুল হোসেন বলেন, টানা ৪১ বছর ইমামতি করেছি। সর্বশেষ এই মসজিদে ২৫বছর ছিলাম। এটি টিনের চালার মসজিদ ছিলো। সেখান থেকে আজ দুই তোলা মসজিদ। মসজিদ ও তার অজুখানার পরিষ্কারে খাদেমের(দেখভাল করা) দিকে তাকিয়ে থাকিনি, সামনে যা পড়েছে তাই করেছি। কোন কাজকে ছোট মনে করিনি। আমার ছাত্ররা বিদায় বেলায় যে সম্মান দিয়েছে এর জন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাই। পাশাপাশি মসজিদ কমিটি, গ্রামবাসী ও ছাত্রদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানাই।

আরো পড়ুন